Begum Rokeya: ভারতে নারী শিক্ষার দূত বেগম রোকেয়ার জন্য কলকাতায় কেউ সমাধির জমি দেয়নি

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: তবুও বেগম রোকেয়া মরে জানতে পারে না লোকে…ও কলকাতা! দরকার ছিল মাত্র সাড়ে তিন হাত জমি। তাও মেলেনি বেগমের জন্য। কোনো নবাব ঘরনী…

Tribute to Begum Rokeya, the leader of women's education in India

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: তবুও বেগম রোকেয়া মরে জানতে পারে না লোকে…ও কলকাতা! দরকার ছিল মাত্র সাড়ে তিন হাত জমি। তাও মেলেনি বেগমের জন্য। কোনো নবাব ঘরনী নন তবে বিত্তশালী পরিবারের গৃহবধূ। তাঁর কর্মকাণ্ডে কলকাতা গরবিনী। অথচ তাঁকেই কলকাতা বেলা শেষে ঠেলে দিয়েছিল পানিহাটিতে। নিভৃতে সেখানেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল বেগমকে। ভারতের নারী শিক্ষার দূত বেগম রোকেয়ার (Begum Rokeya) জন্ম ও মৃত্যু একই দিনে-৯ ডিসেম্বর।

১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরে (এখন বাংলাদেশে) জন্ম। আর ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার প্রয়াণ হয়েছিল কলকাতায়। ৫২ বছর বয়সে মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও তিনি নারী মুক্তি নিয়ে সক্রিয়। গবেষণায় উঠে এসেছে সেদিনই ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন বেগম রোকেয়া।

   

ভারতে নারী শিক্ষা দরকার। এমনই চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনচেতা মন নিয়ে বেগম রোকেয়া শিক্ষা প্রসারে এগিয়ে আসেন। তাঁর পিত়ৃকূল ছিলেন প্রবল বিদ্যানুরাগী-বিত্তশালী। আর শ্বশুরবাড়ি ছিল ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত। স্বামী সাখাওয়াত হোসেনের উৎসাহে রোকেয়া নেমে পড়লেন ভারতে নারী শিক্ষার কাজে। পোড়ার দেশে যা হয় তাই হয়েছিল। চারদিকে ছি: ছি:। সংস্কৃতি প্রেমিক বঙ্গ সমাজে তখন আলোচনা- “মেয়েছেলে আবার পড়বে কেন, বেগমের ঢং দেখে বাঁচিনা। মুসলমান মেয়েগুলো বোরখা ফেলে পড়তে যাবে?” বেগম বুঝলেন বিপদ আসছে। তবে তাঁর বিত্তের ঝলকে সব চুপ। সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে বিদ্যালয় গড়েছিলেন। নারী শিক্ষার জন্য প্রচার শুরু করেছিলেন। তৈরি হলো ভারতের অন্যতম সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। আজও দেশের গর্ব এই বিদ্যালয়।

ইসলামি সমাজের সংস্কার ভেঙে বেগম রোকেয়ার উদ্যোগে ১৯১১ সালে যখন কলকাতায় বিদ্যালয়টি তৈরি হয়েছিল, সে বছর কলকাতা থেকে রাজধানী দিল্লিতে সরানো হয়। সেই বছরেই ভারতীয় দল মোহনবাগানের ঐতিহাসিক বিজয়। উচ্ছসিত ছিলেন বেগম রোকেয়া। কারণ, হিন্দু রক্ষণশীল মনোভাব কেটে চামড়ার বলে লাথি মেরে জয়ী হয়েছে এমন দল যার সবাই গোঁড়া ধর্মীয় পরিবারভুক্ত। এমন বেগমকে মেনে নেওয়া কঠিন। তবে বেগমও না রুখনেওয়ালি। তাঁর কলমে একের পর এক সাহিত্যকীর্তি, নারী শিক্ষা প্রসারের পক্ষে যুক্তিতে খান খান ভারতের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ।

সমাজ বদলানোর লড়াই বারবার দেখেছে মহানগরী। কখনও জ্বলন্ত চিতা থেকে নারী মুক্তিদাতা রামমোহনের হুঙ্কার, কখনো বিধবা বিবাহ আইন চালুতে কঠিন বিদ্যাসাগরের যুদ্ধ, কখনো যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠা তো কখনো সশস্ত্র পথে রাজনৈতিক বিপ্লব আর গণআন্দোলন। তবে এর মাঝে দেশের নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার তীব্র লড়াইয়ে ততকালীন প্রগতিশীল ঠাকুর পরিবারও হতচকিত ছিল।

সব যুদ্ধ একদিন শেষ হয়। ৫২ বছর বয়সে বেগম রোকেয়ার যুদ্ধ শেষ হয়েছিল। এবার প্রতিপক্ষের সুযোগ। দেব না কলকাতায় ওর কবরের জায়গা এমনই দাবি উঠে গেল। কী আশ্চর্য, প্রগতিশীল কলকাতার সমাজ থাকল নীরব। পানিহাটিতে সাড়ে তিন হাত জমি পেলেন বেগম রোকেয়া। গঙ্গা তীরে বেলা শেষে তাঁর সমাধিতে ছায়া ঘনায়। ওখানেই থমকে আছে সময় আর বেগমের লড়াই ও জয়ী হওয়ার গল্পগাথা।