বেহালায় ভারতীয় জনতা পার্টির (bjp president) অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী কোন্দল চরমে । সোমবার একটি দলীয় বৈঠকের মধ্যে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, একজন বিজেপি নেতার মুখে কালি মাখিয়ে দেওয়া হয় তার সঙ্গে মারধর করা হয় বিজেপির মন্ডল সভাপতিকেও। শারীরিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন অনুপম হাজরাও। এই ঘটনায় দলের মধ্যে চলমান আদি-নব্য দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে, যা দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি সংগঠনকে জেরবার করে তুলেছে। বৈঠক চলাকালীন চেয়ার ছোড়াছুড়ি এবং ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার বেহালাতে জেলা বিজেপির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলছিল, যেখানে আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি ও দলের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠক শুরু হতেই পুরোনো কর্মীদের সঙ্গে নতুন যোগ দেওয়া নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ তীব্র আকার নেয়। একটি সূত্র জানায়, দলের একজন প্রবীণ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তিনি নতুন নেতাদের যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছেন না এবং দলীয় কার্যক্রমে একক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এই অভিযোগের জেরে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে একদল কর্মী ওই নেতার মুখে কালি মাখিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বৈঠকস্থলে চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
আরো দেখুন আপনার আছে বিরল ৫০, ১০০, ২০০ নোট? এর মূল্য ধারণার চেয়েও বেশি হতে পারে!
এই ঘটনার পর দক্ষিণ কলকাতার বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা জানান, “এটা দলের জন্য লজ্জার বিষয়। আমরা যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন এই ধরনের গোষ্ঠী কোন্দল আমাদের শক্তিকে দুর্বল করছে।” তিনি আরও বলেন, “আদি কর্মীরা মনে করছেন নতুনরা তাদের অবদানকে অগ্রাহ্য করছে, আর নতুন নেতারা বলছেন পুরোনোরা পরিবর্তনের পথে বাধা। এই দ্বন্দ্ব দলের মূলে গিয়ে আঘাত করেছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যে নেতার মুখে কালি মাখানো হয়েছে, তিনি দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁর নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে দলের সংগঠন শক্তিশালী হয়েছে, কিন্তু সম্প্রতি দলে যোগ দেওয়া কিছু নেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এই ঘটনার পর তিনি সাংবাদিকদের সামনে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি এই অপমানে গভীরভাবে আঘাত পেয়েছেন এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বিষয়টি তুলতে পারেন।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বও চাপে পড়েছে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আমরা এই ঘটনার তদন্ত করছি। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা আমাদের প্রথম কাজ। যারা এই কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপির বিরুদ্ধে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “বিজেপির ভিতরের গণ্ডগোল এখন সবার সামনে। যারা রাজ্যে শান্তি ভঙ্গের অভিযোগ করে, তারা নিজেদের দলই সামলাতে পারছে না।”
দক্ষিণ কলকাতার বিজেপির এই গোষ্ঠী কোন্দল নতুন নয়। গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সভা-সমিতিতে আদি ও নব্য কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনার খবর পাওয়া যাচ্ছিল। বিশেষ করে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর দলে নতুন মুখ যোগ দেওয়ার পর থেকে এই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। স্থানীয় এক বিজেপি কর্মী জানান, “নতুনরা দ্রুত প্রভাব বাড়াতে চায়, আর পুরোনোরা তাদের পুরোনো ক্ষমতা হারাতে চায় না। এর মধ্যে সাধারণ কর্মীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে।”
এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একাধিক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপির এই অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে লড়তে লড়তে দল শেষ হয়ে যাবে।” অন্য একজন লিখেছেন, “এটা বিজেপির সংগঠনের দুর্বলতা প্রকাশ করে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে হলে আগে ঘর গোছাতে হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা বিজেপির জন্য একটি বড় ধাক্কা। একজন বিশ্লেষক বলেন, “দক্ষিণ কলকাতা বিজেপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে গোষ্ঠী কোন্দল দলের ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। আসন্ন নির্বাচনের আগে এই পরিস্থিতি সামাল না দিতে পারলে তৃণমূলের জন্য সুবিধা হবে।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের এখন দ্রুত হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন।”
ঘটনার তদন্তে নেমেছে দক্ষিণ কলকাতার স্থানীয় থানা পুলিশও। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কারা এই ঘটনার জন্য দায়ী।” তবে বিজেপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, দল এই বিষয়টি নিজেদের মধ্যে সমাধান করতে চায় এবং পুলিশি হস্তক্ষেপ এড়াতে চাইছে। এই ঘটনা দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশলের উপর প্রশ্ন তুলেছে। দলের কর্মীরা এখন অপেক্ষায় আছেন শীর্ষ নেতৃত্বের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য। তবে একথা স্পষ্ট, এই গোষ্ঠী কোন্দল দলের ঐক্য ও শক্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।