Special Correspondent, Kolkata: টেগার্ট থেকে এন্ডারসনের মতো অত্যাচারী ইংরেজদের হত্যার মূলে ছিলেন তিনিই। একাধিকবার জেলে গিয়েছেন। সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক শোভারানী দত্ত।
শোভারানি দত্তের জন্ম ১৯০৬ সালে, মৃত্য ১৯৫০ সাল ৯ নভেম্বর আজকের দিনে। তিনি অগ্নিযুগের বিপ্লবী অগ্নিকন্যা ছিলেন। হয়তো অনেকেই এনার নাম শুনেছে, কিন্তু তার বিষয়ে সবার কাছে জানা নেই। এই শোভারানি দত্তের জন্ম হয়েছিল কলকাতায় ১৯০৬ সালে। তার পিতার নাম ছিল যতীন্দ্রনাথ দত্ত। এনাদের পৈতৃক বাসস্থান ছিল বঙ্গদেশের খুলনায়। শোভারানি দত্তের মাতা বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভানেত্রী ছিলেন।
১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সে ব্রাহ্ম গার্লস ট্রেনিং স্কুল থেকে পাশ করেন এবং বৃন্দাবনে বিপ্লবী বীর রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপ প্রতিষ্ঠিত “প্রেম মহাবিদ্যালয়ে” শিক্ষাপ্রাপ্ত হন, শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে পাঞ্জাবের নানাস্থানে ভ্রমণ করেন। শোভারানি দত্ত পাঞ্জাবের মহান বিপ্লবী নেতা ( পাঞ্জাবকেশরী নামেও পরিচিত ) লালা লাজপত রায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার পরিচয়ের মাধ্যমে বিপ্লবের প্রেরণা পান।
১৯৩০ সালে মাতা লাবণ্যপ্রভা দত্তের সঙ্গে কলকাতায় “আনন্দমঠ” প্রতিষ্ঠা করেন। নারীদের সত্যাগ্রহ সমিতির কর্মীরূপে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন। তারা পলাতক বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতেন ও নানাভাবে তাদের সাহায্য করতেন। ১৯৩০ সালের ২৫ শে আগস্ট বিপ্লবী দীনেশচন্দ্র মজুমদার ও অনুজাচরণ সেন মিলে কুখ্যাত ইংরেজ অত্যাচারী চার্লস টেগার্ট সাহেবের গাড়ি লক্ষ্য করে, গাড়ীতে বোমা নিক্ষেপ করেন।
পরে আরেকটি বোমা নিক্ষেপ করার গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অনুজাচরণ সেনের। দুর্ভাগ্য বশত ধরা পড়ে যান বিপ্লবী দীনেশ চন্দ্র মজুমদার। এই কারণে পুলিশ চিরণী তল্লাশি চালায়, যার ফলে গ্রেপ্তার হয়– শোভারানি দত্ত, কমলা দাশগুপ্ত, শৈলরাণী দত্ত, ডা. নারায়ণ রায়, ভূপালচন্দ্র বসু, অদ্বৈত দত্ত, অম্বিকা রায়, রসিকলাল দাস, সতীশ ভৌমিক, সুরেন্দ্র দত্ত, রোহিণী অধিকারীসহ অনেকে ধৃত হন।
এরপর বিচারের পালা বিচারে নারায়ণ রায় ও ভূপাল বসুর ১৫ বছরের দ্বীপান্তর, সুরেন্দ্র দত্ত ১২ বছর, রোহিণী ৫ বছর ও সতীশ ২ বৎসর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং অন্যান্য সকলে মুক্তি পান। তারা সকলেই ছিলেন তরুণ বিপ্লবী দলের সদস্য। ১৯৩৪ সালের ৮ ই মে মাসে দার্জিলিং-এ লেবং মাঠে গভর্নর অ্যান্ডারসনের উপর বিপ্লবী আক্রমণ করা হয়।
আক্রমণ হবার পর উজ্জলা মজুমদার কলকাতায় শোভারানি দত্তের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ১৮ মে দুজনেই গ্রেপ্তার হন এবট ১৯৩৭ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন। শেষে ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর মহান বিপ্লবী অগ্নিকন্যা শোভারানি দত্ত শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।