Offbeat: লুপ্তপ্রায় তামার শহর, যার নাম উল্লেখ আছে গীতা-মহাভারতে

সে প্রায় অনেক বছর আগের কথা। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে রূপনারায়ণ এবং পশ্চিমে সুবর্ণরেখা বেষ্টিত একটি স্থান হয়ে উঠেছিল ভারতবর্ষের অন্যতম এক বাণিজ্যিক শহর তাম্রলিপ্ত (Tamralipta)…

tamralipta port

সে প্রায় অনেক বছর আগের কথা। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে রূপনারায়ণ এবং পশ্চিমে সুবর্ণরেখা বেষ্টিত একটি স্থান হয়ে উঠেছিল ভারতবর্ষের অন্যতম এক বাণিজ্যিক শহর তাম্রলিপ্ত (Tamralipta) অর্থাৎ তামার সম্ভার।

বিহারের ঘাটশিলার তামার খনি থেকে প্রচুর তামা জাহাজে করে এসে পৌঁছতো এখানকার বন্দরে। আশ্চর্যজনকভাবে আজ প্রায় ২৫০০ বছর পরেও সেই খনি জীবন্ত আছে। পৃথিবীর সমস্ত বন্দরের সঙ্গেই তাম্রলিপ্তের এই বন্দরের ছিল নিবিড় যোগাযোগ। ঐতিহাসিক এই বন্দরেই একদিন এসেছিলেন কলিঙ্গরাজ অশোক, পরবর্তীকালে সমগ্র কলিঙ্গ রাজত্বের রাজধানী রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল এই তাম্রলিপ্ত শহর।

শুধুমাত্র বাণিজ্যিক কারণেই নয়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের দিক দিয়েও এই স্থান আমাদের গর্ব। খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ২৫০০ বছর আগে ময়ূরাধা বংশের রাজত্বকাল থেকেই এখানে গড়ে উঠেছিল এই হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। কত শত রাজত্ব, কত রাজা, বিভিন্ন দেশের অনেক ব্যবসায়ী, ব্রিটিশ শাসনকাল

পুরাণ মহাভারত, ভাগবত, ব্রাম্ভবৈভার্তপূরাণ ইত্যাদিতেও এই প্রাচীন শহরের উল্লেখ আছে।

সেই প্রাচীনকাল থেকে আজও তমলুকের মানুষজনের রক্ষার্থে রয়েছেন এখানকার অধিষ্ঠাত্রী দেবী, যিনি মা বর্গভীমা। কৃষ্ণের সুদর্শন চক্র যখন সতী মায়ের দেহ খন্ড বিখন্ড করে দিয়েছিল তখন সতী মায়ের পায়ের গোড়ালি এসে পড়েছিল এই তমলুক শহরের মাটিতে। তাই এই মায়ের মন্দির হল ৫১ শক্তিপীঠের একটি। যদিও সেই প্রাচীন মন্দিরটি এখন আর নেই, কিছু দস্যু হামলার পর সেই মন্দিরটিকে আবার পুনর্গঠিত করা হয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বহু মুক্তিযোদ্ধা মায়ের আশীর্বাদ নিতে আসতেন যাদের মধ্যে ক্ষুদিরাম বসু অন্যতম।

তমলুক শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল এখানকার ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ি। মনে করা হয়, খ্রীষ্টপূর্ব ২৫০০ বছর আগে ময়ূরাধা বংশের রাজত্বকালে এই প্রাসাদটির নির্মাণ হয়। লাল ইটের তৈরী এই প্রাসাদটিকে দেখলে মনে হয় একটি দোতলা বাড়ি। শোনা যায়, ইটালি থেকে 8 জন মিস্ত্রি এসে তৈরী করেছিলেন এই প্রাসাদটি। ঐতিহাসিকেরা এখানকার বড় বড় ইটের থামগুলির আকৃতিকে ইসলাম ধর্মের নিদর্শন বলেও মনে করেন। শ্রীকৃষ্ণের বাণীতেও এই প্রাসাদের উল্লেখ আছে তাই অনেকের ধারণা এই স্থানেই মহাভারতের রাণী দ্রৌপদীর স্বয়ম্ভর সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

শুধু তাই নয়, এই প্রাসাদটি স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিচার্য হত। আমাদের প্রিয় নেতাজি এখানে এসে সভাও করেছিলেন। এখানেই হাতেখড়ি হয়েছিল সতীশ সামন্ত, সুশীল ধারার এর মতো ব্যক্তিত্বের।

ইতিহাস তার ধারার মতো বয়ে যাবে। কালের গভীরে হারিয়ে যাবে অনেক কিছুই। তবে আমরা আমাদের মতো ধরে রাখব সেইসব স্মৃতি বিজরিত আলোক ধারা।