সবচেয়ে নিষ্ঠুর মা কচ্ছপ, কেন জন্ম দিয়ে ফেলে রেখে যায় সন্তানদের?

মন্থর গতির প্রাচীন এক প্রাণী আমাদের চির চেনা কচ্ছপ। যারা পৃথিবীতে রয়েছে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে। তবে এরা একটা অদ্ভুত কান্ড করে। যা দেখলে যে…

মন্থর গতির প্রাচীন এক প্রাণী আমাদের চির চেনা কচ্ছপ। যারা পৃথিবীতে রয়েছে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে। তবে এরা একটা অদ্ভুত কান্ড করে। যা দেখলে যে কেউ বিভ্রান্ত হবেন। সেই সঙ্গে এটাও ভাববেন যে কচ্ছপ এত নির্মম কেনও। আসলে কী এমন করে কচ্ছপ জানেন?

সাধারণত কচ্ছপরা সমুদ্রতীরে জন্ম দিয়ে বাচ্চাদের ফেলে চলে যায়। এরপর তারা আর ফিরেও তাকায় না। বাচ্চারা যেন নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা যুগিয়ে নেয় এমনই ভাবনা কচ্ছপ মায়েদের। ঠিক এখানেই প্রশ্ন। অন্য মায়েরা যেমন সন্তান জন্ম দিয়ে তাদের আগলে রাখে, সেখানে কচ্ছপ কেনও তাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেই ত্যাগ করে দেয়।

কচ্ছপরা প্রতিকুল পরিবেশে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার জন্য পরিচিত। তবে যখন প্রজননের কথা আসে তখন তারা একটি কৌশল অবলম্বন করে। তা হল, তারা একবারে অনেক সন্তানের জন্ম দেয়। কিন্তু এরপর তাদের ন্যূনতম পিতা মাতার দায়িত্ব পালন করে না। যত্ন তো অনেক পরের কথা। তারা বাচ্চাদের কোনও একটি জায়গায় ফেলে আসে।

এ গোটা বিষয়টি শুনতে নির্মম মনে হলেও এর পিছনে আছে আসল এক রহস্য। নিজেদের ক্ষমতায় যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার শিক্ষা দেওয়ার জন্যই তারা সাধারণত বাচ্চাদের এভাবে ফেলে আসে। এই পদ্ধতিতে কিছু সংখ্যক বাচ্চারা হলেও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে বেড়ে ওঠে। কিন্তু কিভাবে জানেন?

কচ্ছপ সাধারণত সমুদ্রপাড় থেকে বেশ খানিকটা দূরে বালি খুরে ডিম পাড়ে। এই কৌশলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। প্রথমত জোয়ারের ডিম ভেসে যাওয়া কিংবা শিকারির হাতে পড়ার থেকে ডিমগুলি বেঁচে যায়। ফলে ডিম গুলো ফুটে বাচ্চা বের হতে পারে। জন্মের পর ভূমিতেই তারা তাদের যাত্রা শুরু করতে পারে। যেখানে জলজ শিকারীদের আনাগোনা কম।

সুতরাং শিকারীদের এড়ানোর জন্য এটি একটি কার্যকরী কৌশল। বাকি রেকুন এবং কাঁকড়া সহ কচ্ছপের বহু শত্রু রয়েছে। যারা সাধারণত জলের কাছাকাছি বেশি ঘুরে বেড়ায়। শিকার পেলেই ধরে ফেলে খপ করে। জলের কিছুটা কাছে হওয়ায় ডিম ফুটে বাচ্চা গুলো জলের দিকে এগোতে পারে। এ পথে অবশ্য ভয় রয়েছে কারণ শিকারীরা মাঝপথেই হামলা করতে পারে। প্রায় সময় জলে গিয়ে পৌঁছাতে পারে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি বাচ্চা। তবে কিছুটা হলেও শিকারীদের হুমকি এড়াতে পারে, বাচ্চাগুলো। সে ক্ষেত্রে কচ্ছপ মায়েরা একেবারেই যে দায়িত্ব পালন করে না সেটা নয়।

তারা তীর থেকে দূরে এসে বালি খুরে বাসা বানায়। সেখানে ডিম পারে এবং নিশ্চিত করে ডিম গুলো যেন ভালভাবে ঢাকা থাকে। এর সঙ্গেই তারা যেন নিরাপদ থাকে। এখানে সব ঠিক হয়ে গেলে কচ্ছপ মায়েদের দায়িত্ব শেষ। এরপর শুরু হয় প্রকৃতির দায়িত্ব। ডিম ফুটে বাচ্চারা নিজেদের দায়িত্ব নিজেরাই নেয়।