Advertisements

Durga Puja: NRC, CAA বিরোধী মণ্ডপ গড়ে উঠছে শহরের বুকে

puja pandal made against CAA and NRC

বিশেষ প্রতিবেদন : এনআরসি , সিএএ বিল নিয়ে উত্তাল হয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় রাজনীতি। কেন্দ্রের বিল পাসে মাথায় হাত পড়েছিল বহু মানুষের। এবার কী ঠাঁই ডিটেনশন ক্যাম্প। হঠাৎ ভিটে মাটি হারানোর ভয় জাগতে শুরু করে মানুষের মনে। কোথা থেকে দেখাবে কাগজ? সেই কাঁটাতারের ভয়ের কথা ফুটে উঠবে উল্টোডাঙ্গা বিধান সংঘের পূজো মণ্ডপে (Durga Puja)। বলা যেতে পারে এনআরসি , সিএএ’এর বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী মণ্ডপ গড়ে উঠছে কলকাতার উল্টোডাঙ্গা বিধান সংঘে।

Advertisements

একদিকে দেশভাগ অন্য দিকে ভাষা আন্দোলন। লড়াই যে, কতটা তা সেই মানুষগুলোই যানে যাদের আধখানা ধুতি বা গামছায় মুড়ে জীবনের শেষ সম্বলটুকু আঁকড়ে ধরে নিজের পৈতৃক ভিটে ছেড়ে অনিশ্চিত পারাপারের খেলায় নিজেদের জীবনকে সপে দিতে হয়েছিল। আজও কাঁটাতারের অপর দিকে তাকিয়ে থাকেন একবুক স্মৃতি আর ভয় মাখা রক্তাক্ত দিন গুলির ছবি বুকে নিয়ে। ভিটেহারা মানুষটি বুঝতেই পারেনি কখন যেন নিজের গ্রাম ছেড়ে সে হয়ে উঠেছিল উদ্বাস্তু। শেষে ঠাঁই হয়েছিল নাম-গ্রোত্রহীন কোনও এক ফালি জমিতে। ঠিকানা কলোনি বা খেটে খাওয়া মানুষের পাল l

দিন যায় রাত আসে, বারুদের গন্ধভরা ভয়ে ভয়ে কেটে যায় বছরের পর বছর। জন্ম নেয় নতুন সংসার, তৈরী হয় নতুন জীবন কাহিনী, নতুন ঠিকানা, নতুন দেশ, কাল, গোত্র, সবই ঠিক চলছিল। দেশভাগের পর কেটে গিয়েছিল অনেকগুলি বছর, নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল, হয়েছে জীবন ধারণের উন্নতি, জুটেছে ভাত, কাজ, শিক্ষা, সঙ্গে হয়েছে পুনর্বাসন, পালন হয়েছে ভাষা দিবস l সেই প্রান্তিক মানুষগুলো আজ অনেকেই কালের নিয়মে একবুক রক্তক্ষরণ নিয়ে অন্তিম যাত্রায় গিয়েছেন, রেখে গিয়েছেন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম, আবার কেউ কেউ আজও এক চিলতে সুখ খুঁজে যাচ্ছেন। জোগাড় করেছে তার স্বাধীনতার সুখ, পেয়েছে গনতন্ত্রের অধিকার সঙ্গে আধার, জীবন যখন কিছুটা স্থিতিশীল হতে চলেছে তখন শুরু হয়েছে নতুন করে আবার কাঁটাতার বিছানোর খেলা।

Advertisements

puja pandal made against CAA and NRC

শিল্পী প্রশান্ত পাল জানিয়েছেন, “জন্মের পর থেকে গণতন্ত্র প্রয়োগ করা আজকের মানুষটিকে নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জ্বালা কাঁটাতার হয়ে বুঁকের মাঝে গেঁথে যায়। আচ্ছা, সত্যিই কি এই মানুষগুলো তাদের এই অবস্থার জন্য নিজেরা দায়ী? কে ভাবে তথাকথিত উদ্বাস্তু মানুষগুলোর কথা। সেদিনও কিছু স্বার্থন্বেষী মানুষ নিজেদের আখের গোছাতে এই মানুষগুলোকে ব্যবহার করেছিল। স্বাধীনতার চুয়াত্তর বছর পরও রাষ্ট্রের চোখ রাঙানিতে তাদের রাতের ঘুম যেন চোখের জলে ভেজে, মনে হয় এই বুঝি প্রাণের মাঝে কাঁটাতারের বেড়া দিতে হবে। লুকোতে হবে আধপেটা খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর জীবন কাহিনী, কত প্রশ্ন হয় তাদেরকে নিয়ে। এইতো সেদিনও রাষ্ট্র বলে উঠেছে প্রমান চাই? না হলে ফিরতে হবে l কোথায় ফিরবে? এলো প্রমান করার পালা, জন্ম তারিখ কত? কত সালে এসেছো? এপার না ওপার? ইলিশ না চিঙড়ি? ঘটি না বাঙাল? ওপারের কোথায় বাড়ি ছিল? কাগজ পত্র আছে কি?’

তিনি আরও বলেন, “আজও ৪০ ঊর্ধ ছেলেটা তার বৃদ্ধ বাবা মায়ের মাতৃভূমির ভাষা আর বেঁচে থাকার অধিকারের হাজার প্রশ্নের মুখে পরাধীনতার গ্লানি তাকে এপার না ওপার ভাবিয়ে তুলছে l আজও আপন করতে পারেনি রাষ্ট্র। এনআরসি’র নাম করে আবারও ঠেলে দিচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। আবারও ভিটে হারানোর ৭১ সালের ভয় তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। “

শিল্পীর কথায়, “আমরা এক ৭৫ বছরের স্বাধীন দেশের নাগরিক । বর্তমান মহামারী পৃথিবী ও দেশকে যখন অচল করেছে, বেঁচে থাকার লড়াইয়ে আমাদের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে ঠিক তখনো আমরা মনে করি কিছু দায়িত্ব আমাদেরও আছে । আর সেই দায়িত্ববোধ থেকেই এই প্রান্তিক মানুষগুলোর তখন থেকে এখন পর্যন্ত যে ধারাবাহিক জীবনযাত্রা তাকে তুলে ধরতেই আমাদের এই উদ্যোগ। আমরা বেঁচে নিয়েছি এক মায়ের কান্না থামাতে আরেক মায়ের বোধনকে। দেখেছি অসুর কূলকে ধ্বংস করতে মায়ের দশাবতারে দশ হাতে অস্ত্র ধারণ করতে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে যুগে যুগে, কোনো সময় কবির লেখার জোরে, আবার কখনো অস্ত্র হাতে, আজ শিল্পীর প্রতিবাদ হোক শিল্পকর্মের মাধ্যমে। আর সেই অস্ত্র নিয়েই আজ আমরা প্রান্তিক মানুষদের পাশে। আসুন আজ আমরা তাদের হাত ধরে নির্ভরতা টুকু অন্তত ফিরিয়ে দিই । দুচোখে আশার আলো দেখাই আর চিৎকার করে বলি আমরা একই মায়ের সন্তান। মাকে কোনদিন টুকরো করা যায় না বাধা যায়না কাঁটাতার দিয়ে l চাইনা জাতের লড়াই, চাইনা ধর্মের লড়াই l

তাইতো আসুন সবাই মিলে বলি, কিসের কাগজ? কিসের জাত? ধর্ম যখন পেটের ভাত। রাষ্ট্র তোমার আমার সবার, লড়াই করে দুহাতে ভাঙবো ‘কাঁটাতার'”

Advertisements