কসবায় DI অফিসের সামনে তুলকালাম, চলল লাঠি

Chaos in Kasba: Stick Fights Erupt in Front of the DI Office কলকাতার কসবা (kasba) এলাকায় আজ, ৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার দুপুরে ডিস্ট্রিক্ট ইন্সপেক্টর (ডিআই)…

Kasba Teacher Protest

Chaos in Kasba: Stick Fights Erupt in Front of the DI Office

কলকাতার কসবা (kasba) এলাকায় আজ, ৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার দুপুরে ডিস্ট্রিক্ট ইন্সপেক্টর (ডিআই) অফিসের সামনে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে শতাধিক চাকরিপ্রার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এই ঘটনায় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষারত শিক্ষক প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং অফিস থেকে কোনো সদুত্তর মিলছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে (kasba)

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে কসবার (kasba) ডিআই অফিসের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে বিলম্ব ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠছিল। আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা এবং চাকরিপ্রার্থীরা অফিসের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। তারা দাবি করেন, ২০২৩ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরও অনেক যোগ্য প্রার্থীকে এখনও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার, যেখানে লেখা ছিল—“নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করো”, “স্বচ্ছতা চাই, চাকরি চাই” এবং “ডিআই অফিস জবাব দাও”।

এক বিক্ষোভকারী, যিনি নিজেকে ২০২৩ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, বলেন, “আমরা দু’বছর ধরে অপেক্ষা করছি। পরীক্ষায় পাশ করেছি, সাক্ষাৎকারও দিয়েছি, কিন্তু এখনও কোনো খবর নেই। শুনছি, টাকার বিনিময়ে অনেকে চাকরি পেয়ে গেছে। এটা কী ধরনের ন্যায়বিচার?” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, ডিআই অফিসে বারবার এসেও কোনো স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি।

পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়

দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। বিক্ষোভকারীরা অফিসের গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। কিছু উত্তেজিত প্রার্থী গেটে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কসবা থানার পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী ডাকা হয়। দুপুর ১২:৪০ নাগাদ পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে। এতে আরও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “হঠাৎ করেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। কয়েকজনকে মাটিতে ফেলে টেনে নিয়ে যেতে দেখলাম। রাস্তায় গাড়ি চলাচলও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা এই এলাকায় বিরল। কসবা সাধারণত শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত, তবে আজকের ঘটনায় অনেকেই উদ্বিগ্ন।

ডিআই অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন

ডিআই অফিসের (kasba) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখছি। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে, কিন্তু কিছু আইনি জটিলতার কারণে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা এই বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি।” তবে, বিক্ষোভকারীরা এই বক্তব্য মানতে নারাজ। তাদের দাবি, এই ধরনের বিলম্বের পেছনে দুর্নীতি এবং প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ রয়েছে।

Advertisements

‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই’ কে লক্ষ্য করে বিস্ফোরক খড়গে

পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন

পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে, তবে কাউকে মারধর করা হয়নি। আমাদের লক্ষ্য শান্তি বজায় রাখা। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।” তিনি আরও বলেন, বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তবে তারা ঘটনার বিস্তারিত খতিয়ে দেখবেন।

রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন

এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন ফেলেছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে। এক বিরোধী নেতা বলেন, “শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি এখন সবাই জানে। সরকার যদি সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে।” তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা পাল্টা জবাবে বলেন, “এটা বিরোধীদের উসকানি। আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত করার চেষ্টা করছি।”

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করলেও, কেউ কেউ মনে করছেন, এ ধরনের উত্তেজনা সমস্যার সমাধান করবে না। একজন নেটিজেন লিখেছেন, “চাকরির দাবি ন্যায্য, কিন্তু রাস্তায় তুলকালাম করে কী লাভ? সরকারের উচিত দ্রুত সমাধান করা।”

কসবার এই ঘটনা শিক্ষক নিয়োগে দীর্ঘদিনের সমস্যাকে আরও একবার সামনে এনেছে। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চলবে। তবে, পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতায় এখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে। এই ঘটনার পরবর্তী গতিপ্রকৃতি কী হবে, তা নির্ভর করছে সরকার ও প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর।