শহীদ বসন্ত বিশ্বাসের (Basanta Biswas) স্মৃতিবিজড়িত পোড়াগাছা গ্রামের এই জন্মভিটে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে চলেছে। এই বংশে জন্মে ছিলেন আরও দুই বিপ্লবী মন্মথনাথ বিশ্বাস ও নীল বিদ্রোহের নেতা দিগম্বর বিশ্বাস। ২০১৭সাল পর্যন্ত বাড়িটির সকল দরজা ও জানালা ঠিকঠাক লাগানো অবস্থায় ছিল।
বর্তমানে বাড়ির সকল দরজা ও জানালা অন্যায় ভাবে খুলে নেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে বাড়িটিতে ‘বহ্নি বালক বসন্ত ‘ সিনেমার শুটিং হয়েছিলো । বাড়িটির বর্তমান ছবি দেখলে বোঝা যায় বাড়িটির স্মৃতি পুরোপুরি লুপ্তপ্রায় হতে চলেছে । এই ঐতিহ্যপূর্ণ বাড়িটি বাঁচানোর চেষ্টা রাজ্য সরকার যেমন করেনি,তেমনি শহীদের পরিবারের মানুষজন ও স্থানীয় বাসিন্দারাও এই বিষয়ে সচেষ্ট নয়। অথচ দিল্লি সরকার বসন্ত বিশ্বাসের স্মৃতিরক্ষার্থে তাঁর নামাঙ্কিত সরকারি স্কুল ও পার্ক করেছে। প্রতি বছর দিল্লি সরকার শহীদ বসন্ত বিশ্বাসসহ চার শহীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ৮ই মে শহীদ দিবস পালন করে। পশ্চিম বঙ্গের মানুষ এই উপেক্ষিত শহীদকে নিয়ে কি ভাবছে সেটাই দেখার বিষয়।
২৩শে ডিসেম্বর, ১৯১২, ভারতের বড়লাট লর্ড হার্ডিঞ্জ ঘোষনা করেন কলকাতা থেকে রাজধানী দিল্লিতে স্নানান্তরিত হবে এবং এই ঘটনা কে বিশেষ মর্যাদা ও স্মরণীয় করতে আড়ম্বরে, বিলাসবৈভবের রঙমশালে হাতি পিঠে বসে শোভাযাত্রায় দিল্লি দর্শন করবেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। ইতিমধ্যেই রাসবিহারী বসুর একান্ত প্রশিক্ষণে ও আনুগত্যে বসন্ত তৈরী হয়েছে দক্ষ ও বিশ্বস্থ যেূাূ্দ্ধা। শীতের সকাল। দিল্লীর রাজপথে মানুষ আর মানুষ। বসন্ত কে সাথে নিয়ে রাসবিহারী উপস্হিত দিলীর চাঁদনীচকে। বড়লাটের শোভাযাত্রা দিল্লীর রাজপথে । রাসবিহারীর সঙ্কেতে লীলাবতী পরবেশে বড়লাটের উপর বোমা নিক্ষেপন করলো বসন্ত। বোমাার বিকট আওয়াজ লন্ডভন্ড শোভাযাত্রা।
আহত সস্ত্রীক হার্ডিঞ্জ কিন্তু প্রাণে বাঁচলেন। বোমার আঘাতে মৃত্যু হলো এক পরিচারিকার। এই ঘটনা বৃটিশ শক্তির ভিত কম্পিত হলো। বৃটিশ পুলিশ কুকুরের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে বসন্ত কে। বসন্ত দিল্লি থেকে দেরাদুনে রাসবিহারীর আনুকূল্যে আশ্রয় নিলেন। দেরাদুনে থাকাকালীন বসন্তর বাবা মতিলাল।বিশ্বাসের মৃত্য হয়। বাবার মৃত্যু সংবাদ বসন্তকে যারপরনাই বিচলিত করলো।বসন্ত নিজ গ্রাম পোড়াগাছায় ফিরে এলাম। কৃষ্ণনগরে বাবার শ্রাদ্ধের বাজার করার সময় এক আত্মীয়ের বিশ্বাসঘাতকতায় গ্রেপ্তার হলেন বসন্ত। ১৯১৪ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি, দেরাদুনের দারোগা সুনীল ঘোষ, ও কৃষ্ণনগর কোতয়ালী থানার ও, সি, মন্মথ মুখার্জী গ্রেপ্তার করলেন বহ্নিবালক বসন্ত কে। ১৯১৪ সালে ২৩ মে দিল্লী ষড়যন্ত্র মামলার বিচার শুরু হয়। বিচারের নামে প্রহসনে ১৯১৪ সালের ৫ ই অক্টোবর, এইমামলার রায় ঘোষিত হয়।
অবোধবিহারী, বালমুকুন্দ, আমীরচাঁদের ফাঁসির আদেশ হয়, নাবালক হওয়ার কারনে বসন্তর ১২ বছরের কারাবাসের আদেশ হয়। কিন্তু বৃটিশ পুলিশ বসন্ত কে ফাঁসিতে লটকানোর জন্য লাহোর হাইকোর্টে আপিল করে এবং ৩ বছর বয়স জালিয়াতি করে বিচার ব্যবস্থার মৃত্যু ঘটিয়ে ১৯১৫, ১০ ই ফেব্রুয়ারি, বসন্ত বিশ্বাসের মৃত্যুদন্ডের আদেশ হয়। ১৯১৫ সালের ১১ই মে, আত্মীয়পরিজন শূণ্য লোকচক্ষুর আড়ালে পাঞ্জাবের আম্বালা জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন, লাহোর লরেন্স গার্ডেনে বোমা নিক্ষেপ সহ দেশজুড়ে নানা সহিংস বিপ্লবী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত বসন্ত।
এই মহান দেশপ্রেমিকের আত্মবলিদানের ১০৮ তম বর্ষ আজ ১১ই মে। বাঙালী কি মনে রাখবে না সেই স্মৃতি, বাঙালী কি কথা রাখবে না তার জাত্যভিমানের স্মৃতির মাধুরী মেলার? আমরা চৌগাছা মডেল একাডেমী, গাইঘাটা, উঃ ২৪ পরগনা বিদ্যালয়ে উন্মোচিত বসন্ত বিশ্বাসের আবক্ষ মূর্তি তে পবিত্রতার সাথে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন ও স্মরণাতীত আলাপচারিতায় উদযাপিত হলো এই দিন টি। বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাসের এই আত্মত্যাগ কি মেঘে ঢাকা থাকবে? আশা করি সরকারী উদ্যোগে অমর্যাদার কালো মেঘ সরিয়ে বাঙালী খুঁজে নেবে শহীদ বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাসকে।