ধর্মীয় বিদ্বেষে শিশু নিগ্রহ? দিল্লির ঘটনায় সারা দেশে নিন্দার ঝড়

দিন কয়েক আগে দিল্লিতে ঘটে যাওয়া এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার ভিডিও সামনে আসে, যেখানে অভিযোগ ওঠে—এক বাঙালি শ্রমিকের স্ত্রী ও সন্তানের উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে…

child abuse at hindmotor

দিন কয়েক আগে দিল্লিতে ঘটে যাওয়া এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার ভিডিও সামনে আসে, যেখানে অভিযোগ ওঠে—এক বাঙালি শ্রমিকের স্ত্রী ও সন্তানের উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে শুধুমাত্র ‘জয় শ্রীরাম’ বলার জন্য চাপ সৃষ্টি করার কারণে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর পোস্ট ঘিরে বিষয়টি জাতীয় স্তরে চর্চার কেন্দ্রে চলে আসে।

Advertisements

তবে এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে দিল্লি পুলিশ। তারা এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ভিডিওটিতে যেভাবে ঘটনাটি তুলে ধরা হয়েছে, বাস্তব তা নয়। শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর। এই প্রেক্ষাপটে বুধবার সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এবং কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন নির্যাতিতা মহিলা নিজে ও তাঁর পরিবার।

   

মহিলার বয়ানেই উঠে এল ভয়ঙ্কর ঘটনার বিবরণ:

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থেকে নির্যাতিতা মহিলা বলেন, “ওরা আমার ছেলেকে মাটিতে ফেলে মারছিল। আমি বাঁচাতে গেলে আমাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। আমাদের বলা হয় ‘জয় শ্রীরাম’ বলো, নাহলে ফল খারাপ হবে। আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বারবার হাতজোড় করে বলছিলাম, আমরা গরিব মানুষ, আমাদের ছেড়ে দিন।” তাঁর কথায় স্পষ্ট, একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় স্লোগান বলাতে চাপ দেওয়া হয়েছিল, না বলায় শুরু হয় অত্যাচার।

সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল নেতৃত্বের মন্তব্য:

ফিরহাদ হাকিম বলেন, “এই ঘটনা মানবতার প্রতি চরম আঘাত। দেশের রাজধানীতে একজন শ্রমিকের স্ত্রী ও শিশুকে নিগ্রহ করা হচ্ছে এবং তারপর তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। দিল্লি পুলিশ রাজনীতির চাপে কাজ করছে, সেটাই বারবার প্রমাণিত।”

কুণাল ঘোষ আরও বলেন, “যাঁরা বলছেন ঘটনা সাজানো, তাঁদের আমরা চ্যালেঞ্জ করছি—এই মহিলার মুখোমুখি বসে কথা বলুন। দেখুন ওর চোখে কতটা ভয় আর যন্ত্রণা। এটা শুধু ধর্মের নামে নয়, জাতিগত বিদ্বেষও। কারণ ওরা বাঙালি বলেই ওদের সঙ্গে এই আচরণ।”

পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে:

নির্যাতিতা জানিয়েছেন, ঘটনার পর তাঁদের এলাকার বাসিন্দারা নানা হুমকি দিচ্ছেন। বাড়িতে পুলিশি নজরদারিও শুরু হয়েছে। এখন তাঁরা দিল্লি ছেড়ে কলকাতায় আত্মীয়র বাড়িতে রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই যারা আমাদের উপর এত নির্দয়ভাবে অত্যাচার করেছে, তাদের শাস্তি হোক। দিল্লিতে আর ফিরতে চাই না, ভয় করে।”

ঘটনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:

এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক মহলেও শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে জাতীয় স্তরে। বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগ তুলে তারা বলছে—এই ঘটনা সেই চিত্রকেই আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে।