Ziggurat: দেবতার সৃষ্টি রহস্যময় জিগুরাট পিরামিড! বাইরে মোতায়েন থাকত যুদ্ধবিমান

৪ হাজার বছরেরও বেশি আগে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার কেন্দ্র ছিল অধুনা ইরাকের উর শহর। মূলত সেই সময় মেসোপটেমিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী ছিল উর। যে শহরে প্রাণকেন্দ্র ছিল…

short-samachar

৪ হাজার বছরেরও বেশি আগে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার কেন্দ্র ছিল অধুনা ইরাকের উর শহর। মূলত সেই সময় মেসোপটেমিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী ছিল উর। যে শহরে প্রাণকেন্দ্র ছিল জিগুরাট নামের এক স্থাপত্য। বয়সের ভারে যা আজ ভঙ্গুর। খোয়ে পড়া স্থাপত্যটি মিশরের গিজার পিরামিডের চেয়েও পুরোনো। ইরাকের কুখ্যাত কারাগার আবু ঘ্রাইবের কাছে মরুভূমি জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে জিগুরাটের ভেঙে পড়া অংশ। ইরাকের পাশাপাশি ইরানেও এর অংশ বিশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও পিরামিডের মত একটি সমতলে গড়ে ওঠেনি এটি। বরং সিঁড়ি ওয়ালা কয়েকটি তলের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই জিগুরাট। পিরামিডের মত এর ভিতরে কক্ষ নেই বরং সিঁড়ি বেয়ে একেবারে উপরে উঠে গেলে পাওয়া যাবে মন্দিরের মতো একটি অংশ। মিশরে প্রথম পিরামিড গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৭৮০ শতকের কাছাকাছি সময়। তার প্রায় ৬৮০ বছর পর নির্মাণ শুরু হয়েছিল জিগুরাটে।
তবে গিজার পিরামিডের থেকে এটি পুরোনো।

   

খ্রিষ্টপূর্ব ২৬ শতকের গোড়ায় প্রায় ২৭ বছর ধরে গড়ে উঠেছিল গিজার পিরামিড। আমেরিকার কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‌ জিগুরাট একটি পবিত্র ভবন। প্রথমে এটি ছিল একটি একটি সিঁড়ির ওপর এককক্ষবিশিষ্ট মন্দির। সময়ের সঙ্গে এই সমতলের ওপর অনেকগুলো মন্দির গড়ে ওঠে। আস্তে আস্তে এর পরিধি বাড়তে থাকে আরো জটিল আকার নিতে থাকে এই স্থাপত্য। একসময় এটি বহু তলে পরিণত হয়। কৃত্রিমভাবে সেচের কাজের ক্ষেত্রে মেসোপটেমিয়া ছিল অগ্রগণ্য। ‌ইউফ্রেটাস নদীর পাড়ে কৃষি কাজে ব্যবহার করতে খাল কেটে প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করতেন উর শহরের বাসিন্দারা। মেসোপটেমিয়ায় প্রতিটি শহরকেই দেব-দেবীর বসবাসের স্থল হিসেবে দেখা হত। এমনকি ওখানকার বাসিন্দারা বিশ্বাস করতেন দেবদেবীরাই ওই শহরের গোড়াপত্তন করেছেন। তারাই শহরের রক্ষাকর্তা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। কালের নিয়মে জিগুরাটের বহু অংশ হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে একেবারে উপরের মন্দিরটি। তবে‌ জিগুরাটের নিচের অংশটি আজও অক্ষত।

জিগুরাটের আসল চেহারা জানতে আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি হেরোডোটাসও ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে বাইবেলের লিখিত অংশের উদাহরণ নেওয়া হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ অ্যামেলিয়া ক্যারোলিনা স্পাভিগনা বলেন, সমতলের উপর শিকড়ের মতো আকৃতি ছিল জিগুরাটের। রোদে শুকানো ইটের সাড়ির উপর যা গড়ে উঠেছিল। সেগুলো আবার আগুনে পোড়ানো ইটের সাড়িতে ঢাকা ছিল। প্রায়শই এর বহিরঙ্গে নানা রং চাপানো হত। জিগুরাটের অংশবিশেষ পরীক্ষার পর প্রত্নতত্ত্ববিদদের দাবি, দুই সাড়ি বিশাল আকার মাটির সিঁড়ির স্তরের ওপরে একটি মন্দিরকে ধরে রাখত ওই স্তর। জিগুরাটের সমতলকে ধরে রাখতে ৭ লাখ ২০ হাজার ইট ব্যবহার করা হয়েছিল। এক একটির ওজন ছিল ১৫ কেজি।

দক্ষিণ মধ্য মেসোপটেমিয়ার সুমেরিয়ান সভ্যতায় বর্ণিত চাঁদ এবং সূর্যের সময় চক্রের ছায়া দেখতে পাওয়া যায় জিগুরাটে। এর চারটি কোণের প্রতিটি একটি কম্পাসের মতো এক একটিকে চিহ্নিত করে। জিগুরাটের উপরের স্তরে একটি বিশাল আকার সিঁড়ি রয়েছে। যেটা পূর্বদিকে মুখ করে তৈরী হয়েছে। ইতিহাস থেকে দেখা যায় যে খ্রিস্টপূর্ব ২১০০ শতকে উর নাম্মু সম্রাটের আমলে জিগুরাটে প্রথম ইটের গাঁথুনি হয়েছিল। পরে উর নাম্মুর ছেলে সম্রাট শুলগির আমলে সেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ততদিনে মেসোপটেমিয়ার রাজধানী হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে উর।

দেশের মহামূল্যবান ইতিহাসে উর চিহ্নকে অক্ষত রাখতে জিগুরাটের সংস্কারে মন দিয়েছিলেন সাদ্দাম হুসেইনও। সেটি ছিল গত শতকের আশির দশক। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মরুভূমির রুক্ষতায় জিগুরাটের ক্ষয় শুরু হয়ে গেছিল। প্রায় ৫৫৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ব্যবিলনীয়ার সম্রাট নাবোনিদাসের আমলে জিগুরাটের সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সেসময় তিনটির বদলে সাতটি সিঁড়ি করেন নাবোনিদাস। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে সংকটের মুখে পড়েছিল উর শহরের অস্তিত্ব। জল সংকট শুরু হয়, ফলে ধ্বংস হয়ে যায়। কালের নিয়মে বালির তলায় চলে যায় জিগুরাট।

১৮৫০ সালে জিগুরাটের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। তবে গত শতকের বিশের দশকে এখানে খনন কাজ শুরু হয়। সেই খনন কাজে জিগুরাটের মাত্র ৩০ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। অনেকের মতে এক সময়ের এই স্থাপত্যকে হাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেইন। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তিনি এর কাছে দুটি মিগ ফাইটার যুদ্ধবিমান রেখে দিয়েছিলেন। যাতে ঐতিহাসিক স্থান মনে করে এর উপর হামলা চালাতে না পারে আমেরিকা তথা অন্য বিদেশী শত্রুরা। তবুও ছোটখাটো ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে এটাকে বাঁচানো যায়নি। সম্প্রতি এই স্থাপত্যকে ঘিরে পর্যটনের দ্বার খুলে দিয়েছে ইরাক সরকার। আসতে আসতে পর্যটকের ভিড় বাড়ছে জিগুরাটে।