তৃণমূল কংগ্রেসে সাংগঠনিক দিক থেকে গতি ফেরাতে ফের মাঠে নামছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek banerjee) । সূত্রের খবর, মঙ্গলবার থেকে আবারও শুরু হচ্ছে তাঁর জেলা-ওয়াড়ি সাংগঠনিক বৈঠক। একাধিক বৈঠকের মধ্যে প্রথমেই তমলুক সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে ডাকা হয়েছে কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে। তবে ওইদিন আর কোনও জেলা নিয়ে বৈঠক হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
অগস্টের শুরু থেকেই অভিষেক (Abhishek banerjee) দফায় দফায় জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ—প্রায় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে তিনি ডাকছেন। এর আগে প্রথম দফায় কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের নেতৃত্বকে নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন। তার পর মালদা ও জলপাইগুড়ি সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে বসেন। প্রতিটি বৈঠকই গড়ে উঠেছে অন্তত ২–৩ ঘণ্টা ধরে, যাতে স্থানীয় সমস্যার পাশাপাশি সাংগঠনিক দিকও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
এই বৈঠকগুলির উদ্দেশ্য মূলত আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে আরও মজবুত করা। প্রতিটি জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ, স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়, গোষ্ঠী কোন্দল কমানো এবং ভোটারদের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেওয়া—এসবই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও অভিষেকের সঙ্গে এই বৈঠকগুলিতে উপস্থিত থেকে জেলা নেতৃত্বকে দিকনির্দেশ দিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গের একাধিক বৈঠকের পর অভিষেক দিল্লি গিয়েছিলেন ইন্ডিয়া ব্লকের বৈঠকে যোগ দিতে। রাজধানী থেকে ফেরার পর তিনি বহরমপুর ও উত্তর দিনাজপুর সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে আবারও ব্যস্ত সূচির কারণে দক্ষিণ দিনাজপুর ও জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার বৈঠক স্থগিত রাখতে হয়। এবার ফের সেই ধারা শুরু হচ্ছে তমলুক থেকে।
তমলুক সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে জেলার প্রবীণ নেতা তথা মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, বিপ্লব রায়চৌধুরী, জেলা সভাপতি সুজিত রায়, নবনিযুক্ত চেয়ারপার্সন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, পাঁশকুড়ার নেতা আনিসুর রহমান-সহ বিধায়কদের একাংশকে ডাকা হয়েছে। শাখা সংগঠনের নেতৃত্বকেও সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এই বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল রয়েছে একাধিক কারণে। বিশেষ করে আনিসুর রহমানের উপস্থিতি নিয়ে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক তৃণমূল নেতার খুনের ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়েছিল। গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি। গত জানুয়ারি মাসে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান, তবে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রবেশের অনুমতি পাননি। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে তমলুক সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে ডাকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। দলের অভ্যন্তরে আনিসুরের ভূমিকা এবং তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে।
জেলা সভাপতি সুজিত রায় জানিয়েছেন, “এই বৈঠকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের রণনীতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হবে।” তাঁর কথাতেই স্পষ্ট, কেবল সাংগঠনিক তৎপরতা নয়, নির্বাচনী পরিকল্পনার দিকেও নজর দিচ্ছেন অভিষেক। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব দীর্ঘদিনের। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামের লড়াই থেকে শুরু করে জেলা-জুড়ে বিজেপির সাংগঠনিক জোর স্পষ্ট হয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তৃণমূল নিজেদের ঘর গুছিয়ে নিতে চাইছে। তাই তমলুক সাংগঠনিক জেলার বৈঠক বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
একইসঙ্গে এও লক্ষণীয় যে, তমলুক সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে ডাকা হলেও কাঁথি সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে এবার ডাকা হয়নি। স্থানীয় নেতাদের কথায়, “পূর্ব মেদিনীপুরের শুধু তমলুক সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে ১৯ তারিখ ডাকা হয়েছে। কাঁথিকে ডাকা হয়নি।” রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এর পিছনেও কৌশল রয়েছে। শুভেন্দু পরিবারের প্রভাবিত কাঁথি অঞ্চলকে এড়িয়ে গিয়ে তমলুকে জোর দেওয়াই এখন তৃণমূলের মূল লক্ষ্য।
সব মিলিয়ে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek banerjee) ফের শুরু হওয়া সাংগঠনিক বৈঠক ঘিরে তৃণমূলের ভেতরে উত্সাহ ও কৌতূহল দুই-ই রয়েছে। আগামী দিনে পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে বিজেপি-তৃণমূল সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে যে সংগঠন দাঁড়াবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এই বৈঠক তারই এক প্রাথমিক প্রস্তুতি।