নাগালে এসেও হাতের বাইরেই থেকেছেন ব্রিটিশ-যম বটুকেশ্বর

বিশেষ প্রতিবেদন: দেশ জুড়ে সশস্ত্র বিপ্লব রুখতে ব্রিটিশ সরকার ‘Defence of India Act 1915’ চালু করার কথা ভাবছে। এর বিরোধিতায় কী করা যায় ? প্রস্তাব…

freedom fighter Batukeshwar Dutta

বিশেষ প্রতিবেদন: দেশ জুড়ে সশস্ত্র বিপ্লব রুখতে ব্রিটিশ সরকার ‘Defence of India Act 1915’ চালু করার কথা ভাবছে। এর বিরোধিতায় কী করা যায় ? প্রস্তাব দিলেন তিনি। বললেন‚ দিল্লিতে Central Legislative Assembly-তে বোমা ছোড়া হোক। তাঁর প্রস্তাব গৃহীত হল HSRA-এ। প্রস্তাব ও কার্যসিদ্ধি করেছিলেন বটুকেশ্বর দত্ত। সঙ্গী ছিলেন শুকদেব। আর ঠিক হয় এরপর ভগৎ সিং চলে যাবেন সোভিয়েত রাশিয়া।

পাল্টে যায় পরিকল্পনা। অল্প এদিক ওদিক হয়। বটুকেশ্বর থেকে যান কমন ম্যান হিসাবে। বোমা নিক্ষেপের দায়িত্ব পান ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত। বর্ধমানের ছেলে চলল এসেম্বলিতে বোমা ছুঁড়তে। ১৯২৯-এর ৮ এপ্রিল ‘Central Legislative Assembly’-র দর্শকাসন থেকে দুটি বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা। সঙ্গে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ ‘ ধ্বনি। ফরাসী নৈরাজ্যবাদী বিপ্লবী বৈলেয়ন্টের মতোই ভগৎ সিংহের বক্তব্য ছিল ‘বধিরকে শোনাতে উচ্চকণ্ঠ প্রয়োজন’। উড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী লিফলেট। কয়েকজন আহত হলেও এই ঘটনায় কারও মৃত্যু হয়নি। শান্তভাবে গ্রেপ্তারবরণ করেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত।

freedom fighter Batukeshwar Dutta

এরপর বিস্ফোরক আইন ভঙ্গ ও হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকেই। ভগৎ সিং‚ শুকদেব এবং বটুকেশ্বর দত্তকে। বিচারে বটুকেশ্বরকে আন্দামানে দ্বীপান্তরে পাঠানো হয়। জেলবন্দিদের সাথে নোংরা আচরণের বিরুদ্ধে ও রাজবন্দীর অধিকারের দাবীতে এক ঐতিহাসিক অনশনের শুরু করেন এবং কিছু অধিকার আদায়ে সক্ষম হন তাদের জন্য । তবে এই অনশনে শহীদ হন বিপ্লবী যতীন দাস। আন্দামান থেকে যখন ফিরে আসেন‚ তখন বটুকেশ্বর দত্ত যক্ষ্মা রোগাক্রান্ত। দেশ জুড়ে প্রতিহত সশস্ত্র আন্দোলন। তাঁর কমরেডরা কেউ আর নেই। তিনি যোগ দিলেন গান্ধীজির ভারত ছাড়ো আন্দোলনে। আবার চার বছরের কারাদণ্ড হল। এবার গেলেন বিহারের মোতিহারী কারাগারে। ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দে বটুকেশ্বর মুক্তি পেলেও বাংলা, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশ তার প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। ১৯৪২ সালে আবার গ্রেপ্তার করে তাকে অন্তরীন রাখা হয় ৩ বছর।

<

p style=”text-align: justify;”>সর্বস্বত্যাগী বিপ্লবীর শেষ জীবন বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। টিবি রোগাক্রান্ত হওয়ায় জেল থেকে মুক্তি পেলেও স্বাধীন ভারতে দারিদ্রের সাথে লড়াই করে তাঁর জীবন কেটেছে। স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সালে বিয়ে করেছিলেন। স্ত্রী ছিলেন অঞ্জলি। একমাত্র মেয়ের নাম রেখেছিলেন ভারতী। বাকি জীবন কেটেছিল দুঃসহ দারিদ্র্যে। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে পরিবহণ ব্যবসা করতেন। শেষ দিনগুলো ছিলেন বিহারের পাটনায়। সরকারি সাহায্য বা সম্মান বিশেষ কিছু পাননি। দীর্ঘ রোগভোগের দিল্লীর একটি হাসপাতালে প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালে তার মৃত্যু হয়। তাঁর শেষ ইচ্ছে অনুসারে অন্ত্যেষ্টি হয়েছিল পঞ্জাবের ফিরোজপুরের হুসেইনিওয়ালায়। যেখানে তার ৩৪ বছর আগে রাতের অন্ধকারে শতদ্রুর জলে গোপনে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর সহযোগী ভগৎ সিং-শিবরাম রাজগুরু-শুকদেব থাপারের অস্থি।