পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গাই রয়েছে যা আজও আমাদের অজানা। ধরুণ আপনি কখনও জানতে পারলেন যে এই পৃথিবীতে এমন একটি জায়গা আছে যেখানকার মানুষ খাওয়াদাওয়া করে মায়ানমারে আর ঘুমোতে যায় ভারতে। আপনি এটাকে আষাঢ়ে গল্প ভাবতে পারেন কিংবা হয়তো ভাবছেন এমনটা আবার হয় নাকি? কিন্তু মশাই, আপনি জানলে অবাক হবেন যে এই পৃথিবীতে এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানকার মানুষ ভারত ও মায়ানমার দুটো জায়গাতেই একসঙ্গে থাকতে পারেন। ভাবছেন তো কীভাবে? তাহলে শুনুন।
এই আজব গ্রামের ঠিকানা অন্য কোথাও নয়, বরং ভারতেই। এই গ্রামের মাঝ দিয়ে চলে গেছে ভারত ও মায়ানমারের সীমান্তরেখা। অর্থাৎ এই গ্রামের একদিকটা মায়ানমার আর অন্যদিকটা ভারত। এমনিতেই সবুজ পাহাড়, কুয়াশা ও মেঘের সৌন্দর্য্যে মোড়া নাগাল্যান্ড। সেখানকার সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি আদিবাসীদের সভ্যতা-সংস্কৃতিও নাগাল্যান্ডের মূল আকর্ষণ। সেই নাগাল্যান্ডেই একটি সুন্দর জেলা হল মোন। মোন-এ বসবাস করেন আদিবাসী কোনিয়াকরা। সেই মোনের একটি গ্রাম হল লংওয়া (Nagaland Longwa Village)।
আপনি জানলে অবাক হবেন এই গ্রামের গ্রামপ্রধানের বাড়িটা এমন জায়গায় রয়েছে যার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে এই দুই দেশের সীমান্ত। ফলে দুই দেশেরই নাগরিকত্ব ভোগ করেন সেখানকার গ্রামপ্রধান। তাই দুই দেশে যেতে তাঁর কোনও ভিসাও লাগে না। এই গ্রামপ্রধানের বাড়িতে রান্নাবান্না ও খাওয়া দাওয়া হয় মায়ানমারের দিকে। সেইদিকের ক্ষেত্রেই হয় তাজা শাকসব্জি। আর অন্যদিকে অর্থাৎ ভারতের দিকে রয়েছে ঘুমোনোর ব্যবস্থা। এইদিকে বিছানাপত্র থেকে শুরু করে ঘরের সবকিছুই রয়েছে ভারতের দিকে।
এমনকি বৈঠকখানাও রয়েছে সেই দিকে। এই গ্রামের কোনিয়াকরা দুর্ধর্ষ মুণ্ডু শিকারি। যদিও এখন ব্রিটিশ মিশনারী আর সেনাবাহিনীর কড়া আইনের চাপে মুণ্ডু শিকারের প্রথা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এখনও কোনিয়াকদের ঘরগুলোতে গেলে দেখা যাবে পিতলের খুলির মালা। কারণ একসময় কোনিয়াকরা বিশ্বাস করতেন যুদ্ধে যে গোষ্ঠী জিতবে তারা শত্রুপক্ষের মুণ্ডু কেটে বিজয়ের প্রতীক হিসেবে নিজেদের কাছে রেখে দেবেন। গ্রামবাসীদের কথায়, মুণ্ডু কেটে নেওয়াটাকে তারা জাতির বীরত্বের নিদর্শন হিসেবে মনে করেন।
যদিও এখন আর এমন কাজ হয় না। কিন্তু কীভাবে এই গ্রাম ভারত ও মায়ানমারের মাঝখানে পড়ল? শোনা যায়, ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে সেই গ্রামেই ভারত-মায়ানমারের মধ্যে সীমান্ত টানা হয়েছিল। আর তাই ওই গ্রামের অর্ধেকটা রয়েছে ভারতে, আর বাকিটা রয়েছে মায়ানমারে। যদিও লংওয়া গ্রামের লোকজন একই সঙ্গে মায়ানমার ও ভারত দুই দেশেই বাস করেন। এমনকি তাঁরা অনুমতি না নিয়েও দুই দেশে অবাধ যাতায়াত করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভারত ও মায়ানমার দুই দেশেরই কোনও আপত্তি নেই।