Karachay Lake: এক ঘন্টায় সব শেষ ! মৃত্যুর আর এক নাম কারাচাই হ্রদ

দেখতে চমৎকার হলেও বিজ্ঞানীরা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হ্রদটির আশেপাশে যে অঞ্চলগুলো রয়েছে, সেগুলোও অত্যন্ত মনোরম। আপনি যদি সেখানে সপরিবারে ছুটির…

Karachay Lake

দেখতে চমৎকার হলেও বিজ্ঞানীরা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হ্রদটির আশেপাশে যে অঞ্চলগুলো রয়েছে, সেগুলোও অত্যন্ত মনোরম। আপনি যদি সেখানে সপরিবারে ছুটির দিন কাটাতে যান, খরচ পড়বে খুবই কম। কিন্তু একটি ছোট্ট সমস্যা রয়েছে। যদি হ্রদটির কাছাকাছি এক ঘণ্টার বেশি সময় কাটান, তাহলে মৃত্যু অবধারিত।ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কোনো জলদানব বা ভয়ঙ্কর পিরানাহ মাছ টেনে নিয়ে যাবে না। হ্রদটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। হ্রদটির নাম হচ্ছে– কারাচাই হ্রদ (Karachay Lake)। কিপচাক বা উত্তর–পশ্চিম তুর্কি ভাষাগুলোতে ‘কারাচাই’ শব্দটির অর্থ ‘কালো জল’। অবশ্য কারাচাই হ্রদটির জলের বর্ণ প্রকৃতপক্ষে কালো ছিল না। হ্রদটি বর্তমান রুশ ফেডারেশনের উরাল পর্বতমালা অঞ্চলে অবস্থিত চেলিয়াবিনস্ক প্রদেশের অন্তর্গত ওজিয়োরস্ক শহরের নিকটে অবস্থিত।

১৯৪৫ সালের আগস্টে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপরে দুইটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে এবং এর ফলে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর দুইটি ধ্বংস হয়ে যায়। প্রত্যুত্তরে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার নিজস্ব পারমাণবিক বোমা প্রকল্প শুরু করে। পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের জন্য সোভিয়েত স্পাইমাস্টার লাভ্রেন্তি বেরিয়ার তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে এবং দ্রুতগতিতে ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে ওজিয়োরস্ক শহরে ‘মায়াক’ প্লুটোনিয়াম উৎপাদন কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়। এটি বর্তমানে ‘মায়াক উৎপাদন সংস্থা’ নামে পরিচিত।

মায়াক ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর একটি। এটির অবস্থানের কারণে ওজিয়োরস্ক শহরটিকে সোভিয়েত সরকার একটি নিষিদ্ধ বা ‘আবদ্ধ নগরী’ (closed city) হিসেবে ঘোষণা করে। এটিকে ‘চেলিয়াবিনস্ক–৪০’ সাংকেতিক নাম প্রদান করা হয়। শহরটিতে বিদেশিদের প্রবেশ তো নিষিদ্ধ ছিলই, এমনকি শহরটির বাইরে থেকে আসা কোনো সোভিয়েত নাগরিকও বিশেষ অনুমতিপত্র ছাড়া শহরটিতে প্রবেশ করতে পারত না।

মায়াক কেন্দ্রের পারমাণবিক বর্জ্য সংরক্ষণাগার ভর্তি হয়ে গেলে তারা কেন্দ্রটির পারমাণবিক বর্জ্য কারাচাই হ্রদে নিক্ষেপ করতে শুরু করে। কারাচাই হ্রদটি যেহেতু অন্য কোনো জলাশয়ের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না, তাই মায়াকে কর্মরত প্রকৌশলীদের ধারণা ছিল, হ্রদটিতে নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বর্জ্য অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানেই পড়ে থাকবে এবং এর ফলে অন্য কিছুর কোনো ক্ষতি হবে না।কিন্তু তাদের এই আশা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত হিসেবে প্রমাণিত হয়। ফলে কারাচাই হ্রদসহ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান মারাত্মক পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

১৯৯০ সালে পশ্চিমি বিজ্ঞানীদের কারাচাই হ্রদটিকে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের অনুমতি প্রদান করা হয়। তারা জানান যে, হ্রদটি থেকে গামা রশ্মি নির্গমনের পরিমাণ প্রায় ৬০০ রন্টজেন। অন্যভাবে বলা যায়, হ্রদটির জল থেকে নির্গত তেজষ্ক্রিয়তার পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি (বা ১২০ মিলিয়ন) কুরি (curie), যা চেরনোবিল থেকে নির্গত তেজষ্ক্রিয়তার প্রায় দ্বিগুণ। পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা জানান যে, কোনো মানুষ এই হ্রদটির পাশে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করলে তেজষ্ক্রিয়তার কারণে তার মৃত্যু নিশ্চিত!