বিশেষ প্রতিবেদন: উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা ভয়ঙ্কর নাগাল্যান্ডের এনএসসিএন (খাপলাং) গোষ্ঠী। এদের হামলায় বারবার রক্তাক্ত হয়েছে উত্তর পূর্ব ভারত। নাগা জঙ্গিদের মতো ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা বা NLFT গোষ্ঠীর সদস্যদের গলায় ক্রুশবিদ্ধ যীশুর লকেট ঝোলে। যিনি বিশ্বশান্তির চিরন্তন যুগপুরুষ।
মঙ্গলবার দীর্ঘ কয়েক দশক পর ফের ত্রিপুরায় গর্জে উঠেছে ‘স্বাধীন ত্রিপুরা’ দাবিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র পথ নেওয়া এনএলএফটির আগ্নেয়াস্ত্র। সংগঠনটির নব্বই শতাংশ সদস্য উপজাতি ও খ্রিষ্টান। এমনই জানাচ্ছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোকে নিয়ে তথ্য পরিবেশনকারী সংস্থা সাউথ এশিয়ান টেরোরিজম পোর্টাল। এই গবেষণা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা কে পি এস গিল।
মঙ্গলবার ফের ত্রিপুরার মাটিতে ফের শোনা গেল এনএলএফটি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বন্দুক গর্জন। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়ি জেলার লাগোয়া ত্রিপুরান ধলাই জেলার সীমান্তে এনএলএফটি জঙ্গিদের সঙ্গে টহলদারি করা বিএসএফ জওয়ানদের গুলি বিনিময় হয়। জঙ্গিদের গুলিতে দুই জওয়ানের মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই।
বাংলাদেশ সীমান্তের একেবারে গা ঘেঁষে দুই জওয়ানের রক্তাক্ত দেহের ছবি প্রকাশ করেছে ত্রিপুরার সংবাদমাধ্যম। বিএসএফ জানিয়েছে জঙ্গি হামলায় দুই জওয়ান এসআই ভুরু সিং এবং কনস্টেবল রাজ কুমার গুলিবিদ্ধ ঘটনাস্থলেই মারা যান। এই ঘটনার কেন্দ্র ধলাই জেলার ছামনু থানার অধীন বিএসএফ-এর ৬৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের আরসি নাথ বিওপি।
হামলাকারীরা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএলএফটি গত বিধানসভা ভোটে বাম জমানার পতনের পর ফের সক্রিয়। যদিও ত্রিপুরার অপর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এটিটিএফ এখনও নিষ্ক্রিয়। ১৯৮৯ সালে জন্ম নেওয়া এনএলএফটি সংগঠনটির বেশকিছু সদস্য ধরা পড়েছে। তাদের জেরা করেই জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের জমিতে গোপন ঘাঁটির কথা।
এক নজরে ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদ:
রাজন্য ত্রিপুরা অর্থাত ব্রিটিশ করদ রাজ্য ত্রিপুরার ভারত অন্তর্ভুক্তি হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। আর ১৯৭২ সালে ত্রিপুরা পৃথক রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৭২ সালে। এর পর থেকে ত্রিপুরার আদি বসবাসকারী উপজাতিদের মধ্যে আত্মসংকট বড় করে দেখা দেয়। শুরু হয় উপজাতি বনাম বাঙালি বিবাদ। উপজাতি আবেগ পুঁজি করে তৈরি হয় বিভিন্ন সংগঠন টিএনভি। যার দুই উত্তরসূরী এনএলএফটি ও এটিটিএফ।
তাৎপর্যপূর্ণ, দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন সশস্ত্র পথে ‘স্বাধীন ত্রিপুরা’ গঠনের ডাক দিয়ে সরকার ও বাঙালি বিদ্বেষী আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছিল। আবার দুই সংগঠন পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলাও চালিয়েছে বারবারে। উপজাতি ভাবাবেগের রক্তাক্ত এই সময়ে ত্রিপুরায় ঘটে যায় গণহত্যার কয়েকটা ঘটনা।
অশান্ত সেই ত্রিপুরায় শান্ত পরিস্থিতি কায়েম হয় সে রাজ্যে দ্বিতীয় দফার বামফ্রন্ট শাসনে। মুখ্যমন্ত্রী দশরথ দেব ও মানিক সরকারের টানা ২৫ বছরের কড়া প্রশাসন উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদ কে ঠাণ্ডা করেছিল।
তবে গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম জমানার পতনের পর থেকে ফের সক্রিয় হয়েছে এনএলএফটি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ রুখতে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছেন। বিশেষ সতর্ক থাকে দেশটির সীমান্তরক্ষী বিজিবি। তবে গোপনে ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি ফের সক্রিয় বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির দুর্গম বনাঞ্চলে। সীমান্তের কাছে তাদের হামলা এরই প্রমাণ।