হীরের চেয়েও দামি গন্ডারের শিং

এক গ্রাম হিরে বা সোনার চেয়ে গন্ডারের শিংয়ের বাজার মূল্য প্রায় কয়েক গুণ বেশি। অনেকে হয়তো কথাটা শুনে হেসে উড়িয়ে দেবে কিন্তু বাস্তবে এটাই সত্যি।…

এক গ্রাম হিরে বা সোনার চেয়ে গন্ডারের শিংয়ের বাজার মূল্য প্রায় কয়েক গুণ বেশি। অনেকে হয়তো কথাটা শুনে হেসে উড়িয়ে দেবে কিন্তু বাস্তবে এটাই সত্যি। সোনা হীরার চেয়ে অনেক দামি গন্ডারের শিং। গন্ডারের শিং নিয়ে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাস। কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন গন্ডারের শিং এর গুড়োর সঠিক ব্যবহার যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। কেউ আবার মনে করে গন্ডারের সিং এর গুড়ো জ্বর সারাতে কাজ করে। ভিয়েতনামের গন্ডারের সিং এর গুঁড়ো জ্বর সারানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকের মতেই একটি ক্যান্সার নিরাময় করতে পারে। এই সকল বিশ্বাস ওর ধারণা থেকেই এশিয়াতে গন্ডারের শিংয়ের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলছে।

এশিয়ার বাজারে এর ব্যাপক চাহিদাই এর অধিক মূল্যের পিছনে মূল কারণ। বর্তমানে হীরে এমনকি প্লাটিনামের থেকেও গন্ডারের শিং এর মূল্য অনেক বেশি। পরিসংখ্যানে জানা যায়, গন্ডারের একটা শিং এশিয়ার বাজারে আড়াই লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি করা সম্ভব। যার মূল্য দু কোটি ৭৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গন্ডার দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকাতে। যেখানে প্রতিবছর শিকারী, প্রাণী সিং-এর সন্ধানে আসে। এরপর কোন গন্ডারের সন্ধান পেলে প্রাণীটির প্রাণ কেড়ে নিয়ে তার শিং নিয়ে যায়। কখনো আবার সিং কেড়ে নিয়ে প্রাণীটিকে আহত অবস্থায় জঙ্গলে ফেলে দিয়ে চলে যায়।

প্রতিবছর মোজাম্বিক ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকার শিকারীরা সেসব শিং দিয়ে বছরে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের ব্যবসা করে। কিন্তু গন্ডারের শিং নিয়ে প্রচলিত ধারণা বিজ্ঞানসম্মত না হলেও এর চাহিদা দিন দিন কেবল বেড়েই চলেছে। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিকারীর উৎপাত। কমে যাচ্ছে গন্ডারের সংখ্যা। জানা যায় এক সময় চিন ব্যাপক হারে গন্ডারের শিং ক্রয় করত। কিন্তু পরবর্তীকালে ১৯৯৩ সালে এই ব্যবসায় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি হলে তা মানতে শুরু করে চিন। বর্তমানে দেশটিতে ওষুধ তৈরিতেও শিংয়ের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। সংশ্লিষ্টরা জানান দারিদ্র্যের কারণে অনেক শিকারি এই শিংয়ের ব্যবহার করলেও কিছু শিকারি লোভে পড়ে এই ব্যবসা করেন এবং আইন অমান্য করেন। ফলে এক মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হয় এই প্রাণীরা। তারা জানান এভাবে গণ্ডার শিকার চলতে থাকলে পৃথিবীতে খুব অল্পদিনের মধ্যেই গন্ডার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

পরিসংখ্যানে জানা যায় বিংশ শতকের শুরুতে পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লক্ষ গন্ডার ছিল। বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার গন্ডারও অবশিষ্ট নেই। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানান গত এক শতকে গন্ডারের শিং আগের তুলনায় অনেক ছোট হয়ে এসেছে। অন্যায় ভাবে কন্যা শিকার করাকে তারা এর কারণ হিসেবে দায় করছেন। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি একসময় পার্বত্য এলাকাতেও পাওয়া যেত গন্ডার। তবে অনেক আগে বাংলাদেশ থেকে এই প্রজাতি হারিয়ে গেছে।