হারিয়ে যেতে যেতে যেতে এখনও দাঁড়িয়ে বঙ্গলক্ষী পাইস হোটেল

বিশেষ প্রতিবেদন: ১৩০/সি, বি.বি.গাঙ্গুলী স্ট্রীটের ১৯৪১ সালের দোকান। নাম নিউ বঙ্গলক্ষ্মী হোটেল। ৮০ বছর অতিক্রান্ত। পুরু বিশ ইঞ্চি দেওয়াল ভেদ করে মোবাইলের সিগন্যাল যেখানে সহজে…

Pice Hotel Bangalakshi in Kolkata

বিশেষ প্রতিবেদন: ১৩০/সি, বি.বি.গাঙ্গুলী স্ট্রীটের ১৯৪১ সালের দোকান। নাম নিউ বঙ্গলক্ষ্মী হোটেল। ৮০ বছর অতিক্রান্ত। পুরু বিশ ইঞ্চি দেওয়াল ভেদ করে মোবাইলের সিগন্যাল যেখানে সহজে প্রবেশ করতে পারে না, সেখানে গলিপথ বরাবর সকালের প্রাতঃরাশ, দুপুর-রাতের মিল, বিকেলের টিফিন (ঘুগনি অন্যতম) – একেবারে স্বল্প মূল্যে বা ন্যায্য মূল্য’র খাবার নিত্যদিন।

এখনকার দুই কর্ণধার বিশ্বনাথ বড়ু ও কাশীনাথ বড়ু সম্পর্কে দুই ভাই। স্ত্রী ও পুত্রদের নিয়ে বেশিরভাগ সময় এখানেই থেকে যান। দুই ভাইয়ের স্ত্রী’রা এই হোটেলের হেঁসেল সামলান। একেবারে বাড়ির পরিবেশে বাড়ির রান্না। মশলা মেশিনে পিষে প্রতিদিন রান্নায় ব্যবহার হয়। গুঁড়ো লঙ্কা একেবারেই নিষিদ্ধ। সকালে চা’যের সাথে বাটার-টোস্ট, ডিমের অমলেট, দুপুর ও রাত্রে ভাত, রুটি, তরকারি, রুই, কাতলা, ভেটকি মাছের ঝোল, মুরগির মাংসের ঝোল, রুইপোস্ত, চাটনি’র বিস্তর আয়োজন।

   

Pice Hotel Bangalakshi in Kolkata

পাইস হোটেল শব্দের সৃষ্টি যদি “পয়সা” থেকে হয়ে থাকে, তাহলে নিউ বঙ্গলক্ষ্মী এখনও সেই ধারার পাইস হোটেল বলা যায়। মূল খাবারের থালায় প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পরিবেশন করা হয় প্রথমে। থালি সিস্টেম যাকে বলে। এরপর অতিরিক্ত ভাত, ডাল, তরকারির জন্য আলাদা পয়সা। খাবারের তালিকা ও মূল্য এই রকম (আজকের তালিকা):
* রুইমাছ, ভাত, তরকারি: ৬০/-
* রুইপোস্ত, ভাত, তরকারি: ৬৫/-
* চারাপোনা, ভাত, তরকারি: ৬৫/-
* কাতলা মাছ, ভাত, তরকারি; ৮০/-
* ভেটকি মাছ, ভাত, তরকারি: ৮০/-
* মুরগি মাংস, ভাত, তরকারি: ৮০/-
* সব্জি, ভাত: ৪০/-
* ভাজা ৫ টাকা
* চাটনি ৬ টাকা

কাশীনাথ ও বিশ্বনাথ বাবু ছোটবেলায় দেখেছেন, প্রায় ৫০ বছর আগেও এই হোটেলে মাটিতে বসে লোক আহার করতেন। পেতলের থালা, গেলাস, বাটিতে খাবার পরিবেশন করা হতো তখন। শুধু তাই নয়, ১বস্তা অর্থাৎ ৫০ কিলো চাল লাগতো প্রতিদিন দু’বেলা লোক খাওয়ার জন্য। রমরম করে চলতো এই বঙ্গলক্ষ্মী হোটেল সেই সময়। পাশের এক পরিচিত জন জানালেন, তাঁর বাবাদের সময় ৪ অনায় মাছের মুড়ো সহ এক থালা ভাত পাওয়া যেত। না, বঙ্গলক্ষ্মীর সেই বাম্পার সেল আর নেই এখন।

<

p style=”text-align: justify;”>মেরেকেটে ১০ জন আসেন দুপুরে খেতে, আর সারাদিনে চা-স্ন্যাকসের জন্য কিছু লোকজন। দীর্ঘ সময় পার করে এলেও এঁদের খাবারের দাম কিন্তু সেই অর্থে বেড়েছে, এটা বলা যায় না। পাইস হোটেলের স্বকীয়তা বজায় রাখা সত্ত্বেও নিউ বঙ্গলক্ষ্মী হোটেল ধুঁকছে প্রয়োজনীয় ক্রেতার অভাবে…।