বাঁশবেড়িয়ার রানি শংকরী শেষ জীবনে ছিলেন এখনকার হাজরা মোড়ের কাছে

কিশোরী বয়সে বিয়ে হয়েছিল রানির। নৃসিংহদেবের বয়সও কম। বিশাল রাজবাড়ির দালানে, এ ঘর থেকে ও ঘরে ঘুরে বেড়াতেন রানি। আলতা পায়ে নূপুরের শব্দ তুলে। রাজা-উজিরের…

কিশোরী বয়সে বিয়ে হয়েছিল রানির। নৃসিংহদেবের বয়সও কম। বিশাল রাজবাড়ির দালানে, এ ঘর থেকে ও ঘরে ঘুরে বেড়াতেন রানি। আলতা পায়ে নূপুরের শব্দ তুলে। রাজা-উজিরের বিষয়ে অতশত বুঝত না ছোট্ট শংকরী। সংসারেরই-বা বুঝবে কতটুকু !

বয়স বাড়ার সঙ্গে মজবুত হয়েছে তাঁদের দাম্পত্য জীবন। নৃসিংহের মনে অবশ্য অনেক আগেই আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। ছোটবেলায় শংকরীর সোনা মুখে বাঁধা পড়েছিলেন রাজপরিবারের ছেলে।

   

দূরে নদী দেখা যেতো রাজবাড়ি থেকে। পালতোলা নৌকা এসে ভিড়ত ঘটে। জিনিস পত্র ওঠানামা করতে এখনকার বাঁশবেড়িয়ায়। জলপথেই নিয়ে আসা হয়েছিল মন্দির নির্মাণের জন্য চুনার পাথর। সেই কাশী থেকে। রাজবাড়ির তখন রমরমা। তৈরি হয়ে গিয়েছিল অনন্ত বাসুদেব মন্দির। এখন যেখানে হংসেশ্বরী মায়ের মন্দির, তার পাশেই টেরাকোটার মন্দিরটা অনন্ত বাসুদেব মন্দির। দেখার মতো টেরাকোটার অলংকরণ প্রতিটি প্যানেলে।

যাইহোক, হংসেশ্বরী মায়ের মন্দির তৈরির সময় বিস্তর বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন রাজা। রাজবাড়ির অবস্থাও তখন পড়তির দিকে। নবাব আলিবর্দী খাঁর রাজত্ব শেষ হওয়ার পর প্রভাব বাড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। বাঁশবেড়িয়ার রাজবাড়ির দিকেও হাত বাড়িয়েছিল তারা। একদিকে নিজের রাজত্ব, অন্যদিকে মন্দির তৈরির কাজ। বয়সও বাড়ছিল রাজা নৃসিংহদেবের। আইন আদালতের দরাজতেও ছুটাছুটি করতে হয়েছিল তাঁকে। রানি শংকরি তখন দক্ষ গিন্নি। স্বামী যখন বাইরে, তখন প্রাসাদ সামলাতেন তিনি।

১৮০১ সালে মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। পরের বছর, ১৮০২ সালে মন্দিরের একতলা সম্পূর্ণ করে হংসেশ্বরী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নৃসিংদেব। তবে মন্দির নির্মাণ শেষ করে যেতে পারেননি তিনি। ওই বছরেই মৃত্যু হয় তাঁর। সহমরণে গিয়েছিলেন প্রথম স্ত্রী রানি ভবানন্দময়ী। ভেঙে পড়েছিলেন রানি শংকরী। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। মনে মনে তৈরি করেছিলেন নিজেকে। স্বামীর ফেলে যাওয়া কাজ সম্পূর্ণ করে তবেই শান্তি।

বাধা সত্ত্বেও চলতে থাকে মন্দির নির্মাণের কাজ। প্রতিদিন একটু একটু করে রূপ নিতে থাকে হংসেশ্বরী মায়ের মন্দির। ২৭.৫ মিটার উঁচু মন্দির তৈরির কাজ শেষ হয়েছিল ১৮১৪ সালে। মন্দির চূড়ায় ১৩ টি চূড়া। প্রতিটি পদ্ম আকৃতির। বাংলায় এরকম মন্দির এখনও অদ্বিতীয়।

বৃদ্ধা বয়সে রানি চলে এসেছিলেন কলকাতায়। এখন যেখানে হাজরা মোড়, তার কাছে একটি জায়গায় ছিলেন রানি শংকরী। সেই রাস্তার নাম এখন- রানি শংকরী লেন।