২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী না করার পর থেকেই জন বার্লা দলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একধরনের দূরত্ব অনুভব করতে শুরু করেন। একসময় উত্তরবঙ্গ বিভাজনের দাবি তোলার পর থেকেই জন বার্লা রাজ্য বিজেপির সঙ্গে আর্থিক, রাজনৈতিক সম্পর্কের মাঝে একধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করেছিলেন। সেই সময় দিলীপ ঘোষসহ বিজেপির অন্যান্য নেতা এই দাবিকে তাঁর ব্যক্তিগত মতামত বলে অভিহিত করেছিলেন। এরপর থেকে বার্লার দলের প্রতি ক্ষোভ বেড়েছে এবং তিনি একাধিকবার বলেছিলেন, “বিজেপি তাঁকে ব্যবহার করে, কিন্তু দল তার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেনি।”
এখন, যখন ২০২৪ সালে বিজেপির সঙ্গে তার সম্পর্কের তিক্ততা তুঙ্গে, তখন জন বার্লা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য সুভাষিণী চা বাগানে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার, এই অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানান। সাংবাদিকদের কাছে বিজেপির নেতা হিসেবে নিজের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি উত্তর দেন, “দেখুন না ভবিষ্যতে কী হয়…” যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন নন এবং কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত রয়েছেন।
এটা কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়। জন বার্লা যে সময় উত্তরবঙ্গ বিভাজন নিয়ে সরব হয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, “এই দাবি একশো বছরের পুরনো। জনতার দাবি, দমিয়ে রাখা যাবে না।” যদিও রাজ্য বিজেপি নেতারা এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে পরে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপির দলে অন্দরমহলের বিরোধের কারণে তিনি নিজের প্রস্তাবিত রেলের হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তাঁর দাবি ছিল, তিনি জননেতা হতে চান, রাজনীতিক নয়।
এখন যখন জন বার্লা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাইছেন এবং বলেছেন যে, “মমতা রাজ্যের অভিভাবক, তিনি মুখ্যমন্ত্রী, এবং উন্নয়ন করতে চাইলে তাঁর সঙ্গে দেখা করা প্রয়োজন,” তখন এটি অনেকের মনে প্রশ্ন উত্থাপন করছে যে, আগামী ২০২৬ সালের নির্বাচনে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হতে পারেন কিনা। যদি সেরকম কিছু হয়, তবে তা বিজেপির জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যেখানে বিজেপির শাসন দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “যদি জন বার্লা জনগণের জন্য কাজ করতে চান, তিনি করবেন। তবে আমরা পরবর্তী সময়ে দেখব, তিনি জনগণের জন্য কী কাজ করেছেন এবং তার হিসাব তুলে ধরব।” এই মন্তব্যটি সম্ভবত জন বার্লার প্রতি বিজেপির অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়ার ইঙ্গিত।
সত্যিই, যদি জন বার্লা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন, তবে তা বিজেপির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক ধাক্কা হতে পারে, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের নির্বাচনী অঙ্গনে যেখানে দলটির ভিত বেশ নড়বড়ে। তবে রাজনীতির এই অঙ্গনে কখন কী হবে তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না, আর সেজন্য এই পরিস্থিতি নজরদারির মধ্যে থাকবে।