রাস্তার নামে জলাশয়, নেই বিদ্যুৎ তথাকথিত উন্নয়নের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলল গেরুয়া শিবির

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারের তথাকথিত ‘উন্নয়নের মডেল’ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে গেরুয়া শিবির (BJP)। এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম এখনও…

BJP slams trinamool

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সরকারের তথাকথিত ‘উন্নয়নের মডেল’ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে গেরুয়া শিবির (BJP)। এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রাম এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত, এবং রাজ্য সড়কগুলো বর্ষার জলে নদীর মতো জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

রাস্তাঘাটের নামে শুধু জলাশয় আর জলাশয়, যেখানে স্থানীয় মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিকে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের ‘প্রকৃত মুখ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দুর্দশার প্রতিফলন।

   

চন্দ্রকোণা, একটি প্রধানত গ্রামীণ এলাকা, দীর্ঘদিন ধরে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে ভুগছে। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম, যেমন কিশোরপুর, বড়জোরা, এবং দক্ষিণপুর, এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। এই গ্রামগুলোর বাসিন্দারা রাতে মোমবাতি বা কেরোসিন ল্যাম্পের আলোয় জীবনযাপন করছেন।

বিদ্যুৎহীন এই পরিস্থিতি শুধু তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে তাই নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপেও বড় প্রভাব ফেলেছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা, রামপ্রসাদ মন্ডল, বলেন, “আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, রাস্তা নেই। তৃণমূল সরকারের উন্নয়ন শুধু কাগজে-কলমে, আমাদের কাছে তা পৌঁছায়নি।”

রাজ্য সড়কগুলোর অবস্থা আরও শোচনীয়। চন্দ্রকোণার (BJP) প্রধান সড়কগুলো, যেমন চন্দ্রকোণা-ঘাটাল রোড এবং চন্দ্রকোণা-খড়্গপুর রোড, বর্ষার জলে প্লাবিত হয়ে নদীর মতো রূপ নিয়েছে। এই রাস্তাগুলোর বেশিরভাগ জায়গায় পিচ উঠে গেছে, এবং গর্তে ভরা রাস্তায় জল জমে থাকায় যানবাহন চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই জলমগ্ন রাস্তায় মোটরবাইক, সাইকেল এবং এমনকি পায়ে হেঁটে চলাচল করা জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার সমান। গত সপ্তাহে চন্দ্রকোণার কাছে একটি জলমগ্ন রাস্তায় মোটরবাইক দুর্ঘটনায় একজন যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন, যা এই সমস্যার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।

বিজেপি (BJP) নেতা এবং রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল সরকারকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “চন্দ্রকোণার এই দুর্দশা তৃণমূলের তথাকথিত উন্নয়নের প্রকৃত চিত্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের জন্য কিছুই করেনি। বিদ্যুৎ নেই, রাস্তা নেই, মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকারের তহবিল ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি এবং অপচয়ের কারণে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বিজেপির (BJP) আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলেন, “চন্দ্রকোণায় রাস্তা নয়, নদী বয়ে চলেছে। গ্রামগুলো অন্ধকারে ডুবে আছে। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের মডেল।” তিনি এই পরিস্থিতিকে রাজ্যের অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, তৃণমূলের শাসনকালে গ্রামীণ বাংলার উন্নয়ন সম্পূর্ণ অবহেলিত হয়েছে।

Advertisements

তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “বিজেপি মিথ্যা প্রচার চালিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। চন্দ্রকোণায় উন্নয়নের কাজ চলছে, এবং বর্ষার কারণে কিছু অসুবিধা হচ্ছে, যা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।”

তিনি আরও দাবি করেন, তৃণমূল সরকার গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছে, যা বিজেপি (BJP) উপেক্ষা করছে। তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, “চন্দ্রকোণায় রাস্তা সংস্কারের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। বিজেপি শুধু সমালোচনা করে, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য কোনো তহবিল দেওয়া হয় না।”

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চন্দ্রকোণার এই সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলছে, এবং তৃণমূল সরকারের আমলে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। গ্রামের বাসিন্দা শ্যামলী মাইতি বলেন, “আমাদের বাচ্চারা অন্ধকারে পড়াশোনা করে। বর্ষায় রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে প্রাণ হাতে করে চলতে হয়। সরকার কি আমাদের ভোট ছাড়া আর কিছু দেখে না?” এই ধরনের ক্ষোভ স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

চন্দ্রকোণার সমস্যাগুলো পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অঞ্চলের বৃহত্তর সমস্যার প্রতিফলন। রাজ্যের অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ, রাস্তা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক সুবিধার অভাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, যেমন প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা বা সৌভাগ্য প্রকল্প, এই অঞ্চলে কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ। বিজেপি দাবি করেছে, রাজ্য সরকার এই প্রকল্পগুলোর তহবিলের সঠিক ব্যবহার করছে না।

ভারতের টেস্টে নতুন অধ্যায়, তিন সেঞ্চুরি সত্ত্বেও দুটি অবাঞ্ছিত রেকর্ড!

এই ঘটনা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিজেপি (BJP) চন্দ্রকোণার এই দুর্দশাকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যখন তৃণমূল এই অভিযোগকে বিজেপির ‘মিথ্যা প্রচার’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য এই রাজনৈতিক তরজার মধ্যে তাদের দৈনন্দিন সমস্যার সমাধান চান।

চন্দ্রকোণার পরিস্থিতি শুধু একটি এলাকার সমস্যা নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ উন্নয়নের বৃহত্তর চ্যালেঞ্জের প্রতীক। সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান কমাতে না পারলে, এই ধরনের অসন্তোষ আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।