বিজয়া দশমীতে মা দুর্গার বিদায়: সিঁদুর খেলার আনন্দ ও আবেগের মিলন

পুজোর পাঁচটা দিন মানেই জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া, ঢাকের আওয়াজ, ধুনুচি নাচ, নতুন জামা আরও কতকিছু (Bijoya Dashami)। কিন্তু এই এতো আনন্দ আর আয়োজনের মাঝে নবমীর রাত…

SINDOOR123 বিজয়া দশমীতে মা দুর্গার বিদায়: সিঁদুর খেলার আনন্দ ও আবেগের মিলন

পুজোর পাঁচটা দিন মানেই জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া, ঢাকের আওয়াজ, ধুনুচি নাচ, নতুন জামা আরও কতকিছু (Bijoya Dashami)। কিন্তু এই এতো আনন্দ আর আয়োজনের মাঝে নবমীর রাত পোহালেই মনটা যেন কেমন বিষাদে ভরে যায়। মর্ত্য ছেড়ে মা কৈলাসের পথে পাড়ি দেন।

মায়ের চিন্ময়ী মূর্তি জলে পড়ার আগেই ঢাকের বাদ্যি বলে ওঠে, ”ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন!” বিসর্জনের বাজনার সঙ্গে সঙ্গে পানপাতা দিয়ে মাকে বরণ করে নেওয়া হয়। মাকে জল মিষ্টি খাইয়ে কানে কানে বলা হয়, “আবার এসো মা।” আর এই দশমীর দিনেই সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে সকলে।

   

মূলত বিবাহিতা মহিলারাই এই সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। কিন্তু শুধু দশমীর দিনেই কেন সিঁদুর খেলা হয়? পুরাণে এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতের প্রচলন রয়েছে। প্রজাপতি ব্রহ্মার কৃপাতেই নির্মিত হয়েছে এই জগৎ। নারী-পুরুষের মিলনের ফলে এই জগতে নতুন প্রাণের আগমন ঘটে।

সিঁদুরকে ব্রহ্মার প্রতীক বলা হয়। ললাটে যাতে স্বয়ং ব্রহ্মদেব অধিষ্ঠিত থাকেন, তার জন্যই সিঁদুর পরা হয়।
দুর্গতিনাশিনীকে স্মরণ করার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে সিঁদুরের মাহাত্ম্য। লাল রঙের প্রতি এই বিশেষ আকর্ষণ আমাদের সংস্কৃতিতে গভীরভাবে নিহিত। লাল রঙ উর্বরতা, প্রেম এবং আবেগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বিশেষ করে নারীকেন্দ্রিক আচার অনুষ্ঠানে প্রতিফলিত হয়।

লালপাড় সাদা শাড়ি এবং সাদা শাঁখা, লাল পলা—এগুলো শুধু বাহারি নয়, বরং প্রতীকী। দশমীতে মা দুর্গা যখন তাঁর স্বামীর কাছে ফিরছেন, তখন মাকে লাল রঙে সজ্জিত করে বিদায় দেওয়া হয়, যা একদিকে শ্রদ্ধা আর অন্যদিকে সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ করে।

এমন রীতি আমাদের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করে, এবং এই সমস্ত আচার অনুষ্ঠানে লাল রঙের উপস্থিতি প্রেম, আবেগ এবং জীবনকে চিত্রিত করে। বিজয়া দশমীতে মা দুর্গার বিদায়ের সময় এই লৌকিক বিশ্বাসগুলো আমাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মা দুর্গা, যিনি আদতে বাড়ির মেয়ে, তাঁর শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর আগে মিষ্টিমুখ করানোর রীতি যেন আমাদের ঐতিহ্য ও আবেগের নিদর্শন।

সিঁদুর ও আলতা পরানোর মাধ্যমে বিদায় জানানোর এই প্রথা শুধু এক ধরনের সম্মান জানানো নয়, বরং এটি সম্পর্কের গভীরতাকেও তুলে ধরে। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার আগে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রকাশের এই অনুশীলন আমাদের সংস্কৃতির এক অনন্য দিক। এটি একটি সম্পর্কের সংযোগ তৈরি করে এবং বিদায়ের সময় আবেগকে আরও গভীর করে তোলে।