ব্রিটিশ ভারতের কতো তথ্য এখনও অজানা। ভারতীয় সেনাদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র পরীক্ষা করার ইতিহাস বহুকাল চাপা পড়েছিল কোনো গুপ্ত আস্থানায় (Rawalpindi Experiment)। ‘গার্ডিয়ান’ তা তুলে ধরেছিল সর্ব সমক্ষে। এরপর আরও লেখালেখি, গবেষণা। উঠে এসেছে ব্রিটিশদের পৈশাচিক কান্ডের কথা।
তদন্তমূলক রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে তা ভয়াবহ বললেও কম বলা হবে। রাওলপিন্ডিতে (এখনকার পাকিস্তানে) একটি পরীক্ষাগার স্থাপন করেছিল ব্রিটিশরা। সেখানে যে কী পরীক্ষা করা হত বাইরের লোকের পক্ষে তা জানা সম্ভব ছিল না। তবে যে শুভ কিছু ছিল না তা অনুমান করা দুঃসাধ্য ছিল না। ভারতীয় জওয়ানদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতো সেই পরীক্ষাগারে। তারপর একটা চেম্বারে।বাইরে থেকে দরজা বন্ধ। চেম্বারের ভিতরে চালান করা হতো রাসায়নিক। জওয়ানদের আসলে গিনিপিগ মনে করতেন ব্রিটেনের বিজ্ঞানীরা। ভারতের শ্রমিক, মজুরদেরও দেখতেন পরীক্ষাযোগ্য ‘বস্তু’ হিসেবে।
বন্ধ ঘরে চালান করে দেওয়া হতো কোনো ভারতীয়কে। মুখে বড়জোর একটা মাস্ক। পরনে হাফহাতা জামা আর হাফপ্যান্ট। যে গ্যাস চালান করা হতো বিজ্ঞানীদের কাছে ‘মাস্টার্ড গ্যাস’ নামে তা পরিচিত। গ্যাসের সংস্পর্শে আসার পর মানবদেহে কী প্রতিক্রিয়া দেখা যায় সেটা জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন বিজ্ঞানীরা। ফল হতো ভয়াবহ। ঘর থেকে বের করা আনার পর মানুষের শরীরে পাওয়া যেতে পোড়া পোড়া দাগ। রাসায়নিকের সংস্পর্শে এসে জ্বলে যাওয়ার মতো দাগ পড়ত চামড়ায়।
একবার এক সেপাহীর মাস্ক কোনো কারণে খুলে গিয়েছিল। চেম্বারের ততক্ষণে চালান করে দেওয়া হয়েছে রাসায়নিক অস্ত্র। ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল সেপাহীর মুখ, চোখ। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল তৎক্ষণাৎ। চেম্বারে একবার প্রবেশের পর কতোজনকে যে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে হয়েছিল তার হিসেবে পাওয়া এখনও সম্ভব হয়নি। এক সপ্তাহের বেশি ভর্তি থেকেছেন কেউ কেউ।
ভারতীয় জওয়ানরা যেতে চাইতেন তা সেই পরীক্ষাগারে। সাহেবরা নাছোড়বান্দা। শোনা যায় রীতিমতো নিয়ম করে দেওয়া হয়েছিল ব্রিটেনের পক্ষ থেকে- সেনায় থাকতে হলে যেতে হবে ওই চেম্বারে। পরে নিজেদের দেশের জওয়ানদের ওপরেই পরীক্ষা শুরু করা হয়েছিল। কোন দেশের মানব দেহে কতোটা প্রভাব পড়ছে বিজ্ঞানীরা সেটা দেখতে চাইলেন। আসলে জাপানের হামলার প্রস্তুতি তখন জোর কদমে। রাসায়নিক হামলার ছক কষেছেন ব্রিটিশ সেনার বড় বড় মাথারা। তারপরেই শুরু হয় ‘রাওলপিন্ডি এক্সপেরিমেন্ট’।