Dating: ডেটিংয়ের বিশাল বাজার ভারত: স্পার্কলস প্রতিষ্ঠাতা প্রিয়াঙ্কা

‘বিবাহ’- স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর এক পবিত্র বন্ধন। আর প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য অনুযায়ী এমনটাই প্রথা হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। তার জন্য ভারতীয় সংস্কৃতিতে ‘বিবাহ’ প্রত্যেকটি পরিবারের…

Priyanka Sehgal, Sparkles Founder

‘বিবাহ’- স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর এক পবিত্র বন্ধন। আর প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য অনুযায়ী এমনটাই প্রথা হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। তার জন্য ভারতীয় সংস্কৃতিতে ‘বিবাহ’ প্রত্যেকটি পরিবারের ক্ষেত্রেই ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ বন্ধন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আমাদের দেশের ধর্ম ও সংস্কৃতিতে আমাদের সমাজের ‘বিবাহ’ নামক বন্ধনে বিশ্বাস এবং ‘পবিত্রতা’কে এত বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় নীচের দিকে অবস্থান করি। ভারতে ‘বিবাহ’ বন্ধনের স্বীকৃতিকে যেখানে চিরস্থায়ী হিসেবে গণ্য করা হয় সেখানে পশ্চিমী কায়দার অত্যাধুনিক ডেটিং (Dating) অ্যাপ কতটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে সেই বিষয়েই ভারতীয় সমাজের সামনে প্রশ্ন রাখলেন স্পার্কেল্সের প্রতিষ্ঠাতা প্রিয়াঙ্কা সেহগাল (Priyanka Sehgal)।

প্রিয়াঙ্কা সেহগালের কথায়, ভারতের সমাজব্যবস্থায় লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়েও যারা একান্তে দুজনে কফি খেতে যাওয়া কিংবা মধ্যরাতে মেসেজের আদানপ্রদানের মধ্যে দিয়েই সর্ম্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের নিঃসন্দেহে ক্যারিশ্মা আছে। কারণ, আমাদের সমাজে বিশেষ করে অবিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে নিছকই আড্ডা মারা বা একসাথে ঘুরতে যাওয়াকে মোটেও স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা তো হয়ই না উপরন্তু সেই যুগলকে উদ্দেশ্যে করে কুরুচিপূর্ণ শব্দও ছুঁড়ে দেওয়া হয়।

সাক্ষাৎকারে প্রিয়াঙ্কা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন এই সমাজের প্রতি, কেন একজন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তার জীবনসঙ্গী খোঁজার চেষ্টা করলে তাকে কলঙ্কিত করা হবে? প্রিয়াঙ্কা বলছেন, “ডেটিং হল লোকেদের সাথে সরাসরি দেখা করা, তাদেরকে জানা যাতে আপনি জানতে পারেন যে আপনার জন্য সঠিক ব্যক্তিটি কে।” স্পার্কেল্সের মত জনপ্রিয় বেটিং অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা বলছেন, আমাদের যুবক-যুবতীদের এবং ডিভোর্সীদের এমন ভাবে উৎসাহিত করতে হবে যাতে তারা বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিজের সঙ্গীকে খুঁজে বের করতে পারেন।

প্রিয়াঙ্কা জানান, অভিজ্ঞতামূলক ডেটিংই স্পার্কল্সের লক্ষ্য। তার কর্মজীবন এবং বিবাহ বিচ্ছেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই তিনি নিজের উদ্দেশ্য এই অ্যাপ শুরু করেছেন বলেও উল্লেখ করেন। অকপট প্রিয়াঙ্কার দাবি, বিবাহবিচ্ছেদের পর যারা সামাজিক জীবন থেকে পিছিয়ে যান বা ডেটিংয়ের সঙ্গে একেবারেই অভ্যন্ত নন তাদের জন্য এই উদ্যোগ। তিনি আরও বলেন, অতীত সম্পর্কের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আর সঠিক মানুষকে জীবনে না পাওয়ার জন্য মানুষ একা থাকার সিদ্ধান্ত বেছে নিতে একপ্রকার বাধ্য হন। প্রিয়াঙ্কা সেহগালের মতে, ডেটিং করার জন্য ভারতে বাণিজ্যিক চাহিদা খুব ভালো। একইসঙ্গে Tinder, Hinge এবং Bumbles কে ধন্যবাদ জানানোর কথাও তিনি বলেন কারণ তাদের হাত ধরেই ভারতে ডেটিং অ্যাপের প্রচলন শুরু।

ভারতে আনুষ্ঠানিক বিবাহ নীতিতে জোর দেওয়ার কারণেই ডেটিং অ্যাপকে পশ্চিমী সংস্কৃতি হিসেবে দূরে সরিয়ে রাখা হয় এবং যৌন সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনাকে ‘ক্ষতিকারক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমনকি বিয়ের আগে থেকেই প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হলে সেই সম্পর্কে বিচ্ছেদের বীজ লুকিয়ে থাকে বলেও বাড়ির বয়ঃজ্যেষ্ঠদের মত। এমনকি, যে বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিটুকু নষ্ট হয়ে গেছে সেই সম্পর্ক থেকেও মহিলাদের বেরিয়ে আসতে বাধাদান করা হয়। যদিও প্রিয়াঙ্কার মতে, এক দশক আগেও যে পরিস্থিতি ছিল তার থেকে আজকে নারীর স্বাধীনতাকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলছে ভারতীয় সমাজ তবে এখনও সত্যিকারের এবং সম্পূর্ণ ক্ষমতায়নের জন্য অবিরাম কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

স্পার্কেল্সের প্রতিষ্ঠাতার কথায়, ডেটিং অ্যাপ গ্রাহকদের একটি বড় শতাংশ বিবাহিত। মহিলাদের ক্ষেত্রে ডেটিং সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েকটি উন্নতিমানের প্রযুক্তির সাহায্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এমনকি মহিলারা যে ব্যক্তির সঙ্গে ডেটে যেতে ইচ্ছুক তাদের ব্যক্তিগত তথ্যও বিশেষভাবে যাচাই করা হয়। এছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরিশেষে প্রিয়াঙ্কা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি ডেটিং বিচ্ছেদের সম্ভাবনাকে অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে এবং সঙ্গীর সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরীর মধ্যে দিয়েই সম্পর্ক রঙীন হয়ে ওঠে।