উত্তরবঙ্গ, ৯ অক্টোবর: উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে সাধারণ মানুষের জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত। প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসে বহু এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একদিকে রাস্তা ও রেল যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত, অন্যদিকে বাগডোগরা থেকে কলকাতা পর্যন্ত উড়ানে যাত্রা করাও হয়ে উঠেছে কার্যত স্বপ্নের মতো। কারণ, এই দুর্যোগের মধ্যেও উড়ান ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার থেকে শুরু করে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত — এমনই অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ।
বুধবার কলকাতায় ফিরেই বিমানবন্দরের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা দুর্যোগ হয়ে যাওয়ার পরে বলতে পারেন, কেন বাগডোগরা থেকে কলকাতা ফ্লাইটের ভাড়া ১৮ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে? যাঁরা ফ্লাইট পাচ্ছেন না, দিল্লি হয়ে ঘুরে যাচ্ছেন, তাঁদের ভাড়া পড়ছে প্রায় ৪২–৪৫ হাজার টাকা। এটা কল্পনা করতে পারেন?” তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, এটা শুধুই ব্যবসায়িক বিষয় নয় — এটা বৈষম্যমূলক আচরণ, এবং কেন্দ্রের তরফে মানুষের দুর্ভোগকে উপেক্ষা করার এক নিদর্শন। তার ভাষায়, “সব সময়ে বিমাতৃসুলভ আচরণ! দুর্যোগের সময় তো কেন্দ্রের দায়িত্ব আরও বেশি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনও হস্তক্ষেপ নেই।”
যাত্রীদের অভিযোগ, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উড়ান ভাড়া দ্বিগুণ, কখনও তিন গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। দুর্যোগের সময় পরিবার নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রয়োজন থাকলেও অনেকেই সেই খরচ বহন করতে পারছেন না। পর্যটক থেকে সাধারণ যাত্রী — সকলেই পড়েছেন চরম সমস্যায়।
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, একটা গণতান্ত্রিক দেশে, একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে, এভাবে “ডায়নামিক প্রাইসিং” কীভাবে চলে? এটা কি নিছক বাজারের নিয়ম, না কি সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল?
উড়ানের উপর এত চাপের অন্যতম কারণ, উত্তরবঙ্গের অনেক অংশে রেল ও সড়ক যোগাযোগও কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দার্জিলিং — একাধিক জেলা এখন বন্যার কবলে। বহু জায়গায় রাস্তা ভেঙে গিয়েছে, রেললাইনে জল থইথই করছে। ট্রেন বাতিল হয়েছে অনেকগুলো। ফলে, উড়ানই একমাত্র বিকল্প, আর সেই সুযোগেই বেড়ে গিয়েছে ভাড়া। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক চাইলে সহজেই ভাড়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারত। বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে বিপর্যস্ত মানুষদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু তা না করে, কেন্দ্র মুখ ফিরিয়ে রয়েছে — এমনটাই অভিযোগ রাজ্য সরকারের।