গোওওওল…….অন্তঃসত্ত্বা মায়ের চিৎকার, ভূমিষ্ঠ ফুটবল ঈশ্বর

Special Correspondent, Kolkata: অন্তঃসত্ত্বা মা রেডিয়োর ধারাভাষ্য শুনছিলেন। বড় ফুটবল ম্যাচ চলছে। গোল হতেই বিশাল চিৎকার করে ওঠেন মহিলা। ওই চিৎকারে চাপ পড়ে পেটে। কিছু…

maradona

Special Correspondent, Kolkata: অন্তঃসত্ত্বা মা রেডিয়োর ধারাভাষ্য শুনছিলেন। বড় ফুটবল ম্যাচ চলছে। গোল হতেই বিশাল চিৎকার করে ওঠেন মহিলা। ওই চিৎকারে চাপ পড়ে পেটে। কিছু সময় পর ওই মহিলাই জন্ম দেন ফুটবলের রাজপুত্রের। জন্মদাত্রী মা তোতা, পুত্র দিয়েগো। ফুটবলের সঙ্গে যেন নাড়ির যোগ কিন্তু সে যে বিশ্ব ফুটবলের কিংবদন্তি হয়ে উঠবে কে জানত। 

maradona

পেলের মতোই হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন মারাদোনা। শ্রমিক বাবা চিতোরো আর পরিচারিকা মা তোতার সঙ্গে তিনি থাকতেন ভিসা ফিওরিতার এক বস্তিতে। সেখানকার নালাতে তিনি ডুবে যাচ্ছিলেন দুই বছর বয়সে। কাকা দেখতে পেয়ে তাঁকে তুলে আনেন। শুনেছি, তোতার যে দিন প্রসব বেদনা ওঠে সেদিন বড় ফুটবল ম্যাচ ছিল। রেডিওতে ধারা বিবরণী চলছিল। মারাদোনা যখন পৃথিবীর মুখ দেখবেন সেই সময়ে না কি তোতা প্রচণ্ড চিৎকার করে ওঠেন গোওওওওলল বলে। সেদিন ওই হাসপাতালে জন্ম নেওয়া সব কন্যা সন্তানের মধ্যে একমাত্র মারাদোনাই ছিলেন পুত্র। সবাই তোতাকে বলে ছিলেন, “দেখো তোমার এই ছেলে একদিন নামী ফুটবলার হবে।” শুনে আনন্দে তোতা কেঁদে ফেলেন। আশীর্বাদ বাস্তব হয়েছিল।

maradona

Advertisements

মারাদোনার সারা জীবন জুড়ে ছিলেন তাঁর মা তোতা। পরিবারের প্রতি তাঁর অদ্ভূত টান। বিরাশির বিশ্বকাপের আগে জার্মানির সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ রিভারপ্লেটের মাঠে। লোথার ম‍্যাথেউজ খেলতেই দিলেন না তাঁকে। গ্যালারি থেকে বিদ্রুপ ভেসে আসতে লাগল। সেই সঙ্গে মা বাপ তুলে অকথ্য গালিগালাজ। মারাদোনা সহ্য করতে না পেরে এক দর্শককে মেরে বসলেন। ব্যাস পরদিন তাঁর তুমুল সমালোচনা হল। রেগে মারাদোনা চলে গেলেন তাঁর পৈতৃক ভিটেতে| Buenos Aires থেকে অনেক দূরে এস্কিনো বলে এক জায়গায়। সেবার বিশ্বকাপ টিমের কোচ লুই সিজার মেনোত্তি। বারবার তিনি লোক পাঠানো সত্ত্বেও মারাদোনা বসে রইলেন সেখানে। বলে পাঠালেন, তিনি মাছ ধরায় ব্যস্ত। পাল্টা প্রশ্ন করলেন তিনি, “একটা ম্যাচ বাজে খেললেই কেন লোকে গালি দেবে মা তুলে? আমার মা হলেন পৃথিবীর সেরা মা। ওঁর জন্য আমি সব কিছু ত্যাগ করতে পারি।”

ফুটবলার জীবনের শুরুতেই মারাদোনার একটা বিশ্রী অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স তেরো চৌদ্দ। দেশের হয়ে উরুগুয়েতে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে গেছেন। কর্তারা প্লেয়ারদের হোটেলে না রেখে একেক জনকে একেক পরিবারের সঙ্গে রেখে ছিলেন সেখানে। সব প্লেয়ার ভালো ভালো পরিবারের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু মারাদোনা বস্তির ছেলে। তাই ঠাই পান কালো চামড়ার এক বেকার যুবকের ঘরে। মারাদোনা খুব দুঃখ পেয়ে ছিলেন এই অবহেলায়। বাড়ি ফিরে মাকে জিজ্ঞেস করে ছিলেন, “ওরা আমার সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করল কেন মা?” তোতা বলেন, “মন খারাপ করিস না। ভাল খেলে তুই উত্তর দিয়ে এসেছিস।” এভাবেই মারাদোনার সারা জীবন জুড়ে ছিলেন তাঁর মা তোতা।