শহিদদের উত্তরসূরিদের কাঁধে হাত রেখে একুশের মঞ্চে মমতা

২১ জুলাই, ধর্মতলা — একুশের শহিদ দিবস ঘিরে রাজ্য রাজনীতির আবেগ তুঙ্গে। প্রতিবছরের মতো এবারও ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।…

শহিদদের উত্তরসূরিদের কাঁধে হাত রেখে একুশের মঞ্চে মমতা

২১ জুলাই, ধর্মতলা — একুশের শহিদ দিবস ঘিরে রাজ্য রাজনীতির আবেগ তুঙ্গে। প্রতিবছরের মতো এবারও ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শহিদ দিবস উপলক্ষে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ তৃণমূল সমর্থক জড়ো হয়েছেন রাজপথে। আর এই মহাসমাবেশের মূল আকর্ষণ, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ।

সোমবার দুপুরে সভামঞ্চে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব — অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মদন মিত্র, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সৌগত রায় সহ একাধিক নেতা। নেত্রী মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা ধর্মতলা চত্বর “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ” স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।

   

তৃণমূলের শহিদ দিবস শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সমাবেশ নয়, এটি দলটির আত্মপরিচয়ের সঙ্গে জড়িত। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই পুলিশি গুলিতে নিহত ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীকে স্মরণ করে প্রতিবছর এই দিন পালন করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যুব কংগ্রেসের নেত্রী ছিলেন। সেই দিনের স্মৃতি আজও তাঁর রাজনীতির চালিকাশক্তি।

সভামঞ্চে উঠে মমতা প্রথমে শহিদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিরোধিতা, উন্নয়ন প্রকল্পের সাফল্য এবং আগামী লোকসভা ভোটের রূপরেখা তুলে ধরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দলীয় মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে, মমতা আজ লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে বড় কোনো রাজনৈতিক বার্তা দিতে পারেন।

তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য ধর্মতলায় সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। অনেকেই এসেছেন উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, জঙ্গলমহল, সুন্দরবন বা সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে। ট্রেন, বাস, ট্রাক, এমনকি পদযাত্রা করেও তাঁরা এসেছেন মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে। মাথায় তৃণমূলের পতাকা বাঁধা, গলায় নেত্রীর ছবি ঝোলানো, হাতে ‘দিদি তোমার পাশে আছি’ লেখা ব্যানার — প্রতিটি মুখে দেখা যাচ্ছে মমতার জন্য অগাধ ভালোবাসা ও প্রত্যাশা।

Advertisements

তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর মুখে আজ আমরা শুনব ভবিষ্যতের লড়াইয়ের দিশা। দিদি যা বলবেন, সেটাই আমাদের পথ।” কেউ বলছেন, “বাংলার মানুষ যেভাবে দিদির সঙ্গে রয়েছেন, তা আজ শহিদ মঞ্চে আরও একবার স্পষ্ট হবে।”

এদিকে মঞ্চ থেকে আগেই বক্তব্য রেখেছেন একাধিক রাজ্যস্তরের ও জেলা স্তরের নেতা-নেত্রীরা। তাঁদের ভাষণে উঠে এসেছে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, রাজ্যে কেন্দ্রের ফান্ড বন্ধের প্রসঙ্গ এবং মোদী সরকারের ‘জনবিরোধী’ নীতির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ।

তবে সবকিছুর পরে এখন তৃণমূল শিবিরের চোখ মুখ্যমন্ত্রীর দিকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলবেন, কী বার্তা দেবেন ২০২৬-এর বিধানসভা ও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে — সেটাই এখন রাজ্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর প্রতিটি বাক্য ঘিরেই তৈরি হবে আগামী দিনের তৃণমূলের রণকৌশল।

শহিদ দিবসের আবেগ, রাজনৈতিক উত্তাপ আর নেত্রী মমতার উপস্থিতিতে ধর্মতলা আজ ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের অপেক্ষায়।