The Kalash: পুরুষদের সমানাধিকার ভোগ করেন পাকিস্তানে আলেকজান্ডারের বংশধর মহিলারা

বিশেষ প্রতিবেদন: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশে রয়েছে হিন্দুকুশ পর্বতশ্রেণি। যাকে গ্রীকরা বলতেন ককেশাস ইণ্ডিকাস। এখানেই বাস করে এক স্বাধীনচেতা প্রাচীন জনগোষ্ঠী (Kalash)। তাদের চুলের রং…

The Kalash: A Tribe of Alexander the Great’s

বিশেষ প্রতিবেদন: পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশে রয়েছে হিন্দুকুশ পর্বতশ্রেণি। যাকে গ্রীকরা বলতেন ককেশাস ইণ্ডিকাস। এখানেই বাস করে এক স্বাধীনচেতা প্রাচীন জনগোষ্ঠী (Kalash)। তাদের চুলের রং সোনালি, চোখের মনি নীল। ফেটে পড়ছে সৌন্দর্য। মহিলারা যেন গ্রীক দেবী, পুরুষদের রূপ গ্রীক দেবতাতুল্য।

পাকিস্তানের মতো ধর্ম ও তার নিয়মে কট্টরপন্থী মনোভাব নিয়ে চলা দেশের বাসিন্দা হয়েও তাঁদের জীবনযাপন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার। নারী পুরুষ উভয়েই তাঁরা স্বাধীনচেতা। পাকিস্তানের আর কোনও গোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে তাদের চেহারা, ধর্ম, সংস্কৃতি, সমাজব্যবস্থা ও খাদ্যাভাসের বিন্দুমাত্র মিল নেই। এই স্বাধীনচেতা গোষ্ঠি হল কালাশ। এরা নিজেদেরকে ২০০০ বছর আগে ভারতে আসা কিং আলেকজান্ডারের সৈন্যবাহিনীর বংশধর বলে থাকেন।

প্রাচীন জনগোষ্ঠী কালাশ, হিন্দুকুশের ভয়ঙ্কর পাহাড়ি ঢালে অতি সাধারণ বাড়িতে বসবাস করে। আসা যাক তাঁদের স্বাধীনচেতা মনোভাবের কথায়। পুরুষতন্ত্রের কোনও বালাই নেই কালাশদের গ্রামগুলোতে। কালাশ গ্রামে নারী-পুরুষের সমান অধিকার। তাঁরা নিজেরাই নিজেদের স্বামী বেছে নেন।

The Kalash: A Tribe of Alexander the Great’s

তাঁদের স্বামী পরিবর্তন করার ক্ষমতাও রয়েছে। তবে যিনি ওই মহিলাকে বিয়ে করবেন তাঁকে ওই মহিলার আগের স্বামী ওই মহিলাকে যা দিয়েছেন, তার দ্বিগুণ দ্বিতীয় স্বামীকে দিতে হবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, আগের স্বামী একটি গরু দিলে, দ্বিতীয় স্বামীকে দুটি গরু দিতে হবে।

স্ত্রী ছিনতাইকেও কালাশরা অপরাধ ভাবেন না। এক গ্রামের কালাশ বধূকে ছিনতাই করে নিয়ে যায় অন্য গ্রামের কালাশ পুরুষ, শুধু থাকতে হবে উভয়ের সম্মতি। একে ঘোনা দস্তুর বলা হয়। ছিনতাই-এর ঘটনার জেরে গ্রামে গ্রামে লড়াই লেগে যায়। তখন দুই গ্রামের মাথারা মীমাংসা করে দেন।

যৌবনে পা দেওয়া ছেলেদের গ্রীষ্মকালে ভেড়া নিয়ে উচুঁ পাহাড়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বেঁচে ফিরলে বাদুলাক উৎসব হয়। এই উৎসবে সে এক দিনের জন্য গ্রামের যে কোনও বিবাহিত, অবিবাহিত ও কুমারি নারীর সঙ্গে থাকবে এবং বাধ্যতামূলক ভাবে সঙ্গম করবে। এর জন্য কেউ গর্ভবতী হলে সেটাকে আশীর্বাদ বলে মনে করেন গ্রামের সবাই। নারীরা ঋতুমতী হলে বা সন্তান জন্মের সময় তাদের গ্রামের প্রান্তে বাশালেনি নামে একটা ঘরে থাকতে হয়।

The Kalash: A Tribe of Alexander the Great’s

ওঁদের জীবন সত্যিই রঙিন। সব কিছুতেই রয়েছে রঙের ছোঁয়া। নিজেদের পোশাক তারা নিজেরাই তৈরি করেন। কালাশ পুরুষরা পরেন উলের শার্ট, প্যান্ট, টুপি। নারীরা এমব্রোয়েডারি করা লম্বা কালো গাউনের মতো পোশাক। কালাশ নারীরা অনেক সময় মুখে ট্যাটুও করেন। বাচ্চারা চুলে বিভিন্ন রঙেন পাথরের পুঁতি পরে। জীবনযাত্রার সব উপকরণ তারা নিজেরাই তৈরি করে নেয়।

জীবিকা নির্বাহের জন্য কালাশরা পাহাড়ের ঢালে চাষ করেন। নাচ, গান, আমোদ-প্রমোদে ভরপুর জীবন তাদের। এখানকার অনুষ্ঠানগুলোর একটা বিশেষত্ব রয়েছে। পুরুষরা অনেক সময়েই নারীদের পোশাক পরে নাচেন, আর নারীরা পরেন পুরুষদের পোশাক।

<

p style=”text-align: justify;”>কালাশদের মূল ধর্মীয় উৎসব তিনটি। মে মাসে হয় চিলাম জোশি, শরৎকালে উচাউ, মধ্য শীতে হয় সেরা উৎসব কাউমুস। পাকিস্তান ইসলামে দীক্ষিত হলেও, এই কালাশ মানুষরা তাদের পৌত্তলিকতার সংস্কৃতি মেনে এখনও মন্দিরে প্রাচীন দেবতার পূজা করে। তাদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন চিহ্ন, সমাজব্যবস্থার ধরন, সংস্কৃতিগত প্রমাণ এবং ডিএনএ রিপোর্টও প্রমাণ দেয় তাঁরা আলেকজান্ডারের সৈন্যদেরই বংশধর।