তালিবান সরকারের অংশীদার হাক্কানি নেটওয়ার্ক সক্রিয় নেপাল থেকে উত্তরবঙ্গে

বিশেষ প্রতিবদেন: আফগানিস্তানে দ্বিতীয় তালিবান সরকারের অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পেতে চলেছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক জঙ্গি সংগঠন। এই সংগঠন পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই মদতপুষ্ট। কাবুলে তালিবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে…

ISI backed afghan mikitant group Haqqani network

বিশেষ প্রতিবদেন: আফগানিস্তানে দ্বিতীয় তালিবান সরকারের অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পেতে চলেছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক জঙ্গি সংগঠন। এই সংগঠন পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই মদতপুষ্ট। কাবুলে তালিবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের বৈঠকে হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান আনাস হাক্কানির ছবি দেখা গিয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, যেহেতু হাক্কানি নেটওয়ার্ক দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে সংযোগ রাখে ফলে তাদের ততপরতা বাড়বে উত্তরবঙ্গে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে নেপালে থাকা হাক্কানি এজেন্টরা ফের সক্রিয়। তারা পশ্চিমবঙ্গের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে উস্কানি দিতে তৈরি। একইভাবে উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে হাক্কানি নেটওয়ার্কের যোগাযোগ আছে।
নেপালের সংলগ্ন উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলা। দার্জিলিং সংলগ্ন কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলার স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক ততপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলেই গোয়েন্দা বিভাগের অনুমান।

তাৎপর্যপূর্ন দুটি ঘটনা,
প্রথমত, ফের সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (KLO) সংগঠনকে। আত্মগোপনে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা জীবন সিংহ সরাসরি ভিডিও বার্তায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে হুমকি দিয়েছে। কেএলও এমন সময়ে হুমকি দেয় যখম তালিবান ও আফগান সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল।

দ্বিতীয়ত, অনেকটা কাকতালীয় হলেও গত রবিবার যখন কাবুল দখল করছিল তালিবান জঙ্গিরা, ঠিক সেই সময় মেঘালয়ের রাজধানী শিলং ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী এইচএনএলসি (HNLC) সংগঠনের হামলায় বিপর্যস্ত। নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশ ছিল অসহায়। তবে সংগঠনটির অভিযোগ তাদের নেতা অসুস্থ চেস্টারফিল্ডকে ঠান্ডা মাথায় এনকউন্টার করা হয়েছে। তারই প্রতিবাদ হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দুটি ঘটনাকে তলিয়ে দেখছেন। তাঁদের অনেকের আশঙ্কা, উত্তরবঙ্গ ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠিগুলির সঙ্গে হাক্কানি নেটওয়ার্কের একটা সংযোগ আগে থেকেই রয়েছে। আফগানিস্তানের ক্ষমতা তাদের হাতে চলে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই সংগঠন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলিকে উস্কানি দেবে।

উত্তর পূর্বাঞ্চলের সবকটি রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি গত কয়েকমাসে বিশেষ সক্রিয়। দীর্ঘ দেড় দশক বাদে ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (NLFT) গুলি চালিয়েছে। তাদের গুলিতে দুই বিএসএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়। গত কয়েকমাস ধরেই উত্তরপূর্বের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠির ততপরতা বেশি। ত্রিপুরা ও মিজোরা সীমানায় বিরাট আগ্নেয়াস্ত্র চালান ধরা পড়ে। বাংলাদেশের অতি নিকটে এই চোরাচালান চলছিল। হাক্কানি নেট ওয়ার্ক বাংলাদেশে সক্রিয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যেহেতু উত্তর পূর্বের প্রথম সারির বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্ব চিন ও মায়ানমারে থাকে, ফলে হাক্কানির পক্ষে তাদের সঙ্গে ‘কনটাক্ট’ করা সহজ। নেপাল সরকারের কাছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক বিষয়ে সতর্কবার্তা রয়েছে। কিন্তু নেপালেও রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি। এই সুযোগ নেবে আফগানিস্তান সরকারের শরিক হাক্কানি নেটওয়ার্ক জঙ্গি গোষ্ঠী।

সম্প্রতি সরকার বদল হয়েছে নেপালে। নেপালি কমিউনিস্ট পার্টির নির্বাচিত সাংসদদের বড় অংশ সমর্থন হারান ওলি। আস্থাভোটে পরাজিত হন। সরকারে এসেছে নেপালি কংগ্রেস। তবে এই সরকার নড়বড়ে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন কে পি ওলির সঙ্গে চিনের অতিরিক্ত সখ্যতা নিয়ে কাঠমাণ্ডু ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্ক বারে বারে গরম হয়। একইভাবে নেপালের অভ্যন্তরে চিনা কূটনীতিকর বড়সড় প্রভাব পড়ে। চিন এখন আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের প্রতি নরম।

নেপালে বরাবর সক্রিয় পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। তাদের মদত পায় হাক্কানি নেটওয়ার্ক। নেপাল থেকে তারা নাশকতার পরিকল্পনা করবে বলেই আশঙ্কা। আফগানিস্তানে প্রথম তালিবান সরকারের (১৯৯৬-২০০১) আমলে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের IC814 বিমান অপহরণ কাঠমাণ্ডু থেকেই হয়েছিল। কান্দাহারে সেই বিমান নামায় পাক জঙ্গিরা। মাসুদ আজাহারের মুক্তির বিনিময়ে যাত্রীদের ছাড়ায় ভারত সরকার।