মহাত্মার অনুগত জিডি বিড়লা আপত্তি তুলেছিলেন গান্ধী স্মৃতি গড়ায়

বিশেষ প্রতিবেদন: দিল্লিতে অবস্থিত গান্ধী স্মৃতি (Gandhi Smriti) নামে যে মিউজিয়ামটি গড়ে উঠেছে সেটি এক সময় ছিল বিড়লা হাউস বা বিড়লা ভবন৷ এই বাড়িটিতেই ১৯৪৭…

Gandhi Smriti

বিশেষ প্রতিবেদন: দিল্লিতে অবস্থিত গান্ধী স্মৃতি (Gandhi Smriti) নামে যে মিউজিয়ামটি গড়ে উঠেছে সেটি এক সময় ছিল বিড়লা হাউস বা বিড়লা ভবন৷ এই বাড়িটিতেই ১৯৪৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) জীবনের শেষ ১৪৪টি দিন কাটিয়েছিলেন৷ ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি বিড়লা পরিবারের ওই ভবন চত্বরেই নাথুরাম গডসে-র গুলিতে মৃত্যু হয় মহাত্মার৷ 

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু চেয়েছিলেন বাপুজীর স্মৃতি বিজড়িত ওই ভবনেই গড়ে উঠুক তাঁর স্মৃতি মন্দির৷ কিন্তু সেইসময় সে বিষয়ে বাদ সেধেছিলেন গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বিড়লা গোষ্ঠীর কর্তা ঘনশ্যাম দাস বিড়লা৷ আর এ নিয়ে কিছুটা মতবিরোধ দেখা গিয়েছিল জিডি-র সঙ্গে নেহরুর৷ সে কথা উল্লেখ রয়েছে ডঃ প্রজ্ঞারামের লেখা The Voice of the Mahatama তে ৷

১৯২৮ সালে দিল্লিতে ১২ শয্যা বিশিষ্ট ওই বাড়িটি গড়েছিলেন শিল্পপতি ঘনশ্যামদাস বিড়লা৷ গান্ধীজির নিয়মিত যাতায়াতে এই বিড়লা হাউস যেন হয়ে উঠেছিল তাঁর বাড়ি ৷ শুধু গান্ধীজিকে ঘিরে আরও অনেক রাজনৈতিক নেতাকেই সেই সময় আসতে দেখা যেত ওই ভবনে৷ স্বাভাবিক ভাবেই গান্ধীজির মৃত্যুর পরে প্রধানমন্ত্রী নেহরু চেয়েছিলেন গান্ধীর স্মৃতি জড়িয়ে থাকা এই বাড়িটিকে জাতীয় সৌধ রূপে গড়ে তুলতে৷ সেই মতো তিনি বিড়লা পরিবারের কাছে প্রস্তাব দেন৷ কিন্তু সেই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি বিড়লাদের৷ কারণ তারই জবাবে জিডি বিড়লা নেহরুকে লিখেছিলেন, এই বাড়ি স্মৃতির ভাণ্ডার যা তাঁর কাছে একটি বইয়ের মতো হয়ে রয়েছে যা স্মরণ করে তিনি গভীরভাবে উপভোগ করেন৷ ফলে সরকারের পক্ষ থেকে তখন পরামর্শ ছিল যেখানে মহাত্মা নিহত হয়েছিল ভবনের সেই অংশটি গান্ধীজীর স্মৃতিতে হস্তান্তর করা হোক৷

কিন্তু তখন সেটাও মানতে পারেননি জিডি বিড়লা৷ তিনি জবাবে জানিয়েছিলেন, এটা যেন কাউকে বলা হচ্ছে সন্তানকে কেটে দু’ ভাগ করে একটি অংশ রেখে দিয়ে অন্য অংশ দিয়ে দিতে বলা৷ তবে ওই জায়গাটা দেওয়ার জন্য বিড়লা পরিবারের উপর অনবরত চাপ দেওয়া হতে থাকে৷ যদিও বল্লভভাই প্যাটেল এইভাবে বাড়িটিকে অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেছিলেন৷ তখন তাঁর বক্তব্য ছিল, এমনটা করা মানে গান্ধীজি এবং জিডি বিড়লার অনুভূতিকে মর্যাদা না দিয়ে বরং খারাপ ভাবে জোরজবরদস্তি করা হচ্ছে৷ পরে প্যাটেলের মৃত্যু হলেও ওই বাড়ি নিয়ে টানাপোড়েন শেষ হয় না৷

সময়ের তালে প্রধানমন্ত্রীরও পরিবর্তন হয় এদেশে৷ জহরলাল নেহরুর জমানা শেষ হয়ে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর পরে ইন্দিরা গান্ধীর জমানা শুরু হয়৷ তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিড়লা পরিবারের উপর ক্রমাগত চাপ দেওয়ার পাশাপাশি চলছিল ভবনটির দাম নিয়ে দরাদরি করা৷ অবশেষে বিড়লাদের কাছ থেকে সরকার ৫৪ লক্ষ টাকায় এই বাড়িটি কিনে নেয়৷ ১৯৭১ সালের ২ অক্টোবর কিছুটা অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিড়লা ভবনটি গান্ধী সদনে পরিণত করতে তুলে দেওয়া হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরির হাতে৷

তখন জিডি বিড়লার পরিবার এই বাড়ি ছেড়ে বসন্ত কুঞ্জে একটি ভাড়া বাড়িতে বাস করতে থাকেন, যতদিন না পর্যন্ত অমৃতা শেরগিল মার্গে নতুন বাংলো ‘মঙ্গলম’ গড়ে ওঠে৷ কালের স্রোতে এই বিড়লা হাউসটি জাতীয় সৌধ হিসেবে গড়ে ওঠে এবং নাম হয় গান্ধী স্মৃতি এবং দর্শন সমিতি৷

১৯৭৩ সালের ১৫ অগস্ট থেকে এই ভবনটি সাধারণের পরিদর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়৷ সেখানে সংগৃহীত রাখা রয়েছে গান্ধীর জীবন ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত নানা সামগ্রী৷ ২০০৫ সালে এখানে গান্ধীকে ভিত্তি করে একটি মাল্টিমিডিয়া মিউজিয়ামের উদ্বোধন করা হয়েছে৷

(উপরের অংশটি সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘সওদাগরের দোসর’ বইটির অংশ বিশেষ ৷ বইটির প্রকাশক সৃষ্টিসুখ ৷ মূল্য ১৬০টাকা ৷)