৩৫ ভোগে তৃপ্ত হন বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির মা আনন্দময়ী

Special Correspondent, Kolkata: এ বাড়ির মা তুষ্ট হন ৩৫ রকম ভোগে। হয়ে ওঠেন আনন্দময়ী। এমনই বিশেষত্ব বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির কালীপূজার। Advertisements আন্দুল রাজবাড়ির সঙ্গে সখ্যতা এবং…

mother of Banerjee's family

Special Correspondent, Kolkata: এ বাড়ির মা তুষ্ট হন ৩৫ রকম ভোগে। হয়ে ওঠেন আনন্দময়ী। এমনই বিশেষত্ব বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির কালীপূজার।

Advertisements

আন্দুল রাজবাড়ির সঙ্গে সখ্যতা এবং জীবনকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীপ্রেম এ নিয়েই প্রায় ১৬২ বছর আগে শুরু হয়েছিল পারিবারিক কালীপূজা, যা ক্রমে এখন পারিবারিক উৎসবের চেহারা নিয়েছে মাকড়দহের ১২৬/১ নম্বর বাড়িতে এসে। ডোমজুরের বিপ্রন্নপাড়া, সেখানেই ছিল বন্দ্যোপাধ্যায়দের জমিদারি। কালের নিয়মে জমিদারি না থাকলেও রয়েছে বিশাল বাড়ি এবং মন্দির। একসময় বাড়ির সামনেই ছিল বিশাল ঠাকুরদালান, কোনও এক বন্যায় তা ভেঙে যায়।

   

পাশাপাশি পেশার তাগিদ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ধীরে ধীরে গ্রাম থেমে শহরগামী হয়। সঙ্গে নিয়ে আসে তাদের মা আনন্দময়ীকেও এবং গোবর্ধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে নতুন করে শুরু হয় বিশাল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কালীপুজো। শোনা যায় ডাক্তার গোবর্ধন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মা স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলিদানের স্থান দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সেই স্থানেই হয় এখনকার বলিদান।

কিন্তু এই যে মায়ের মন ভরাতে ৩৫ রকম ভোগ হয়, সেগুলি কী? শুনলে চমকে যাবেন। গত ১৬০ বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রথা চলে আসছে এই পুজোয়। যার কোনওরকম পরিবর্তন হয়নি কোনও পরিস্থিতিতে। দেবীকে দেওয়া হয় ভাত, খিচুরি, লুচি, ১০ রকম ভাজা, পায়েস, শুক্তো, মুগ, মটর, অড়হর ডাল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, চালকুমড়ো, ঘন্ট, এঁচর অথবা মোচা, মাছের ঝোল, মাছের অম্বল, গুড় বড়ি, শোল মাছ পোড়া, মহাপ্রসাদ (ছাগ বলির মাংস), সঙ্গে দই, রাবরি, ক্ষীর, চানাচুর, গুঁজিয়া, ছানা। সঙ্গে দেওয়া হয় স্পেশ্যাল দুই রকমের নাড়ু। বাড়ির মেয়ে বউয়ের এর জন্য তিন দিন আগে থেকে তোড়জোড় শুরু করেন। যা অর্পন করা হয় পুজোর দিন।

অরুণ, দেবদাস , বিপ্রদাস বন্দ্যোপাধ্যায়দের হাত থেকে এই পুজো এখন এসেছে অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়েদের প্রজন্মের হাতে। অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ে বলেন, “ডাঃ গোবর্ধন বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ভাইয়েরা পেশার সূত্রে চলে আসেন হাওড়ার কদমতলা। সঙ্গে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই চলে আসেন কদমতলায়। গোবর্ধন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মা স্বপ্ন দিয়ে পূজা থেকে বলিদানের স্থান সমস্ত দেখিয়ে দেন। গোবর্ধনবাবু ও তাঁর পরিবারের স্থানান্তকরনের সঙ্গে এই পুজোও চলে আসে ১২৬/১ মাকড়দহ রোডের ঠিকানায়। সেই বাড়িতেই প্রায় ৮০ বছরের বেশী সময় ধরে পুজো হচ্ছে। এখনও পুজোর জাঁকজমকে কোনও পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন হয়নি পুজোর নিয়ম ও নিষ্ঠায়। এখনও বলিদান হয় । একসময় মোষ বলি হত। সেই খাঁড়া এখনও বর্তমান।”

পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের পুজোর শরীরময় সাবেকিয়ানার দাপট , চৌত্রিশ টার ওপর ভোগের পদ , বলিদান, ধুনুচি পোড়া , বলিদানের আগের থম থমে আবহাওয়া , তার পরের উল্লাস , ঢাকের সাথে আমাদের পায়ের তাল , ধুনুচির ধোঁয়ার লহমায় সকলের উচ্ছাসময় আবেগ, সব কিছুর মিশ্রন এই পূজো।”

বাড়ির মেয়ে মৌমিতা দাস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এবাড়ির পূজোর প্রাণ, শরীর ও স্পন্দনের অন্যরকম। এই পূজোর সাথে আমার মায়ের , মামাদের ,ভাই , বোন , দিদিদের, আমাদের সকলের বড়ো হয় ওঠা মিশে আছে । এই পূজোর শিরায় শিরায় মিশে আছে অনেক গুলো লোকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও হাজারো আবেগ। পুজোর স্পন্দন তাই আমি মনে করি পুজোর আচার বিচারের সাথে আমরা সবাই।”

অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই পূজো আবেগের পূজো । এই রাতের গা বেয়ে ঝরে হাজার হাজার কথা, গল্প, আড্ডা । ছোট থেকে যৌবনের অনেক গোপন আবেগি কথার কানা কানি, ফিস ফিস । আবার সদ্য বড়ো হয় ওঠার সিম্বল স্বরূপ সিদ্ধি খাওয়ার রাত ও বটে ।পূজোর প্রাণ কিন্তু মা নিজে , এক গা গয়নায় সজ্জিত মা ভবতানিরী ঝলমল করে দুদিন আমাদের বাড়ি ময়। তার পূর্ণ গন্ধ , রূপ , আবেশ নিয়ে।”

অনেক আদরে ভরা আবেগে মোড়া এই বাড়ির পূজো । ঝিকিমিকি ঝাড়বাতির জায়গায় মিনিয়েচার স্থান পেয়েছে। চায়ের কেটলির জায়গায় এখন বোতাম টিপে চা, কফি , পুরোনো উঠান এখন সবুজ কার্পেটের তলায় গা ঢাকে । তবু পূজোর আড়ম্বর , পুরোনো গন্ধ , সাবেকিয়ানার গ্লামউর সব কিছু নিয়ে স্বমহিমায় এগিয়ে চলেছে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো।