Kolkata: ১০০ বছর আগের বাঙালি রেস্তোরাঁর উদাহরণ বয়ে নিয়ে চলেছে এই কেবিন

বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা: পুরোনো কলকাতার (Kolkata) বাঙালি রেটুরেন্ট এর চেহারা কেমন হতো নিজের চোখে দেখার জন্য এইখানে অবশ্যই আসতে হবে । ১৯১৮ সালে চট্টগ্রাম থেকে…

Favorite Cabin

বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা: পুরোনো কলকাতার (Kolkata) বাঙালি রেটুরেন্ট এর চেহারা কেমন হতো নিজের চোখে দেখার জন্য এইখানে অবশ্যই আসতে হবে । ১৯১৮ সালে চট্টগ্রাম থেকে দুই ভাই নূতন চন্দ্র বড়ুয়া এবং গৌর চন্দ্র বড়ুয়া এসে এই কেবিন খোলেন ৬৯বি, সূর্য সেন স্ট্রিটে। সেই দিনকার কেবিনের চেহারা আজ ও একই ভাবে ধরে রেখেছেন বর্তমান প্রজন্মের মালিকেরা। নাম ফেভারিট কেবিন। সূর্য সেন স্ট্রিট ধরে কলেজ স্কোয়ারকে ছেড়ে একটু এগিয়ে গেলে বাঁ হাতে ​ পাবেন ১০০ বছরেরও বেশি পুরোনো এক রেস্টুরেন্ট, “ফেভারিট কেবিন” (Favorite Cabin)।

যেমন নিরঞ্জন আগার, কয়েকদিন আগে অবধিও সেই কাঠের টেবিল আর বেঞ্চ, কয়েকটা মাত্র চেয়ার। ভিতরের ঘরে সেই একই ভাবে কয়লার আঁচে লোহার জালির ওপর সেঁকা হচ্ছে টোস্ট। কলেজ ষ্ট্রীটের দিলখুশ কেবিন বা হেদুয়ার বসন্ত কেবিন। চা, টোস্ট, আমলেট আর পোচেই আমাদের সকাল টা কে আরও সুন্দর করে তোলে উত্তরের এই কেবিনের প্রতিষ্ঠানগুলো।

Favorite Cabin

এই সব কেবিনের দেওয়াল বা চেয়ার, বেঞ্চ, টেবিলে জমে থাকা একশো বছরের বেশী সময়ের ধুলোর সঙ্গে মিশে আছে আমাদের অনেক শ্রদ্ধেয়, বরেণ্য মানুষের পদধূলি যাঁরা আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়গুলিকে নানান ভাবে রূপ দিয়েছেন। এই রকম কিছু কেবিনের রান্নার ঘরে উনুনের কাছে টেবিলে বসে সে যুগে স্বদেশীরা গোপন মিটিং করতেন, বাইরে ক্যাশ কাউন্টারে মালিক বসে পাহারা দিতেন। কোনও গন্ডগোল দেখলে ভিতরে তাঁর সিগন্যাল পৌঁছে যেত, স্বদেশীরা পিছনের গুপ্ত দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতেন।

প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময় সুভাষ চন্দ্র বোস নিয়মিত আসতেন ফেভারিট কেবিনে নজরুলের কবিতা ও গান শুনতে। মাস্টারদা সূর্য সেন ও বেশ কয়েক বার এখানে এসেছিলেন। জানালার ধারে চার নম্বর পাথরের টেবিলটি ছিল কবি নজরুলের। এটি ছাড়া তিনি অন্যত্র বসতেন না । এইখানে বসে অনেক কবিতা লিখেছেন এবং গানে সুর দিয়েছেন।

ফেভরিট এ আসতেন শিবরাম চক্রবর্তী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত, অভিনেতা জহর রায়, প্রমুখ। জহর বাবু যদিও কাছেই একটি মেসে কাটাতেন তার জীবনের বেশ খানিকটা অংশ। পথের পাঁচালীর আগে সৌমিত্র চ্যাটার্জি এখানে আসতেন নিয়মিত আড্ডার সদস্য হিসেবে, একথাও শোনা যায়। বেশীরভাগ ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত মানুষের প্রিয় বসা ও আড্ডার জায়গা হযেছে উত্তরের এই কেবিন গুলি। শতাব্দী প্রাচীন প্রতিষ্ঠান, বসন্ত কেবিন ও বহু ইতিহাসের সাক্ষী।