Online Desk: ভারত মাতাকে ইংরেজদের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য হাজারো তরুণ যুবক শহীদ হন। বিপ্লবী বাঘা যতীন এর নেতৃত্বে পরিচালিত বুড়ি বালামের তীরে খণ্ডযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ও সেখানে তাকে পুলিসের হাতে ধরা পড়তে হয়। বিচারে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা দেওয়া হয়। এই মহান বিপ্লবীকে অনেকেই হয়তো আজ ভুলে যেতে চলেছেন। এই মহান বিপ্লবীর নাম হলো জ্যোতিষচন্দ্র পাল (Jyotish Chandra)।
জ্যোতিষচন্দ্র পাল এর জন্ম হয়েছিল নদিয়া জেলার কমলাপুরে। তার পিতার নাম ছিল মাধবচন্দ্র পাল। বিপ্লবী জ্যোতিষচন্দ্র পাল বিপ্লবী মহানায়ক বাঘা যতীনের দলের একজন সভ্য সদস্য ছিলেন। তার পূর্ববর্তী জীবনের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। তবে তিনি বুড়ি বালামের তীরে খণ্ডযুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় বিশেষ পরিচিত। সন ১৯১৫ সাল, সেপ্টেম্বর মাস ছিল। বিপ্লবের কাজে চাই অস্ত্র-শস্ত্র, এর জন্য উড়িষ্যার বালেশ্বরের সমুদ্র উপকূলে জার্মান জাহাজ “ম্যাভেরিক” থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের কাজে যুক্ত ছিলেন জ্যোতিষচন্দ্র পাল।
বাঘা যতীন, চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী ও মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত গ্রাম ছেড়ে তালদিঘির দিকে ছুটছেন নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ও জ্যোতিষচন্দ্র পাল এর সঙ্গে মিলিত হতে। এরপরে তারা সকলে ঠিক করলেন যে বালেশ্বর রেলস্টেশন এর দিকে রওনা দেবেন। ততক্ষনে চারদিকেই পথ বন্ধ ও তল্লাশি চলছে। কারন ইংরেজ সরকার বিপ্লবীদের খবর আগেই পেয়ে যান। এদিকে স্থানীয় লোকজনও জানে না যে তারা কে, তাদের ডাকাত ভেবে স্থানীয় লোকজনও বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে। ১৯১৫ সালের ৭ ই সেপ্টেম্বর গভীর রাত্রে বাঘা যতীন বা যতীন মুখার্জী নিজের সাময়িক আস্তানা মহলডিহাতে ফিরে এলেন। সঙ্গে চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী, জ্যোতিষচন্দ্র পাল, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত এবং নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত।
এরপর ৮ ই সেপ্টেম্বর সারাদিন কেটে গেল তাদের গভীর জঙ্গলে। সারা রাত পায়ে হেঁটে নদীনালা, খাল, বিল পার হয়ে শেষে ৯ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা পৌঁছলেন বালেশ্বরের বলরামগড়িতে বুড়িবালাম (উড়িষ্যায় একে বলে “বুড্ঢাবালাঙ্গ”) নদীর উপকণ্ঠে। ইতি মধ্যেই থানায় খবর পৌঁছে গিয়েছে। পুলিস দল দু ভাগে বিভক্ত হয়ে ধেয়ে আসছে তাদের দিকে। সাঁতার কেটে নদীর ওপারে গিয়ে যুদ্ধের পক্ষে মোটামুটি একটি উপযুক্ত শুকনো এক ডোবার মধ্যে আশ্রয় নিলেন তারা। এবার এসে দাড়ালো শেষ মুহূর্তের সেই ভয়ানক সময়। বিপরীতপক্ষে চার্লস টেগার্ট, কমান্ডার রাদারফোর্ড, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কিলভি অসংখ্য সশস্ত্র পুলিস ও সামরিক বাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছিল। পরীখার আড়ালে বাঘা যতীনের নেতৃত্বে পাঁচজন, হাতে মাউজার পিস্তল।
এবার শুরু হলো দুই দিক থেকে গুলি বৃষ্টি, একদিকে অসংখ সেনাবাহিনী আর অন্যদিকে মাত্র ৫ জন বীর সাহসী বিপ্লবী। এই পাঁচজন বিপ্লবী এমন ভাবে গুলি চালাচ্ছেন মনে হয় এক সাথে ১০-১২ জন গুলি করছেন। এক ঝাঁক গুলি এসে লাগলো চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরীর গায়ে, আহত হয়ে পড়েন চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী। বাঘা যতীন শেষে তার সঙ্গী চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরীকে জল খাওয়ানোর জন্য ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। কারন সে জল খাওয়ার জন্য ছটফট করছিল।
বাঘা যতীন এর গায়েও গুলি লেগেছিল, ঘটনাস্থলে মারা গেলেন চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী। এরপর সকলকেই গ্রেপ্তার করা হলো। বাঘা যতীন পরের দিন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে ১৯১৫ সালের ১৬ ই অক্টোবর বিচারের রায়ে মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত এবং নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়। জ্যোতিষচন্দ্র পালকে দেওয়া হলো যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা। জ্যোতিষচন্দ্র পালও বেশিদিন বাঁচেননি। জেলের মধ্যে পুলিশের নির্মম অত্যাচারে আন্দামান সেলুলার জেলে কুঠরিবদ্ধ অবস্থায় উন্মাদ হয়ে যান। শেষে বহরমপুর উন্মাদ আশ্রমে ১৯২৪ সালের ৪ ই ডিসেম্বর বিপ্লবী জ্যোতিষচন্দ্র পাল এর শহীদ হন।