মৈতৈ উপজাতির মীরাবাঈ কৃষ্ণপ্রেমিক, দুরন্ত ঘোড়সওয়ার সেনার উত্তরসূরী

বিশেষ প্রতিবেদন: যুদ্ধ ও প্রেমে মিথ্যে বলা যায়। মিথ্যে নয়, বরং রোমাঞ্চকর সত্যি কথা এটি। টোকিও অলিম্পিকে ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় রূপো জয়ী সোইখম মীরাবাঈ চানুর রক্তে প্রেম…

Origin of Olympic silver medalist meitei community mrmber mirabai chanu

বিশেষ প্রতিবেদন: যুদ্ধ ও প্রেমে মিথ্যে বলা যায়। মিথ্যে নয়, বরং রোমাঞ্চকর সত্যি কথা এটি। টোকিও অলিম্পিকে ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় রূপো জয়ী সোইখম মীরাবাঈ চানুর রক্তে প্রেম ও যুদ্ধের ঘনঘটা মিশে রয়েছে। এতে জড়িয়ে আছে মৈতৈ জাতির ইতিহাস, সংঘর্ষ, প্রেম ও কূটচাল।

লিখিত ইতিহাস কম করেও দু’হাজার বছরের। তার থেকেও প্রাচীন বহুশ্রুত কথা। এই বর্নিল অধ্যায়ে জড়িয়ে আছে মৈতৈ উপজাতিদের জীবন। এদের ব্যাপ্তি মায়ানমার থেকে পুরো উত্তর পূর্ব ভারত জুড়ে, কিছুটা বাংলাদেশের পাহাড়ি জনজীবনে।

মীরাবাঈ। তিনি রাজস্থানের রাজপুতানি ঐতিহাসিক চরিত্র। তাঁর কৃষ্ণ অনুরাগে রাধা পর্যন্ত বেসামাল হন। যুগ যুগ ধরে মীরা নামটি শ্রীকৃষ্ণ অনুরক্তদের মধ্যে ছড়িয়ে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের মনিপুর নরম কৃষ্ণপ্রেমে মগ্ন। তবে ভয়ঙ্কর হতেও দেরি করেনা। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগুরু জনসংখ্যার মনিপুরিদের সবথেকে বড় অংশ মৈতৈ জাতি। প্রাচীন ব্রহ্মদেশ বর্তমান মায়ানমার থেকে সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চল দুনিয়ায় মৈতৈ জাতির প্রভাব কম নয়।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

Mirabai Chanu-Manipur

একাধারে কৃষ্ণপ্রেমে কাতর মৈতৈরা। রসকলি আর পান টুসটুসে মুখ, কীর্তন-খোলের ঝংকার তাদের মন শান্ত করে। সময় বুঝে তলোয়ার ঝলসে ওঠে হাতে। ছোটে ঘোড়া বাহিনি। শত্রুর মাথা কেটে নিতে হাত কাঁপেনা এতটুকু। পৌরাণিক আখ্যানে শ্রীকৃষ্ণের কূটনৈতিক ছলাকলার যে বিস্তর উদাহরণ রয়েছে তাতেও পটু মৈতৈ বা সংখ্যাগুরু মনিপুরি।

মৈতৈ সংস্কৃতি, ভাষা, সামাজিক কাঠামো মনিপুরি জাতির মূল আধার মেনে নিয়েছেন গবেষকরা। যুদ্ধের ঝনঝনানি মনিপুর কম দেখেনি। যুদ্ধ কম করেনি। মহাভারতের বর্ণনায় অর্জুনকে পরাজিত হতে হয়েছিল এই মনিপুরেই। জয়ী হন রাজকুমারী কৃষ্ণপ্রেমিক চিত্রাঙ্গদা। তিনিও অর্জুনের স্ত্রী।

পুরাণ যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে অন্তত দু হাজার বছর আগের ইতিহাস ঘেঁটে গবেষকদের বের করা তথ্যগুলো চরম বিশ্বাসযোগ্য। তারা বলছেন, রাজার হয়ে যুদ্ধ, রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লডাই, ষড়যন্ত্র সবেতেই সমান ভূমিকা নিয়েছে মৈতৈরা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই ভূমিকা ধরে রেখেছে মৈতৈ জাতি। তলোয়ার, তীর বারবার শত্রুর রক্তে সুখানুভূতি লাভ করেছে।

একেবারে বিংশ শতাব্দী থেকে হাল আমলের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হোক বা ১৯৭১ সালের ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই, বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র পথ নেওয়া তলোয়ার ছেড়ে রাইফেল, এ কে ৪৭ নিতেও খামতি নেই মৈতৈদের। উত্তরপূর্ব ভারতে যতগুলি ভয়াবহ নাশকতা ঘটনো হয়েছে তার মধ্যে মনিপুরের মাটিতে সেনা কনভয়ে হামলায় দেশ নড়ে গিয়েছে বারবার।

রক্তের নেশা ও কৃষ্ণপ্রেম মৈতৈ জাতির সঙ্গে জড়িয়ে। কখনও তলোয়ার তো কখনও আগ্নেয়াস্ত্র এই জাতির দুরন্ত ভয়াল মাপকাঠি। বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসে বারবার রক্তাক্ত মনিপুরি তথা মৈতৈ জাতির মীরাবাঈ চানু জন্মের পর থেকেই সেনা ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংঘর্ষের সাক্ষী। তেমনই সাক্ষী বিতর্কিত আফস্পা আইনেরও।