বিধানসভায় বাঁদরামি বিজেপির, পরিসংখ্যানে বিরোধীদের ধুয়ে দিলেন দেবাংশু

কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) বিপুল ভোটে জয়লাভ করতেই, কলকাতার বিধানসভা ভবনে তৈরি হয় উত্তেজক পরিস্থিতি। একদিকে যখন গণনাকেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী জয়ের দিকে…

কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) বিপুল ভোটে জয়লাভ করতেই, কলকাতার বিধানসভা ভবনে তৈরি হয় উত্তেজক পরিস্থিতি। একদিকে যখন গণনাকেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী জয়ের দিকে এগোচ্ছেন, অন্যদিকে তখন বিধানসভা কক্ষে বিজেপি (BJP) বিধায়কদের সঙ্গে শুরু হয় হাতাহাতি। এই ঘটনায় আহত হন কয়েকজন মার্শালও। পরিস্থিতি সামাল দিতে অধ্যক্ষ চার বিজেপি বিধায়ককে চলতি অধিবেশন থেকে সাসপেন্ড করেন।

Advertisements

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র রাজনৈতিক তর্জা শুরু হয়েছে রাজ্যে। বিশেষ করে তৃণমূলের মিডিয়া সেলের ইনচার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debanshu Bhattacharya) সরাসরি আক্রমণ করেছেন বিজেপিকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ করে তিনি লেখেন, “উপনির্বাচনের বিপুল পরাজয় থেকে সাধারণ মানুষ ও সংবাদমাধ্যমের নজর ঘোরাতে বিধানসভায় বাঁদরামি শুরু করেছে বিজেপি!”

   

তিনি আরও লেখেন, “যারা একসাথে ১৫০ বিরোধী সাংসদকে বাইরে বার করে দিয়ে সংসদে ভোট করায়, তাদের মুখে এখন গণতন্ত্রের বাণী শুনতে হবে?”

বিজেপির হিন্দু ভোটের দাবিও নস্যাৎ করলেন দেবাংশু

বিজেপি বারবার দাবি করে এসেছে, রাজ্যে হিন্দু ভোট তাদের দিকেই রয়েছে। তবে দেবাংশু এই দাবিকেও পরিসংখ্যান দিয়ে ভেঙে দেন। তিনি লেখেন, “২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে কালীগঞ্জে প্রথম রাউন্ডে AITC পেয়েছিল ৪৩.৮%, CPI পেয়েছিল ২৬.৭% আর BJP পেয়েছিল ২৬.৪%। এবার ২০২৫-এর উপনির্বাচনে সেই একই এলাকায় প্রথম রাউন্ডের ফলাফল:

AITC – ৪৫৪৫ (৬০%)

INC – ১৮৩০ (২৪.১%)

BJP – ১১১২ (১৪.৬%)”

এই তথ্য তুলে ধরে দেবাংশুর বক্তব্য, বাম-কংগ্রেস মোটামুটি তাদের ভোট ধরে রাখলেও বিজেপির হিন্দু ভোট উল্লেখযোগ্যভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে স্থানান্তরিত হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদ’ বাংলার শান্তিপ্রিয় সনাতনী হিন্দুরা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেও জানান দেবাংশু। তাঁর মন্তব্য, “বাঙালিরা বাঁদরদের হয়তো কলা খাওয়ায়, কিন্তু ভোট দেয় না।”

বিধানসভায় নজিরবিহীন কাণ্ড, আহত মার্শালরা

কালীগঞ্জে হারের জেরে বিধানসভায় বিজেপি বিধায়করা যে ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, তা বিরল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে নিরাপত্তারক্ষীরা বিধানসভা কক্ষ খালি করতে বাধ্য হন। এরপর বিধানসভার অধ্যক্ষ চার বিজেপি বিধায়ককে চলতি অধিবেশন থেকে বরখাস্ত করেন।

রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট: গণতন্ত্র বনাম বিশৃঙ্খলা

এই ঘটনার পর তৃণমূলের বার্তা স্পষ্ট— রাজ্যজুড়ে উন্নয়নের পথে মানুষ আস্থা রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, আর বিজেপি শুধু বিশৃঙ্খলার রাজনীতি করছে। দেবাংশুর বার্তায় তাই শুধু পরিসংখ্যান নয়, রাজনৈতিক অবস্থানও সুস্পষ্ট।

কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের ফল তৃণমূলের জন্য প্রত্যাশিত হলেও, তার প্রভাব পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে অনেক গভীরে। ফলাফল সামনে আসতেই বিজেপির মুখে পড়েছে অস্বস্তি, আর সেই অস্বস্তিই বিধানসভায় রূপ নিচ্ছে বিশৃঙ্খলায়—এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য।