কাজহীন কেঞ্জাকুড়া ‘শিল্পগ্রাম’ ভাবছে বিশ্বকর্মার আরাধনা হবে তো!

তিমিরকান্তি পতি, বাঁকুড়া: রাত পোহালেই সনাতন হিন্দু মতে ‘শিল্পের দেবতা’ বিশ্বকর্মার আরাধনায় যখন মাতবে এ রাজ্য সহ গোটা দেশ। উল্টো ছবি বাঁকুড়ার ‘শিল্প গ্রাম’ হিসেবে…

Femous industrial village kenjakura

তিমিরকান্তি পতি, বাঁকুড়া: রাত পোহালেই সনাতন হিন্দু মতে ‘শিল্পের দেবতা’ বিশ্বকর্মার আরাধনায় যখন মাতবে এ রাজ্য সহ গোটা দেশ। উল্টো ছবি বাঁকুড়ার ‘শিল্প গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত কেঞ্জাকুড়ায়। কাঁসা শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই গ্রাম একটা সময় বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে ঢাকের বাদ্যি আর আলোর রোশনাইয়ে ভেসে উঠতো। প্রতিটি বাড়িতে আলাদা আলাদাভাবে ‘কূল দেবতা’র পুজোর পাশাপাশি গ্রামে বিশালাকার প্যাণ্ডেল তৈরী করে প্রতিমা এনে পুজো হতো। এখন সে সব অতীত।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাঁসা শিল্পের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। তার উপর ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’র উপর হাজির ‘করোনা’। উৎপাদিত দ্রব্যের বিক্রিবাটা নেই। এই অবস্থায় যখন শিল্পীদের প্রতিদিনের সংসার খরচ চালানোই দূস্কর হয়ে পড়েছে, তখন পুজো কী করে হবে! গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও শিল্পী দু’জনেই বিপন্ন। ফলে এখন পুজো করতে হয়, তাই ধারাবাহিকতা রক্ষায় যেটুকু না করলেই নয়, সেভাবেই পুজো হবে। আগের সেই জৌলুস আর নেই।

Femous industrial village kenjakura

বাঁকুড়া শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে দ্বারকেশ্বর নদের তীরে কেঞ্জাকুড়া গ্রামে এক সময় পাঁচশোর বেশী কাঁসার বাসন তৈরীর কারখানা ছিল। সারা দিন ছিনি, হাতুড়ি, বৈদ্যুতিক যন্ত্র আর হাপরের শব্দে মুখরিত থাকতো পুরো গ্রাম। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা অনেকটাই কমে এসেছে। এখানকার তৈরী কাঁসার তৈরী জিনিষপত্র রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে পাড়ি দিত ভিন রাজ্যে। বর্তমানে কাঁচামালের অভাব ও উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা ক্রমশ কমতে থাকা ও করোনার উপস্থিতিতে ‘শাল’ বন্ধ থাকায় এই শিল্প আজ ধুঁকছে। ফলে শিল্পীর ঘরেই যখন টান, তখন শিল্পের দেবতা বিশ্বকর্মা পুজো এখন একরকম নিয়ম রক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকারীভাবে উদ্যোগ নেওয়া না হলে হয়তো চিরতরে হারিয়ে যাবে কয়েকশো বছরের প্রাচীণ এই শিল্প। কেঞ্জাকুড়া গ্রাম হারাবে তার ‘শিল্প গ্রাম’ তকমা। এখন এই বিষয়টাই বেশী করে ভাবাচ্ছে গ্রামের শিল্পী থেকে জেলার শিল্প দরদী মানুষদের।