কুখ্যাত দেবদাসী প্রথাকে হারিয়ে ভারত রত্ন হয়ে উঠেছিল এই মেয়ে

বিশেষ প্রতিবেদন: দেবদাসী প্রথার সঙ্গে অদ্ভুত লড়াই ছিল তাঁর। সংগীত ছাড়াও তাঁর পারিবারিক ইতিহাস সবসময়েই থেকেছে আলোচনার কেন্দ্রে। কিন্তু তাঁর সঙ্গীত তা কখনও সেই বিতর্কিত…

subbalaxmi became bharat ratna

বিশেষ প্রতিবেদন: দেবদাসী প্রথার সঙ্গে অদ্ভুত লড়াই ছিল তাঁর। সংগীত ছাড়াও তাঁর পারিবারিক ইতিহাস সবসময়েই থেকেছে আলোচনার কেন্দ্রে। কিন্তু তাঁর সঙ্গীত তা কখনও সেই বিতর্কিত আলোচনাকে সামনে আসতে দেয়নি। তিনি ভারতরত্ন এম.এস শুভলক্ষী।

ওই এম.এস হল তাঁর মায়ের নাম , মাদুরাই সম্মুখাবদিভু। হ্যাঁ এটাই তাঁর মায়ের নাম, যিনি রত্নগর্ভা। ১৬ সেপ্টেম্বর আজকের দিনে জন্ম দেন মেয়ে শুভলক্ষ্মীর। অল্প বয়সেই সঙ্গীতের প্রতি মেয়ের গভীর টান বুঝেছিলেন মা। তিনি বুঝেছিলেন মেয়ের প্রতিভা এই মন্দিরের কুঠুরিতে লুকিয়ে থাকলে তা মহা ভুল হবে। কুখ্যাত দেবদাসী প্রথার অন্ধকার থেকে তিনি মেয়েকে বাইরের জগতে নিয়ে আসেন। মেয়ের হাতে তুলে দেন নিজের বীণা। দেবদাসীদের তথাকথিত সভ্য সমাজে নানারকম গঞ্জনা সহ্য করতে হত। সেই সমস্ত কিছুকে দূরে সরিয়ে মেয়েকে মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর গান রেকর্ড করান। সেই শুরু, এরপর ১৩ বছর বয়সে মাদ্রাস মিউজিক অ্যাকাডেমিতে ভজন পরিবেশন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

subbalaxmi became bharat ratna

প্রথম গুরু তাঁর মা-ই। পাশাপাশি গান শিখেছেন সেমমানগুডি শ্রীনিবাস আইয়ারের কাছে। পরে হিন্দুস্তানি সঙ্গীত শিক্ষা নেন পণ্ডিত নারায়ণ রাও ব্যাসের কাছে। পরে শেখেন পল্লবী সঙ্গীত। শিক্ষাগুরু ছিলেন এমএস ভাগবতার। এরপরেই মঞ্চানুষ্ঠান শুরু করেন তিনি। সেখানে বীণা বাজাতেন মা।

১৯৩০ সালে মাকে নিয়ে চেন্নাইতে চলে আসেন শুভলক্ষ্মী। সেখানে সঙ্গীতজ্ঞা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভের‌ জন্যে নতুন করে লড়াই শুরু হয়। এই সময়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় বিশিষ্ট সাংবাদিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী টি সদাশিবমের।১৯৪০ সালে তাঁকেই বিয়ে করেন। জীবন অদ্ভুতভাবে বদলে যায়। মিশে যায় সঙ্গীত এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম। স্বামীর দেশপ্রীতি তাঁকে দেশের স্বাধীনতা লাভের কাজে উদ্বুদ্ধ করেছিল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাতীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সেইসময় তিনি জাতীয়তাবাদী গান পরিবেশন করতেন। পরে সি রাজাগোপালাচারীর মাধ্যমে জওহরলাল নেহরু ও মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। রাজাগোপালাচারী ছিলেন তাঁর স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

গান্ধীজীকে ভজন শুনিয়েছিলেন এমএস শুভলক্ষ্মী।মহাত্মা তাঁর কণ্ঠস্বরকে বলতেন মীরার কণ্ঠস্বর। শুভলক্ষ্মীর কন্ঠে গান্ধীজির খুব প্রিয় ভজন ছিল ‘হরি তুম হরো’। ১৯৪৪ সালে কস্তুরবা মেমোরিয়াল ট্রাস্টের জন্যে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে পাঁচটি কনসার্টে অংশ নিয়েছিলেন শুভলক্ষ্মী। গ্রামের মেয়ের সহায়তায় কাজ করত কস্তুরবা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। সামাজিক কাজের জন্যে পরেও একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি।

subbalaxmi became bharat ratna

১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭। এই সময়কালে বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন এমএস শুভলক্ষ্মী। এর মধ্যে রয়েছে সেবা সদন, শকুন্তলার মতো ছবি। সাবিত্রী নামে একটি ছবিতে পুরুষের ভূমিকায় অভিনয় করেন। চরিত্রটি ছিল নারদের। সাবিত্রী সিনেমাটি করা হয়েছিল জাতীয়তাবাদী তামিল সাপ্তাহিক কল্কির প্রকাশ করার উদ্দেশে। মীরা ছবিতে মীরাবাঈয়ের ভূমিকাতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। আসলে নিজের শিল্পীসত্তাকে বরাবরই দেশের কাজে নিয়োজিত রেখেছিলেন শুভলক্ষ্মী। ১৯৫০ সালে মীরা ছবিটি ফের হিন্দিতে করা হয়েছিল।
এমএস শুভলক্ষ্মীর হিন্দিতে গাওয়া ভজনগুলি তাঁকে দক্ষিণ ভারতের গণ্ডি থেকে বের করে এনে সারা দেশে পরিচিতি দেয়। কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ছাড়াও সংস্কৃত, হিন্দি, মালায়ালম, বাংলা, পাঞ্জাবী, মারাঠি, তেলেগু, গুজরাতি ভাষাতেও গান করেছেন এই কিংবদন্তী শিল্পী। পদ্মভূষণ, ম্যাগসাইসাই, সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার সহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন এই কিংবদন্তী। ১৯৯৮ সালে প্রথম ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে ভারতরত্ন পান তিনি। তবে ১৯৯৭-এ স্বামী কল্কি সদশিভমের মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে গান করা ছেড়ে দেন তিনি।