Special Story: ৪৭-এর আগেই স্বাধীন হয়েছিল ‘বাগী বালিয়া’

Special Correspondent, Kolkata: ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধী বোম্বাই অধিবেশন থেকে ডাক দিলেন “করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে”! দেশব্যাপী শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন। আন্দোলন সব জায়গায় একেবারে নিরামিষ…

bagi ballia

Special Correspondent, Kolkata: ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধী বোম্বাই অধিবেশন থেকে ডাক দিলেন “করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে”! দেশব্যাপী শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন। আন্দোলন সব জায়গায় একেবারে নিরামিষ ছিল না।

উত্তরপ্রদেশে বালিয়া, গঙ্গার ধারে সম্বৃদ্ধ এই জনপদটির লোকজন প্রথম থেকেই একটু স্বাধীনচেতা। ইংরেজ আমল থেকে আজও ‘বাগী বালিয়া’ কথাটার চল আছে। বাগী মানে এখানে বিদ্রোহী। ৪২ এর আন্দোলন শুরু হতেই এখানকার বহু থানা এবং মহকুমাতে বাসিন্দারা সরকারি খাজনা দেয়া বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে প্রশাসন স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের গ্রেপ্তার করা শুরু করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন চিত্তু পানডে নামে বালিয়ার এক ব্রাহ্মণ।

১৯ আগষ্ট ১৯৪২, বালিয়া জেলের বাইরে জড়ো হলো প্রায় হাজার পঞ্চাশেক মানুষ। তাদের হাতে দা কুড়ুল থেকে লাঙলের হাল। দাবী একটাই চিত্তু সহ সব নেতাদের মুক্তি চাই। আন্দোলনকারীদের জঙ্গী মেজাজ দেখে জেলাশাসক তাঁদের মুক্তি দিতে বাধ্য হন। সেই রাতেই বালিয়ার মানুষ স্বাধীন বালিয়া প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে। ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে বালিয়ার বেশ কিছু এলাকার সরকারি দপ্তরে ওড়ে তিরঙ্গা পতাকা। সরকারের প্রধান রূপে ঘোষিত হয় চিত্তু পানডের নাম। চিত্রটি বদলে যায় ২২শে আগষ্ট রাত থেকেই। পাঁচ কোম্পানি বালুচ সেনা নিয়ে শহরে প্রবেশ করেন বারাণসীর কমিশনার নেদার সোল। সঙ্গী ছিলেন এলাহাবাদ ছাউনির সেনাধ্যক্ষ মার্শ স্মিথ।

ভোর থেকেই শুরু হয় সেনা অভিযান। আধুনিক অস্ত্রের সামনে পেছু হঠে আন্দোলনকারীরা। সাতদিনের সেনা অভিযানে শহীদ হয় ৮৪ জন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই আবার সেখানে কায়েম হয় বৃটিশ রাজ। অর্থাৎ এই স্বাধীন সরকারের আয়ু ছিলো মোটামুটি দশদিন। যদিও পোস্ট দেখে ধারনা হয় ‘৪২ এর আগষ্ট থেকেই বালিয়া স্বাধীন! আশ্চর্যের কথা ঘরের কাছে পরাধীন আমলের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সরকার নিয়ে নীরব হোয়া ইউনিভার্সিটির স্নাতক বৃন্দ!

১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সবচেয়ে বেশি দিন স্থায়ী ও সফল হয়েছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। তাম্রলিপ্ত সরকার বাদে বাকি সরকারগুলি বিশেষ সাফল্য পায়নি। ইংরেজরা বহু চেষ্টা করেও তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারকে উচ্ছেদ করতে পারছিল না। এই সরকারের একজন সর্বাধিনায়ক ছিলেন। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বে একজন সচিব। সেগুলি হল, আইনশৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিচার, কৃষি, প্রতিরক্ষা ও অর্থ। মেদিনীপুরের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা সতীশ সামন্ত তাম্রলিপ্ত সরকারের সর্বাধিনায়ক হন। অর্থ সচিব নিয়োগ করা হয় পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়কে। প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র সচিবর দায়িত্বে ছিলেন সুশীল ধাড়া।

আইনশঙ্খলার বিষয়ে যথেষ্ট কড়া ছিল তাম্রলিপ্ত সরকার। ইংরেজরা একে ফেলে দেওয়ার জন্য নানা দুষ্কৃতীকে প্ররোচনা দিত। কিন্তু কঠোর আইনশৃঙ্খলার জেরে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রশাসন এই দুষ্কৃতীদের ধরে কঠোর সাজা দিত।

শিক্ষার দিকেও তাম্রলিপ্ত সরকার বিশেষ জোর দিত। জাতীয় বিদ্যালয়গুলিকে অনুদান দিত। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রদের অভাব অভিযোগ শুনে তা সমাধানের ব্যবস্থা করা হত।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের স্থায়ীত্ব ছিল ১৯৪২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৪ সালের ৩০শ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৯৪৩ সালের জুন মাসে ব্রিটিশদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত সতীশ সামন্ত এই সরকার পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত সফলভাবে কাজ করেছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ঘূর্ণিঝড়-বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণকার্যও চালায় এই জাতীয় সরকার। এসবই আজ হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অন্তরালে। সেই সাথে হারিয়ে গেছে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালির এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ‌