শান্তিনিকেতনের অঙ্কের শিক্ষককে সমীহ করে চলতেন বিশ্বকবি

বিশেষ প্রতিবেদন: ১৯০৮ সালে শান্তিনিকেতনে নাটক মঞ্চস্থ হবে। নাম “শারদোৎসব”। লেখক রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। ছাত্র, শিক্ষক সবাই নাটকে অভিনয় করছেন। কবিগুরু নিজেও আছেন। তিনি রাজসন্ন্যাসী, ছদ্মবেশী…

Jagadananda roy the teacher who wrote first science book in bengali

বিশেষ প্রতিবেদন: ১৯০৮ সালে শান্তিনিকেতনে নাটক মঞ্চস্থ হবে। নাম “শারদোৎসব”। লেখক রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। ছাত্র, শিক্ষক সবাই নাটকে অভিনয় করছেন। কবিগুরু নিজেও আছেন। তিনি রাজসন্ন্যাসী, ছদ্মবেশী সম্রাট বিজয়াদিত্য। মহড়া চলছে। একজন এসব থেকে বহুদূরে। তিনি ব্যস্ত এক ছাত্রকে অঙ্ক কষাতে। অঙ্ক না শিখে সে যাবে না ওসব নাটক করতে। তিনি জগদানন্দ রায়।

আসলে সেদিন যে ছাত্র অনুপস্থিত ছিল তাকে মহড়ায় যোগ দিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিশ্বকবি। নাকচ করে দিয়েছিলেন শিক্ষক জগদানন্দ। তাঁকে আর ঘাঁটাতেও যাননি রবীন্দ্রনাথ। তবে তিনি তো রবীন্দ্রনাথ। অঙ্কের প্যাঁচে তাঁকে ফেলতে না পারলেও অন্য প্যাঁচে এনেছিলেন নাটক মঞ্চে।

রবীন্দ্রনাথের ভৃত্য সাধুচরণ সেদিন ক্লাসে গিয়ে জগদানন্দবাবুকে জানিয়েছিলেন গুরুদেব ওই ছাত্রকে মহড়ার জন্য ডাকছেন। জগদানন্দবাবু ছাত্রকে অঙ্কে ভালো করেই ছাড়বেন।

বিরক্ত হয়ে সাধুচরণকে বলে দিলেন ‘আমার ক্লাসের সময় ছেলেরা নাচানাচি করতে যাবে না। যাও, গুরুদেবকে গিয়ে বল, এখন ছেলেটাকে ক্লাস ছেড়ে যেতে দেওয়া হবে না।’ সাধুচরণ কাঁচুমাচু মুখে ফিরে এসে দিনেন্দ্রনাথকে সব কথা জানান। তিনি গুরুদেবকে কথা জানাতে ইতস্তত বোধ করলেও সে কথা গিয়েছিল তাঁর কানে।

তিনি রেগে না গিয়ে উপভোগ করলেন। তারপর বললেন, ‘দিনু, আর এদিকে ঘেঁষে দরকার নেই, ব্রাহ্মণ চটে গেছে। ব্রাহ্মণের রাগ আগুনের মতো, সব ভস্ম করে দেবে!’ তবু দিনেন্দ্রনাথের অস্বস্তি যায় না। জিজ্ঞাসা করলেন ‘তাহলে মহড়ার কি হবে?’ রবীন্দ্রনাথ সঙ্গে সঙ্গে এক কৌশল বাতলে দিলেন। বললেন, ‘স্বয়ং জগদানন্দবাবুকেও শারদোৎসবের অভিনয়ে যোগ দেবার জন্য অনুরোধ কর। তাহলে তাঁর সাথে ঐ ছেলেটাও মহড়া দিতে আসবে।’

সেবার শারদোৎসব নাটকে জগদানন্দ রায় কৃপণ লক্ষেশ্বরের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয়ে রীতিমতো পাল্লা দিয়েছিলেন ছাত্রদের সঙ্গে। আজ ১৮ সেপ্টেম্বর শান্তিনিকেতনের গণিত শিক্ষকের জন্মদিন , যাকে সমীহ করে চলতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।