Manik Sarkar: ‘বোমা পড়ল পিঠের পাশে, আমি ছুটলাম…’ মানিক সরকারকে খুনের চেষ্টা হয়েছিল

ত্রিপুরা টানা কুড়ি বছরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। তিনি সংসদীয় রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছেন। নিজে থেকেই সংসদীয় রাজনীতি শেষ করেছেন দেশের সব থেকে সৎ-গরিব মুখ্যমন্ত্রী তকমাধারী থাকা মানিক সরকার। এ যেন ভীষ্মের 'ইচ্ছা মৃত্যু' ! একটানা ২০ বছর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর বিরোধী দলনেতা হয়ে সংসদীয় রাজনীতি ছেড়ে দিলেন তিনি। CPIM শীর্ষ নেতার কিছু অকথিত ঘটনা Kolkata 24x7 প্রকাশ করছে।

190
Manik Sarkar

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: সেদিন খুন হয়ে যেতেন। তবে অল্পের জন্য বেঁচে গেছিলেন। এ সেই দিনের কথা যখন মানিক সরকার (Manik Sarkar) নিতান্তই এক ছাত্র নেতা। তবে বিশেষ পরিচিত। তিনি তখন বাম ছাত্র আন্দোলন করছেন। সেই সময় তাঁর উপরেই হামলা হয়েছিল। একেবারে বোমা নিয়ে হামলা। প্রতিপক্ষ সংগঠনের বিষ নজর ছিল আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম কলেজের তরুন নেতা মানিক সরকারের উপর।

বন্দুকের নলকে রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস বলে চিহ্নিত করে ‘সত্তরের দশক মুক্তির দশক’ বলা নকশালপন্থীদের টার্গেট ছিলেন আগরতলার বাম ছাত্র নেতা মানিক সরকার। কী ঘটেছিল? যাই ঘটেছিল তাকে আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না।

প্রাণঘাতী হামলার বিবরণ যেমনটা লিখেছেন মানিক সরকার…”প্রিন্সিপাল রুম এবং ক্যান্টিনে যাওয়ার পথের মুখে দেখলাম নকশাল সমর্থক কয়েকটি ছেলে, কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো। আমার দিকে তেড়ে আসছে। বুঝতে পারলাম এই মুহূর্তে আমি তাদের আক্রমণের লক্ষ্য। তাই ক্যান্টিনের দিকে পা না বাড়িয়ে কলেজের ফুলবাগানটি বাঁ পাশে রেখে যে রাস্তা কলেজ থেকে বের হয়ে গেছে সেই রাস্তা ধরে ডান দিকে ২ নং কলেজ হোস্টেলের দিকে যাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে হাঁটতে গিয়ে পেছনদিক থেকে আমি আক্রান্ত হয়ে গেলাম। আমার পিঠে নকশালপন্থী ছেলেদের বোমা এসে লাগে। বোমাটা আমার পিঠেই ফাটে। এগোতে গিয়ে দেখলাম, আরো একটি বোমা আমার পায়ের পাশ দিয়ে আমাকে অতিক্রম করে গড়িয়ে যাচ্ছে। সেটি ফাটেনি। তখন হোস্টেলের পথে না গিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমি ছুটতে থাকি। আমি বুঝতে পারছিলাম, আক্রমণকারীরা আমাকে দূর থেকে অনুসরণ করছে। বেশ খানিকটা এগিয়ে, এখন যেখানে ক্রিকেট স্টেডিয়াম তার উল্টোদিকে ছোট টিলার উপর আমাদের তিন চারজন কলেজের অধ্যাপকদের কোয়ার্টার রয়েছে, আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়ে একেবারে কলেজ সড়ক সংলগ্ন কোয়ার্টারটির বন্ধ দরজায় কড়া নাড়লাম।” (সৌ: অতীত দিনের স্মৃতি)

একেই বলে অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া। রাজনৈতিক জীবনে পুলিশের সাথে লুকোচুরি খেলার সময়ে আরও সব রোমাঞ্চকর ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে মানিক সরকারকে। আত্মগোপনে থেকে রাজনীতি করার সেই দিনগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কোনদিনই কিছু বলেননি। তবে লিখেছেন। 

অল্প কথার মানিক সরকার উত্তর পূর্বাঞ্চল তথা ভারতের শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। রাজনীতির লাইন তাঁর যাই থাক, কোনও বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে অসৌজন্য পাননি। দশকের পর দশক সংসদীয় রাজনীতি করে সৌজন্য রেখেই সরে গেছেন মানিক সরকার। নামের আগে অনেক ভারি ভারি উপমা বসেছে। তবে এখন পার্টির হোলটাইমার হয়েই থাকবেন। কিন্তু থাকবেন কোথায়? ঘরই তো নেই তাঁর। (চলবে)