গোবর থেকে পরিবেশ-বান্ধব পণ্য তৈরি করে নজির গড়েছে জাগৃতি

অনলাইন ডেস্ক: সুস্থ-সবল জীবনযাপনের লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব (eco-friendly)পণ্য তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ যে সমস্ত পণ্য প্রকৃতির ক্ষতি করে না। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবেন এমন অনেক পণ্য…

eco-friendly products from dung

অনলাইন ডেস্ক: সুস্থ-সবল জীবনযাপনের লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব (eco-friendly)পণ্য তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ যে সমস্ত পণ্য প্রকৃতির ক্ষতি করে না। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবেন এমন অনেক পণ্য ব্যবহার করি, যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে। সে আমাদের ঘরের আবর্জনা হোক বা কোভিড থেকে রক্ষা পাওয়ায় ব্যবহৃত মাস্ক। এই সবকে কি পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা যাবে? যে হারে আমরা কাগজ এবং তার থেকে তৈরি অন্যান্য পণ্যের জন্য আমাদের প্রয়োজনে গাছ কাটছি, এটা কি ঠিক? এর কি কোন বিকল্প নেই?

প্রায় সবাই এই সব সমস্যা নিয়ে চিন্তা করে৷ কিন্তু আমরা কি এর সমাধানের জন্য কিছু করছি? তবে কেউ কেউ এমন বিষয় নিয়ে ভাবে৷ যেমন জয়পুরের বাসিন্দা ভীম রাজ শর্মা এবং তাঁর মেয়ে৷ পরিবেশগত সমস্যার কথা মাথায় রেখে তারা একটি উদ্ভাবন করেছেন। তিনি গত পাঁচ বছর ধরে কাগজ এবং অন্যান্য স্টেশনারি তৈরিতে গোবর ও তুলার বর্জ্য ব্যবহার করছেন। তারা এই কাজটি গো-পালনকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে পরিবেশবান্ধব পণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে শুরু করেছিলেন।

একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে ভীম রাজ বলেন, “আমরা প্রথমে কাগজ তৈরির পরীক্ষা করেছিলাম৷ আজ আমরা প্রায় ৭০ রকমের পণ্য তৈরি করছি। আমরা গোয়ালাদের কাছ থেকে গোবর কিনে থাকি৷ এতে তারাও স্বাবলম্বী হতে পারে।

ভীম রাজ গত ২০ বছর ধরে একটি ছাপাখানা পরিচালনা করছেন। আসলে তিনি সবসময় গরুর সেবার জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন। তিনি গোবর এবং গোমূত্রের যথাযথ ব্যবহারের জন্য পঞ্চগব্যের একটি কোর্সও করেছিলেন। যেখানে তিনি জানতে পেরেছিলেন কীভাবে গোবর এবং গোমূত্র মানুষের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তিনি এমন কিছু করতে চেয়েছিলেন, যা আরও বেশি মানুষ গ্রহণ করতে পারে।

eco-friendly products from dung

তারপর তাঁর মেয়ে জাগৃতি শর্মা তাঁকে ধারণা দিল যে, কেন কাগজ তৈরিতে গোবর ব্যবহার করা যাবে না৷ জাগৃতি অনেক জায়গায় পড়েছিল যে মানুষ হাতির গোবর থেকে কাগজ তৈরি করছে। তখনই তিনি ভাবলেন কেন গরুর গোবরও এভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে৷

তার মেয়ের কাছ থেকে ধারণা এবং অনুপ্রেরণা নিয়ে তিনি কাগজ তৈরি শুরু করেন। এই কাজে তিনি তাঁর এক বন্ধুর সাহায্য নেন৷ যিনি হ্যাম্ডমেড কাগজ তৈরি করতেন। গোবর থেকে তৈরি এই কাগজটি সম্পূর্ণ ম্যানুয়ালি তৈরি করা হয়।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম পরীক্ষা সফল হয়েছিল৷ এখন এই পরিবেশবান্ধব কাগজে ডিজিটাল প্রিন্টিং করা যায়৷ তারপরে আমরা ধীরে ধীরে অনেক নতুন পণ্য তৈরি করতে শুরু করি৷ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আমরা আমাদের পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা শুরু করি গৌকৃতি নামে।

এই কাগজ তৈরিতে কোন জল ব্যবহার করা হয় না। এতে গোবর, তুলার বর্জ্য এবং গোমূত্র ব্যবহার করা হয়। প্রথম প্রক্রিয়াকরণ করা হয় গোবর এবং তুলার বর্জ্য মিশিয়ে৷ যা সূক্ষ্ম তরল উৎপন্ন করে। এই তরলটি বিভিন্ন ফ্রেমে ফেলে সেট করা হয়৷ এভাবে তৈরি শিটটি প্রায় এক দিনের জন্য শুকানো হয়।

তিনি একইভাবে সাদা এবং রঙিন কাগজ প্রস্তুত করেন। কাগজকে রঙিন করতে প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, হলুদ রঙের কাগজের জন্য আমরা হলুদ ব্যবহার করি৷ যার কারণে এই কাগজগুলি আঘাতের ক্ষেত্রে ব্যান্ডেজ হিসাবেও কাজ করে। যেহেতু এতে হলুদ এবং গোবর রয়েছে, তাই এটি ক্ষত সারাতে ব্যবহৃত হয়।

জাগৃতি এবং তাঁর বাবা গত পাঁচ বছরে অনেক পরীক্ষা -নিরীক্ষা করেছেন। জাগৃতি বলে, “আমরা সেই কাগজগুলিতে বীজ রেখে দেই৷ ব্যাগ বা ফোল্ডার ইত্যাদির মতো ব্যবহার করার পর যদি আপনি এটি ফেলে দেন, তাহলে সেখান থেকে একটি গাছ জন্মাবে। সম্প্রতি গোকৃতি পরিবেশ বান্ধব বীজ রাখি তৈরি করেছে৷ যা অনেক পছন্দ করেছে।

গত বছর করোনার সময় তিনি গোবর থেকে মাস্কও তৈরি করেছিলেন৷ যা তিনি পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বিনামূল্যে বিলি করেছিলেন। গোবর থেকে তৈরি হওয়ায় এটি সহজেই মাটিতে দ্রবীভূত হয় এবং পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না। একইভাবে গোবর ব্যবহার করে তিনি ফাইল, ফোল্ডার, কপি, বই, পেন্সিল, ব্যাগসহ ৭০ রকমের পণ্য তৈরি করছেন।

<

p style=”text-align: justify;”>তিনি ২০১৮ সালে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত জৈব উৎসবে তাঁর পণ্য নিয়ে অংশ নিয়েছিলেন। এছাডা়ও তিনি বেঙ্গালুরুতে ওয়েলনেস অ্যান্ড অর্গানিক এক্সপো, চেন্নাইয়ে ইন্ডিয়া জৈব মেলাসহ আরও অনেক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। তিনি এমন সব রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে চলেছেন যাতে আরও বেশি মানুষ এই ধরনের পরিবেশবান্ধব পণ্য সম্পর্কে জানতে পারে। জাগৃতির পণ্য অ্যামাজন এবং ফ্লিপকার্টেও পাওয়া যায়৷