মুসলিম ও বাম ভোটারদের নিয়ে সুর বদল! কী বার্তা দিলেন নয়া রাজ্য সভাপতি?

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে “জয় শ্রীরাম”-এর স্লোগানে ভর করে তৃণমূল কংগ্রেসকে হঠাতে ঝাঁপিয়েছিল বিজেপি। হিন্দু ভোট একত্রিত করার চেষ্টা ছিল স্পষ্ট। তবে সেই প্রচেষ্টা আশানুরূপ…

Bengal BJP New Strategy

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে “জয় শ্রীরাম”-এর স্লোগানে ভর করে তৃণমূল কংগ্রেসকে হঠাতে ঝাঁপিয়েছিল বিজেপি। হিন্দু ভোট একত্রিত করার চেষ্টা ছিল স্পষ্ট। তবে সেই প্রচেষ্টা আশানুরূপ ফল দেয়নি-মাত্র ৭৭টি আসন জিততে পেরেছিল বিজেপি। এখন, ২০২৬ সালের নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে, রাজ্য বিজেপির রণকৌশলে বদল এসেছে। নতুন সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে দল নিচ্ছে এক ভিন্ন পথ- এবার লক্ষ্য সংখ্যালঘু ও বাম মনোভাবাপন্ন ভোটারদের।

ভিন্ন সুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি

রাজ্য বিজেপির নবনিযুক্ত সভাপতি, আরএসএস ঘনিষ্ঠ ও রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য, নিজের প্রথম ভাষণেই স্পষ্ট করে দেন- বাংলায় বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে কাজ করবেন তিনি। তিনি বলেন, “ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে ভাগ করার সচেতন চেষ্টা চলছে। সংখ্যালঘু সমাজকে বুঝতে হবে, বিজেপি তাদের বিরুদ্ধে নয়।” তিনি আরও বলেন, “যারা মুসলিম ছেলেদের হাতে পাথর তুলে দেয়, আমরা তাদের বিরুদ্ধে। আমরা চাই, সেই পাথরের জায়গায় তাদের হাতে কলম তুলে দিতে।”

   

এছাড়াও, ‘জাতীয়তাবাদী মুসলিম’দের বিজেপির পাশে এসে কাজ করার আহ্বান জানান শমীক। এমন বক্তব্য দলীয় প্রচারের চেনা ধারা থেকে অনেকটাই আলাদা, যেখানে এতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসকে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলত বিজেপি।

বামপন্থীদের দিকেও নজর Bengal BJP New Strategy

শুধু সংখ্যালঘু নয়, শমীক তাঁর ভাষণে বাম রাজনীতিকদের দিকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশভাগের সময় পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করেছিলেন জনসংঘ নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং সেই সময়ে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বাম নেতা জ্যোতি বসু। এমন মন্তব্য বিজেপির প্রচলিত রাজনীতির পরিধি পেরিয়ে বামমনস্ক ভোটারদের প্রতিও এক ইঙ্গিত বহন করে।

‘জিরো লস’ কৌশল?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমিতাভ তিওয়ারির মতে, “২০২১ সালে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করে বিজেপি মাত্র ২৬% আসনে জয় পায়। এবার তারা নতুন পথ নিচ্ছে এটি এক ধরনের ‘জিরো লস স্ট্র্যাটেজি’।”

এক সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজ্যের ভোটারদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখন বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা। ধর্মীয় মেরুকরণ পঞ্চম স্থানে। অর্থাৎ, পুরনো কৌশল আর আগের মতো কার্যকর নয়।

Advertisements

বাংলার মুসলিম বনাম বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী?

শমীক ভট্টাচার্যের “জাতীয়তাবাদী মুসলিম”দের পাশে টানার কৌশল সম্ভবত এক নতুন বিভাজনরেখা আঁকার প্রচেষ্টা—বাংলার নিজস্ব মুসলিম ও অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে। বিজেপি ১০ জুলাই একটি পোস্টে লিখেছে, “যেভাবে মাছ জলে না থাকলে বাঁচে না, তেমনই মমতা অবৈধ বাংলাদেশি মুসলিম ছাড়া বাঁচতে পারেন না।”

কালিয়াগঞ্জ উপনির্বাচনের বার্তা

২৩ জুন ঘোষিত কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফল বিজেপির জন্য ছিল এক বড় সতর্কবার্তা। ৪৮% সংখ্যালঘু ভোটার অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে তৃণমূলের আলিফা আহমেদ বিপুল ভোটে জয়ী হন। বিজেপির ভোট শতাংশ ২০২১ সালের ৩১% থেকে কমে দাঁড়ায় ২৮.২%-এ।

এতে স্পষ্ট, শুধু সংখ্যালঘু ভোট নয়, হিন্দু ভোট ধরে রাখাও বিজেপির জন্য চ্যালেঞ্জ। তাই ভিন্ন পথে হেঁটে, সমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে দল এখন চেষ্টা করছে সমস্ত বিরোধী ভোট একত্র করতে সংখ্যালঘু, বাম ও ভদ্রলোক সমাজকে টার্গেট করে।

বাংলার রাজনীতিতে পরিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট। শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বিজেপি এক নতুন পথের সন্ধান করছে-ধর্ম নয়, উন্নয়নের রাজনীতি। তৃণমূল বিরোধিতার নামে এবার আর একপাক্ষিক মেরুকরণ নয়, বরং একত্রিত বিরোধী ভোটারদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বরের দিকে ঝুঁকছে গেরুয়া শিবির। এই নতুন রণকৌশল কতটা কার্যকর হয়, তা ঠিক করবে ২০২৬ সালের ভোটাররাই।