বাস্তবেই রয়েছে হীরের শহর ! অবাক বিশ্ব

এমন এক শহর যেখানে পড়ে রয়েছে হাজারো হীরা।সেই শহরের বাড়ীর দেওয়াল থেকে শুরু করে সিঁড়ি সবকিছুতেই ছড়িয়ে রয়েছে মহা মূল্যবান হীরা। রূপকথা নয়, বাস্তবে এই…

এমন এক শহর যেখানে পড়ে রয়েছে হাজারো হীরা।সেই শহরের বাড়ীর দেওয়াল থেকে শুরু করে সিঁড়ি সবকিছুতেই ছড়িয়ে রয়েছে মহা মূল্যবান হীরা। রূপকথা নয়, বাস্তবে এই পৃথিবীতে আছে এই‌ শহরের অস্তিত্ব। জার্মানের ব্যাভারিয়ায় অবস্থিত প্রাচীন এই নর্দালিনগেন শহরে এই হীরার দেশ। ওই অঞ্চলের স্থাপত্য রীতি মেনে বানানো সেখানকার গির্জার সিঁড়িতে সূর্যরশ্মি পড়লে ঝলমল করে ওঠে। অন্যান্য স্থাপত্যগুলোতে দেওয়াল ও সিঁড়িতে হীরা খচিত।

ধারণা করা হয় ১৪২৭ থেকে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে এই গির্জাটি বানানো হয়েছে। এত পুরোনো‌ গির্জার সিঁড়ি বাদামী ধারণ না করে জ্বলজ্বল করছে। এর কারণ‌ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, পুরো টাওয়ারটি তৈরি সোভাইড পাথর দিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর হীরে। হীরাগুলো ছোটো না হলে কবেই ভেঙে ফেলা হত গির্জা। কথাটি মিথ্যা নয়। ইতিহাস অনুযায়ী, শহরটি তৈরীর সময়, সেখানকার স্থানীয় লোক জানত না যে পাথর দিয়ে ওরা বাড়ি তৈরি করছে তার মধ্যে রয়েছে অনেক হীরা। প্রায় দেড় কোটি বছর আগে নর্দালিনগনে আছড়ে পড়েছিল ১ কিমি প্রশস্তের গ্রহাণু। ২৫ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানা‌ গ্রহাণু ২৬ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে গর্তের সৃষ্টি করে। আঘাতের চাপে ও তাপে কার্বণ রূপান্তরিত হয় ভীষণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হীরকে‌। যা মরিচ গুড়োর মতো মিশে আছে সোভাইড পাথরের মধ্যে। হীরা এতই ছোটো, মাপ মাত্র ০.২ মিলিমিটারের কম। খালি চোখে দেখা যায়না।

গ্রহাণুর শেষ সোভাইড পাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে শহরের অনেক বাড়ি। হীরার বাড়ি, হীরার শহর পৃথিবীর আর কোথাও এরকম নেই। সেখানকার এক বাসিন্দা বলেছেন, শহরের মধ্যে যা কিছু দেখবেন সব ওই গ্রহাণুর থেকে সোভাইড পাথরের তৈরি। পঞ্চাশ বছর আগে বাসিন্দারা মনে করত, শহরটি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের ওপর তৈরি করা। ষাট দশকে যুক্তরাষ্ট্রের দুই ভূতত্ত্ববিদ তাদের ভুল ভাঙায়, ইউজিন শুমেকার ও এডওয়ার্ড সিটিচার।এই দুই ভূতত্ত্ববিদ প্রমাণ করেছিলেন শহরটি তৈরি একটি গ্রহাণুর মতো। ওই শহরে প্রায় ৭২ হাজার টন হীরা রয়েছে বলে জানা যায়। সব সোভাইড পাথরে মিশ্রিত।

সোভাইড পাথর পৃথিবীর আরো বেশ কিছু জায়গায় মিলেছে। গ্রহাণুর আছড়ে পড়ার ফলে। তবে সেখানে সোভাইড পাথরে হীরের মিশ্রণ এত বেশি পরিমাণে না। শহরের পরতে পরতে হীরা থাকলেও সেখানকার মানুষদের তা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রতিদিন পর্যটক, মহাকাশচারী, ভূতত্ত্ববিদদের ভিড় দেখে তারা‌ অবাক হয়।