অমর একুশ: পাক পুলিশের গুলিতে ছিন্নভিন্ন রফিকের মাথা, কবির কলমে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে…’

একুশের কবিতা। কবি আবদুল গাফফার চৌধুরীর যে কবিতার এই কয়েকটি বাক্যে ধরা আছে রক্তাক্ত দিনটির কথা। ৮ ফাল্গুন ১৩৫৮ সাল অর্থাৎ ইংরাজি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘বসন্ত বিপ্লব’ এনে দিয়েছিল মাতৃভাষার অধিকার।

Ekusher Gaan Abdul Gaffar Chowdhury

“…সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।”

একুশের কবিতা। কবি আবদুল গাফফার চৌধুরীর যে কবিতার এই কয়েকটি বাক্যে ধরা আছে রক্তাক্ত দিনটির কথা। ৮ ফাল্গুন ১৩৫৮ সাল অর্থাৎ ইংরাজি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘বসন্ত বিপ্লব’ এনে দিয়েছিল মাতৃভাষার অধিকার। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজপথ জুড়ে বিদ্রোহ, চলেছিল গুলি। ঠিক কতজন শহিদ হয়েছিলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।

ভাষা শহিদ রফিকউদ্দিন আহমদের ছিন্নভিন্ন মাথা থেকে বেরিয়ে আসা থকথকে মগজ। দেহটা পড়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজের আউটডোরে। ভয়াবহ পরিস্থিতি সেদিন। এভাবেই দিনটি ও ভাষা শহিদ রফিকউদ্দিন আহমদের রক্তাক্ত চেহারার বর্ণনা দিয়েছেন কবি আবদুল গাফফার চৌধুরী। তিনিই একুশের গান রচনা করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্ব জুড়ে এই গান যে যার ভাষায় গাইবেন।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

সত্তর বছর আগে আবদুল গাফফার চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন রফিকুল ইসলাম তিনি তাঁর ক্যামেরায় রফিকের ছবি তোলেন৷ সেই ছবি বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। কবি আবদুল গাফফার চৌধুরীর স্মৃতিতে স্পষ্ট চিত্রগ্রাহক রফিকুল ইসলাম তখন ছাত্র। পরে তিনি অধ্যাপক হন।

রফিকউদ্দিন আহমদের মরদেহ দেখে গাফফার চৌধুরীর মনে হয়েছিল, যেন তাঁর নিজের ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে৷ তখনই তাঁর মনে গুনগুনিয়ে ওঠে একটি কবিতা, ‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি”৷ তিনি বলেন, এই কবিতায় প্রথমে আব্দুল লতিফ সুর দেন৷ তারপরে পরিচালক আলতাফ মাহমুদ সুর দেন৷ আলতাফের সুরেই এটা প্রভাত ফেরির গান রূপে গৃহীত হয়৷ একুশের গান নামে এটি বিশ্ববন্দিত।


“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া-এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।

জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।

সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।

সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।