দেশটি একসময় ছিল বিশ্বের বৃহত্তম সোনা উৎপাদনকারী। তবে আজ সেই দেশটির নাগরিকরা দিন কাটাছে অর্ধাহারে, অনাহারে। এই দেশটি হল আফ্রিকার মালি। আজ থেকে প্রায় ৮০০ বছর আগে এই দেশটি শাসন করতেন মানসা মুসা নামের এক শাসক। যিনি ১৩১২ থেকে ১৩৩৭ সাল পর্যন্ত মালি সাম্রাজ্য শাসন করেছেন। এই শাসক সমগ্র বিশ্বে গোল্ড প্রোডিউসার নামে পরিচিত ছিলেন।
অনেক ঐতিহাসিক মানসা মুসাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ঐতিহাসিক নথি ও পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে বর্তমান সময়ের শীর্ষ ধন কুবের এলন মাস্ক কিংবা বিল গেটসের থেকেও মালির সুলতানের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল বেশি। তার আনুমানিক সম্পত্তি ছিল ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা এখনকার ধনী মানুষদের সম্পত্তির দ্বিগুনেরও বেশি।
মালি সাম্রাজ্যের ব্যাপক পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ তার এত অর্থের মালিক হওয়ার প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। মুসলিম শাসকের সাম্রাজ্যের দক্ষিণের দেশগুলোতে ছিল বড় বড় সোনার খনি। যেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে সোনা উত্তোলন করা হতো।
অপরদিকে তার রাজ্যের উত্তরের দেশগুলোতে উৎপাদন করা হতো নুন। যা তখনকার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ছিল। এই দুই সমৃদ্ধ অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় মুসার রাজ্য উভয় অঞ্চলের মধ্যে হওয়া বাণিজ্যের থেকে লাভবান হত। এই কারণে মালি ও তার শাসনকালকে ব্যাপকভাবে ধনী করে তুলেছিল। কথিত আছে মুসা যখন মালির শাসক ছিলেন সেখানে প্রতি বছর এক হাজার কেজি সোনা খনন করা হতো। যার কারনে তাকে বলা হয় বিশ্বের গোল্ডের বড় প্রডিউসার।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীরা তার কাছে সোনা কিনতে আসতো। এর পাশাপাশি বলা হয় যে মানসা মুসার কাছে এত বেশি সোনা ছিল যে তিনি তার প্রাসাদেও প্রচুর পরিমাণ সোনা রেখেছিলেন। মুসলিম এই শাসক উদারতা এবং দয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন। এর সঙ্গেই তার বুদ্ধি এবং বিচারের জন্য ইতিহাস জুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন।
কিন্তু মুসার এই বেশি রকমের উদারতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভাবনা না থাকা মালিকে গরিব দেশে পরিণত করেছে। তিনি যখন মালি থেকে মক্কা পর্যন্ত ৬৫০০ কিলোমিটার যাত্রা করেন তখন সফরে মিশরের মানুষের মধ্যে প্রচুর সোনা বিতরণ করেছিলেন। তিনি তার হজ যাত্রার পথে এত বেশি সোনা বিলিয়েছিলেন যে, তৎকালীন লেখকরা তাদের গানে মুসার প্রশংসা করার বদলে দুর্নাম করেছিলেন। কারণ তারা মনে করেন সুলতান সাম্রাজ্যের বাইরে স্থানীয় সম্পদ নষ্ট করেছে।
এই যাত্রা শেষ করার পর মুসা ১৩৩৭ সালে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃত্যুর পর ছেলেরা মালির উপর তাদের শাসন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এরপরে মালি বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আজ এই দেশের অবস্থা এমন হয়েছে যে এটি বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে গণনা করা হয়।