২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট (US Elections) নির্বাচনে, দিন কয়েক আগেই ডেমোক্রেটরা সতর্ক করে দিয়ে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, “জিল স্টেইনকে সমর্থন করা আসলে ট্রাম্পকে সমর্থন করার সমান।” এই বিজ্ঞাপনটির মূল বার্তা ছিল, এক ভোটে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইনকে (US Elections সমর্থন করলে তা শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত (US Elections) হওয়ার পক্ষে সহায়ক হতে পারে।
গত অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখে, ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) তরফ থেকে প্রায় ৫০০,০০০ ডলার বরাদ্দ করা হয় সুইং স্টেটগুলোতে একটি শেষ মুহূর্তের প্রচারণা চালানোর জন্য। এই প্রচারণার মূল লক্ষ্য ছিল, তৃতীয় পক্ষের প্রার্থীদের—বিশেষ করে স্টেইন এবং স্বাধীন প্রার্থী কর্নেল ওয়েস্টকে—ভোট দিতে আগ্রহী নির্বাচনী (US Elections) ভোটারদের সতর্ক করা।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (US Elections) শেষ মুহূর্তে একটি সংকটাপন্ন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায়, ডেমোক্রেটদের কাছে মনে হয়েছে যে, তৃতীয় পক্ষের প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের চাহিদা বাড়লে তা ডেমোক্রেটদের প্রার্থী, কমলা হ্যারিসের জন্য বিপদ হতে পারে। ডেমোক্র্যাটদের এই উদ্বেগের ভিত্তিতে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও জানিয়ে দিয়েছেন যে, জিল স্টেইনের নির্বাচনে v অংশগ্রহণ তাদের পক্ষে সহায়ক হতে পারে। তিনি ২৮ অক্টোবর পেনসিলভানিয়াতে এক সমাবেশে বলেছিলেন, “জিল স্টেইন? আমি তাকে খুব পছন্দ করি। জানো কেন? কারণ তিনি ডেমোক্র্যাটদের ১০০ শতাংশ ভোট নিয়ে নিচ্ছেন।”
স্টেইন, যিনি ২০১২ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে গ্রীন পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনেও(US Elections) অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দেন ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর। তার রাজনৈতিক দর্শন প্রগতিশীল, এবং তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, পরিবেশ এবং মানবাধিকার বিষয়ে একটি শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তার অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে গাজা অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশগুলোকে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা, এবং জাতিসংঘে মার্কিন ভেটো ক্ষমতা বিলুপ্ত করার পক্ষে অবস্থান। তার পররাষ্ট্রনীতি কর্মসূচিতে (US Elections) আরও একটি প্রধান বিষয় হচ্ছে, তিনি ন্যাটোকে বিলুপ্ত করে একটি “আধুনিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক নিরাপত্তা কাঠামো” গড়তে চান।
এতদূর সবকিছুতে, স্টেইন একটি আলাদা পথে চলেছেন, যা অনেক প্রগতিশীল ও পরিবেশবান্ধব দলের কাছে জনপ্রিয়। কিন্তু তার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে ইউরোপে গ্রীন পার্টির রাজনীতিবিদরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। তারা ১ নভেম্বর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা স্টেইনকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, “মার্কিন নির্বাচন অনেকটাই সঙ্কটময় হয়ে উঠেছে। যদি জিল স্টেইন মনোনয়ন নিয়ে থাকেন, তা ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পক্ষে সমস্যা সৃষ্টি করবে এবং শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে।”
এখানে একটা বড় প্রশ্ন হলো—স্টেইনের এই তৃতীয় পক্ষের প্রার্থী হওয়ার প্রভাব আসলে কী হতে পারে? যখন নির্বাচনে দুটি প্রধান দল—ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান—একেবারে সমান ভোট পেতে পারে, তখন তৃতীয় পক্ষের প্রার্থী যেকোনো সময় ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে পারে। এটি বিশেষ করে মার্কিন সুইং স্টেটগুলোতে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যেখানে ভোটের ব্যবধান একেবারে সংকীর্ণ হতে পারে। স্টেইন যদি যথেষ্ট সংখ্যক ডেমোক্রেট ভোট গ্রহণ করেন, তবে সেই ভোটগুলো কমলা হ্যারিসের পক্ষে গিয়ে নির্বাচনের ফলাফল বদলে দিতে পারে।
রিপাবলিকানরা এই ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে বেশ উৎসাহিত। তারা জানে, স্টেইন যদি ডেমোক্রেটদের ভোট টানেন, তা ট্রাম্পের পক্ষে আরো সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করবে। ডেমোক্রেটদের শিবিরে এখন দুইরকমের চাপ তৈরি হয়েছে। একদিকে, তারা চায় না কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রার্থী তাদের ভোটভিত্তি কমিয়ে দিক। অন্যদিকে, তারা জানে যে, স্টেইন বা কর্নেল ওয়েস্টের মতো প্রার্থীরা প্রগতিশীল ভোটারদের জন্য একটি বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়। এই পরিস্থিতি ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি দ্বিধা তৈরি করেছে।
তবে, গ্রীন পার্টির অন্যান্য নেতারা এ বিষয়ে একমত নন। তারা স্টেইনের নির্বাচনে থাকার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন, কারণ তারা মনে করেন, মার্কিন রাজনীতিতে তৃতীয় পক্ষের শক্তি দরকার, এবং সেই শক্তি জনগণের জন্য একটি শক্তিশালী বিকল্প তৈরি করতে পারে। তবে, স্টেইনের প্রার্থিতা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নির্ভর করছে মূলত নির্বাচনী পরিস্থিতির উপর এবং নির্বাচনে কেমন শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে সে সম্পর্কে ভোটারদের মনোভাবের উপর।
অবশ্য, আন্তর্জাতিক গ্রীন দলগুলোর চাপের মাঝেও, স্টেইন তার অবস্থানে অটল রয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে শুধুমাত্র দুইটি রাজনৈতিক দলই শাসন করবে না। আমরা চাই একটি বহুমুখী রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে বিভিন্ন জনগণের কণ্ঠ শোনা যাবে।”
এখন দেখার বিষয় হলো, শেষ পর্যন্ত জিল স্টেইনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলে কতটা প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে। যদি ডেমোক্র্যাটদের ভোট শূন্য না হয়ে যায়, তবে মার্কিন নির্বাচন ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় লিখিত হতে পারে।