Betai Chandi: বেত বনে অধিষ্ঠিত দেবী, পুজো করেছিলেন স্বয়ং চাঁদ সওদাগর

আজ হাওড়ার শিবপুরের ব্যাতাইতলায় মা বেত্রচন্ডীকার (Betai Chandi) মন্দিরে মহোৎসব ও মায়ের পূজা অনুষ্ঠান।এখানে চন্দ্রধর বণিক (চাঁদ সওদাগর) পূজা দিয়েছিলেন।তৎকালীন গঙ্গার পারে বেত বনে দেবী…

betai chandi

আজ হাওড়ার শিবপুরের ব্যাতাইতলায় মা বেত্রচন্ডীকার (Betai Chandi) মন্দিরে মহোৎসব ও মায়ের পূজা অনুষ্ঠান।এখানে চন্দ্রধর বণিক (চাঁদ সওদাগর) পূজা দিয়েছিলেন।তৎকালীন গঙ্গার পারে বেত বনে দেবী অধিষ্ঠিত ছিলেন তাই বেত্রচন্ডীকা।

বেতর, বেতাইতলা আর বেতাইচন্ডী
এখন হাওড়ার বেতর অঞ্চল বলতে যে অংশ বুঝি তখন সেরকম ছিল না সেটা ছিল এখনকার শিবপুর এলাকায় নবান্নের পাড়ে। লক্ষন সেনের গোবিন্দপুর তাম্রপত্রে বর্ধমানভুক্তির অন্তর্গত বেতড্ড চতুরক এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। ইতিহাসবিদ নলিনীকান্ত ভট্টশালী লিখিত প্রবন্ধ “লক্ষণ সেনের নবাবিষ্কৃত শান্তিপূর শাসন ও প্রাচীন বঙ্গের ভৌগলিক বিভাগ”( সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা ১৩৩৯) আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে বল্লাল সেন এবং লক্ষন সেনের শাসনাধীন অঞ্চল উত্তরে সরস্বতী থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

   

পরে সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা ১৩৪১ সালে কালিদাস দত্ত লিখেছেন যে গোবিন্দপুর এর মহারাজা লক্ষন সেনের যে তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছে, তদ্বারা তিনি বর্ধমানভুক্তির অন্তর্গত বেতড্ড চতুরকের অধীন ‘ বিড্ডর শাসন’ নামে একটা গ্ৰাম ব্যাসদেব শর্মা নামে জনৈক এক ব্রাক্ষণকে দান করেন। সেখানে প্রদত্ত ভূমির যে সীমানা দেওয়া হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে উত্তরে ধর্মনগর সীমা, পূর্ব অর্ধ জাহ্নবী সীমা, দক্ষিণে লেংঘদেব মন্ডপী সীমা, পশ্চিমে ডালিম্ব ক্ষেত্র সীমা।এই চতুঃসীমা।

এই সীমান্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বর্ধমানভুক্তির অন্তর্গত বেতড্ড চতুরক বর্তমানে হাওড়ার শিবপুর অবস্থিত। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, বেতড্ড বর্তমানে বেতর নামক স্থান, এবং ওই নামানুসারেই ওই চতুরক প্রসিদ্ধ হয়েছিল। খ্রিষ্টীয় পনেরো শতকের শেষদিকে রচিত বিপ্রদাস পিপলাই এর মনষা বিজয় কাব্যে বেতড় আর লৌকিক দেবী বেতাইচন্ডীর উল্লেখ পাওয়া যায় । ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে বিপ্রদাস পিপলাই এর মনসা বিজয় কাব্যে চাঁদ সওদাগরের বানিজ্য বর্ণনায় বলছেন-
ডাহিনে কোতরবাহি ,কামারহাটি বামে
পূর্বেতে আড়িয়াদহ ঘুষীড়ি পশ্চিম
চিৎপুর পূজে রাজা সর্বমঙ্গলা
নিশিদিশি বসে ডিঙ্গা নাহি করে ফেলা
তাহার পূর্বকূল বাহিয়া এড়ায় কলকাতা
বেতর চাপায় ডিঙ্গা চাঁদ সওদাগর।

এই বেতর পরবর্তীতে বে়তাই এবং আরো পরে বেতাইতলা নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। সিজার ফ্রেডরিক নামে জনৈক ইউরোপীয় পর্যটক, খ্রিষ্টীয় ষোল শতকের মধ্যভাগে বেতড় পরিদর্শন করে লিখেছেন,যে শীতের সময় পর্তুগিজদের বানিজ্যির দৌলতে এখানে একটা বিরাট বাজার বসতো ।ডি ব্যারেজ ( খ্রিষ্টীয় ১৫৫৬-১৬১৩), ব্লায়েভ(খ্রিষ্টীয় ১৬৪৫-১৬৫০)রেনেলে (১৭৭৯-১৭৮১)-এর তৈরি মানচিত্রে, বেতরের তখনকার গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়।

কিন্তু বর্তমানে সিঁদুরলিপ্ত বেতাই চন্ডীর একটা সাধারন মন্দিরের অবস্থান ছাড়া বেতাইতলার পূর্বগৌরবের অন্যান্য সব স্মৃতিচিহ্ন ই আজ অবলুপ্ত।