এই তিমির চারটি পা! শক্তিতে বাঘ-সিংহ-অজগর-গণ্ডার নেহাতই বাচ্চা

বর্তমানে সমুদ্রের সর্ব বৃহৎ বাসিন্দা হিসেবে যে তিমির রাজত্ব, সেই তিমিরই পূর্বসরী ছিল চারপেয়ে এক প্রাণী। জানা যায় তিমিরই এক নতুন প্রজাতি জীবাস্ম আবিষ্কার করেছেন…

বর্তমানে সমুদ্রের সর্ব বৃহৎ বাসিন্দা হিসেবে যে তিমির রাজত্ব, সেই তিমিরই পূর্বসরী ছিল চারপেয়ে এক প্রাণী। জানা যায় তিমিরই এক নতুন প্রজাতি জীবাস্ম আবিষ্কার করেছেন মিশরের বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৪ কোটি ৩০ লক্ষ বছর আগে সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ানো এই প্রাচীন প্রাণীটির পা ছিল ৪ টি। সাহারা মরুভূমির মিশরের অংশে আবিষ্কৃত হয়েছে এই উভচর তিমির জীবাস্ম।

প্রাগৈতিহাসিককালে সে অঞ্চলে গভীর সাগর ছিল বলেও শোনা যায়। অঞ্চলটি আগে থেকেই আরবি ভাষায় ওয়াদি-আল-হিতা নামে পরিচিত যার বাংলা করলে দাঁড়ায় তিমির উপত্যকা। জনপ্রিয় এই পর্যটনকেন্দ্র মিশরের একমাত্র প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য।

   

২০০৮ সালে ওয়েস্টার্ন ডেজার্টের মাটি খুঁড়ে পাওয়া চারপেয়ে তিমির জীবাস্মটি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করছেন মিশরীয় পরিবেশবিদরা। শেষ পর্যন্ত জীবাস্মটি কোন প্রাণীর সে বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য ও গবেষণার ফল একটি প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছেন গবেষকরা। বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি-তে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় নতুন আবিষ্ককৃত চারপেয়ে তিমি প্রোসিডিটস পরিবারের। বর্তমানে সমুদ্রের সর্ব বৃহৎ বাসিন্দা হিসেবে যে তিমির রাজত্ব সেই তিমিরই পূর্বসরী ছিল চারপেয়ে এই প্রাণী।

কালের বিবর্তনে তিমির এখন পা নেই। তবে চারপেয়ে বিলুপ্ত আধা-জলজ এই তিমি দীর্ঘক্ষণ ডাঙায় হাঁটতে পারত এবং জলেও শিকার করত। এটি পুরোপুরি শিকারী প্রাণী ছিল বলেও জানা গেছে। প্রাণীটির দেহাবশেষ বৈশিষ্ট থেকেই এমন সব প্রমাণ মিলেছে। এছাড়াও প্রাণীটির চোয়াল এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এর একেকটি কামড় প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখত। তাই প্রাচীন মিশরের পূরাণে উল্লেখিত মিশরীয় দেবতা আনুবিসের নামে তিমির জীবাস্মটির নাম রাখা হয় ফিউমিসেটাস আনুবিস।

বিশাল দেহের এই চার পা তিমি লম্বায় ছিল প্রায় ৯ ফুট এবং ওজন ছিল প্রায় ৬০০ কেজির মত। ফিউমিসেটাস আনুবিসের দীর্ঘ খুলি ও নাক দেখে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন প্রাণীটি তীক্ষ্ণ ঘ্রাণ ও শ্রবণ শক্তির অধিকারী ছিল। এমনকী শিকারকে আকড়ে ধরে চিবিয়ে খাওয়ার ক্ষমতাও ছিল তার। মরুভূমিতে খুঁজে পাওয়া এই জীবাস্ম তিমির বিবর্তন নিয়ে গবেষণার নতুন পথ খুলে দিয়েছে। প্রায় এক কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে তিমিদের এই বিবর্তন ঘটেছে বলে ধারণা করেন গবেষকেরা। কিন্তু আধা-জলজ তৃণভূজি স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে চারপেয়ে তিমি কীভাবে এখানকার মাংসাসী এবং সমুদ্রের স্থায়ী বাসিন্দায় পরিণত হল সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সীদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি গবেষকরা।

তবে নিউ ইয়র্ক ইনস্টিটিউট অফ টেকনলোজির স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিবর্তনের ইতিহাসে বিসেষজ্ঞ জনাথন গিস্লার বলেন মিশরের যে এলাকায় যে জীবাস্মটি পাওয়া গেছে সেখান থেকে এসব বিষয়ে সঠিক ধারণা পাওয়া সম্ভব। মিশরের যে অঞ্চলে তিমির দেহাবশেষ পাওয়া গেছে সেখানে প্রাগৈতিহাসিক আরেকটি তিমির জীবাস্ম রয়েছে। তবে চারপেয়ে তিমি দিয়েই মিশরের ইতিহাসে প্রথম কোন মেরুদণ্ডী প্রাণীর জীবাস্নু বিশ্লেষণের শুরু হয়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত জীবাস্মটি নিয়ে কোন রকম পরীক্ষা-নীরিক্ষা না হলেও দেশের বিজ্ঞানীদের নিয়ে পরবর্তীতে জীবাস্নু নিয়ে ব্যপক গবেষণা হয়েছে। বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত তিমির জীবাস্ম আবিষ্কার হয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন জীবাস্ম প্রায় পাঁচ কোটি বছরের পুরনো। পাকিস্তান ও ভারতের কোন এলাকায় সেটি জন্মেছিল বলে ধারনা করা হয়।