Rathayatra: রহস্যে মোড়া পুরীর রথের অজানা কিছু তথ্য

পুরীর রথযাত্রা (Rathayatra) উৎসব বিশ্ববিখ্যাত।  আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় রথযাত্রা । এই শুভ দিনটির জন্য বছরভর অপেক্ষায় থাকেন বিশ্বব্যাপী জগন্নাথ দেবের ভক্তকূল…

Rathayatra

পুরীর রথযাত্রা (Rathayatra) উৎসব বিশ্ববিখ্যাত।  আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় রথযাত্রা । এই শুভ দিনটির জন্য বছরভর অপেক্ষায় থাকেন বিশ্বব্যাপী জগন্নাথ দেবের ভক্তকূল এবং সমগ্র ওড়িশাবাসী। তাই ফি বছর রথযাত্রায় জগন্নাথ, সুভদ্রা এবং বলভদ্রকে চাক্ষুষ করতে লক্ষাধিক ভক্ত এসে ভিড় জমান পুরীতে। এদিন ভাই-বোনের সঙ্গে রথে চড়ে গুণ্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা করেন জগন্নাথ দেব। এই গুণ্ডিচা মন্দিরই তাঁদের মাসির বাড়ি। তবে রথযাত্রা উৎসব একদিনের নয়, কয়েক মাস আগে থেকেই চলে তোরজোড়। রয়েছে নানা রীতিওয়াজও। আজ জেনে নেওয়া যাক পুরীর রথযাত্রা নিয়ে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

  • রথযাত্রার জন্য পুরীর রথ তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় ২-৩ মাস। বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পুজোর দিন দশপাল্লার জঙ্গল থেকে কাঠ আনা হয়। এরপর অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে শুরু হয় রথ নির্মাণের কাজ।
  • পুরাণ মতে জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমায় স্নানযাত্রা উৎসব আয়োজিত হয়। ওই দিন ১০৮ কলসে স্নান করার পর সন্ধ্যাবেলা জগন্নাথ এবং বলভদ্রকে গণেশের রূপে সাজানোর জন্য, হাতির মুখ-বিশিষ্ট মস্তকাবরণী পরিয়ে। জগন্নাথের এই রূপটিকে বলা হয় ‘গজবেশ’। এই স্নানের পর জগন্নাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৪ দিন একান্তবাসে থাকেন। এই সময় রাজবদ্যির জড়িবুটিতে তাঁর চিকিৎসা চলে। ১৫ দিন পর তিনি সুস্থ হয়ে প্রকাশ্যে আসেন।
  • নিত্য বছর রথযাত্রার জন্য পুরনো রথ ভেঙে ফেলে নতুন করে ৩টি রথ নির্মান করা হয়। দু’শোরও বেশি সেবায়েত মিলে তৈরি করেন রথগুলো। জানলে অবাক হবেন, জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার রথ তৈরিতে কোনোরকম পেরেকের ব্যবহার হয় না।
  • পুরীর রথ নির্মান হয় বাছাই করা নিম কাঠ দিয়ে। যা আঞ্চলিকভাবে ‘দারু’ নামে পরিচিত। যা নির্বাচন করেন পুরীর মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমিতির সদস্যগণ।
  • রথযাত্রার উপলক্ষে ৩টি রথ নির্মিত হয়ে গেলে ‘ছর পহনরা’ অনুষ্ঠান পালিত হয়। ওই সময় সময় পুরীর রাজা পালকি চড়ে এসে নিয়মনিষ্ঠভাবে তিনটি রথের পুজো করেন। তারপর রাজা স্বয়ং মণ্ডপ এবং রথ চলার পত্র পরিষ্কার করেন সোনার ঝাঁটা দিয়ে।
  • তিনটি পৃথক রথে সওয়ার হন জগন্নাথ, সুভদ্রা এবং বলভদ্র। যার মধ্যে বলভদ্রের রথ থাকে সবার আগে। মাঝে থাকে সুভদ্রার রথ এবং শেষে জগন্নাথ দেবের।
  • জগন্নাথ, সুভদ্রা এবং বলভদ্রের রথের রয়েছে তিনটি ভিন্ন নাম। লাল-হলুদ রঙের জগন্নাথ দেবের রথের নাম নন্দীঘোষ বা গরুঢ়ধ্বজ। কালো অথবা নীল ও লাল রঙের সুভদ্রার রথের নাম পদ্মরথ বা দর্পদলন। আর লাল–সবুজ রঙের বলভদ্রের রথের নাম তালধ্বজ।
  • রথগুলো শুধু নাম এবং রঙেই নয়, উচ্চতার দিক থেকেও ভিন্ন। নন্দীঘোষের উচ্চতা ৪৫.৬ ফুট, দর্পদলনের উচ্চতা ৪৪.৬ ফুট এবং তালধ্বজের উচ্চতা ৪৫ ফুট।
  • পুরীর মন্দির থেকে রথযাত্রা শুরু হয়ে নগর ঘোরার পর গুন্ডিচা মন্দিরে (মাসির বাড়ি) গিয়ে রথ থামে। সেখানে এখানে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা ৯ দিন বিশ্রাম করেন। গুন্ডিচা মন্দিরে থাকাকালীন জগন্নাথ দর্শন ‘আড়প দর্শন’ নামে পরিচিত।
  • পুরাণ মতে এই গুন্ডিচা মন্দির বা জগন্নাথের মাসির বাড়িতেই বিশ্বকর্মা জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার প্রতিমা নির্মাণ করেছিলেন।
  • শুক্লা একাদশীর দিন পূর্ণযাত্রা (উল্টোরথ)অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন মাসির বাড়ি থেকে ৩টি রথ পুরীর মন্দিরের উদ্দেশে রওনা দেয়।