বিশেষ প্রতিবেদন: তিনি বাংলার ম্যানগ্রোভ ম্যান (Mangrove man)। পরিবেশবিদরা বলছেন পরিবেশ বাঁচাতে ম্যানগ্রোভ রোপন করতে। একার চেষ্টায় তা করে যাচ্ছেন বছর বিয়াল্লিশের গোসাবার বাসিন্দা উমাশঙ্কর মন্ডল ওরফে ম্যানগ্রোভ ম্যান। এবার তিনি পুজোয় এক দারুণ উদ্যোগ নিয়েছেন। যে গ্রামবাসীরা ম্যানগ্রোভ বাঁচাতে লড়াই করছেন তাঁদের পুজোর স্পেশ্যাল গিফট দেবেন তিনি।
অনেকটা ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব ‘, এমন শোনাল কী? উমাচরণ বাঁচার স্বাধীনতা দেবেন। তাঁর কথায়, ‘যারা সারাবছর সুন্দরবন বাঁচানোর লড়াই করেন, আপনার আমার অক্সিজেনের যোগান দেওয়ার কাজ করে থাকে, পূজোয় কিছু উপহার দেওয়ার চিন্তাভাবনা তাদের জন্য।’ ম্যানগ্রোভ ম্যান’ উমাশঙ্কর মণ্ডল মনে করেন, সুন্দরবনের স্বার্থে আরও বেশি করে ম্যানগ্রোভ চারা লাগাতে হবে। আর পরিচর্যাও করতে হবে। ম্যানগ্রোভ চারা লাগানো আর পরিচর্যার উৎসাহ দিতেই পুজোর আগে গ্রামবাসীদের নতুন পোশাক বিতরণের ভাবনা। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে এই কাজের আর্থিক তহবিল গড়ার কাজ করছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, “বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা স্বত্বেও আমরা মেতে উঠব উৎসবের আনন্দে, সমস্ত ভয় ভীতি আতঙ্ক জয় করে। জীবনের, বেঁচে থাকার, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে মানুষের সাথে নিজেকে এক করে জীবন উপভোগ করার নামই হলো উৎসব। সামনেই বাঙালির অন্যতম বড় উৎসব দুর্গাপূজা।
প্রান্তিক মানুষের কাছে উৎসব এখন বাড়তি বোঝা। তাই আমরা ঠিক করেছি সুন্দরবনের একেবারেই প্রান্তিক এলাকার ২ থেকে ১০ বছরের বাচ্চাদের হাতে নতুন জামা উপহার। যাতে তাঁরাও উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়।পাশাপাশি বাঘের দ্বারা আক্রান্ত পরিবার ও একেবারেই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ৩৫০ জন মায়েদের একটি ছাপা শাড়ী দিয়ে সাহায্য করা। বিভিন্নভাবে বির্পযস্ত হয়ে যাওয়া মানসিক স্বাস্থ্যর কিছু উন্নতি ঘটানো। “
একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আপনার নিজের পরিবারের পাশাপাশি বৃহৎ পরিবারের কথা ভেবে সাধ্যমত সামান্য সাহায্যের আবেদন নিয়ে হাত পেতে দাঁড়ালাম। উৎসবের দিনগুলিতে সুন্দরবনের সেই বাচ্চাটার গায়ের নতুন জামায় আপনার ভালবাসায় ছোঁয়া থাকুক, সেই প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুটির সারা গায়ে ভালবাসা হয়ে জড়িয়ে থাকুন উৎসবের কটা দিন। একটু চোখ বন্ধ করে ভাবুন উৎসবের দিনে একঝাঁক ফুলের মত শিশুর আনন্দ উচ্ছ্বাসে জড়িয়ে আছেন আপনি; নিজের হৃদয় নিজের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে।”
প্রাথমিক ভাবে ৪০০ শিশুর মুখে হাসি ফোটানর লক্ষ্যমাত্রা তাঁর। ৫০টি মেয়েদের কুর্তি ও ৩৫০ মায়ের হৃদয়ের টুকরোর উৎসবে মেতে ওঠার আনন্দ।বর্তমান সময়ে সকলের অর্থনৈতিক সঙ্কট। তবু সাহস করে এই কাজে নেমেছেন তিনি। তাঁরমূল লক্ষ্য, ১) দশ হাজার ম্যানগ্রোভ রোপন (২) চারশ শিশুকে জামা দেওয়া। (৩) তিনশ পঞ্চাশ জন মায়েদের ছাপা সূতির শাড়ী। (৪) কুড়ি জন মেয়েকে কুর্তি। (৫) পচিঁশ জন ছেলেদের গেঞ্জি দেওয়া।(৬) দুশজন বাচ্চা ও মায়ের দুপুরের খাওয়ার ব্যাবস্হা। এরা সকলে ম্যানগ্রোভ রোপন ও পরিচর্যার সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।