বিশেষ প্রতিবেদন: শিক্ষিত হলেই যে কেউ শিক্ষার মর্ম বুঝবে তার কোনও মানে নেই। না হলে কেন রাস্তায় পড়ে থাকবে বই। আবার বিশাল ডিগ্রি না থেকেও কেউ হতে পারেন প্রকৃত শিক্ষিত। তেমনই একজন হোসে আলবার্তো গুটিরেজ (Jose Alberto Gutierrez)। ফেলে দেওয়া বই দিয়েই বানিয়ে ফেলেছেন আস্ত একটা লাইব্রেরি।
আলবার্তো গুটিরেজ পেশায় ময়লা বহনকারী ট্রাকের ড্রাইভার। রাতের বেলা কাজে বেরোতেন। কাজ করার সময় তিনি খেয়াল করলেন, আবর্জনার সঙ্গে বইও পড়ে রয়েছে। তা সংগ্রহ করেই বানিয়ে ফেলেছেন লাইব্রেরি। কলম্বিয়ার এই মানুষটির জীবনে ফোটেনি শিক্ষার আলো, আর সেই তিনিই সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বানিয়ে ফেলেছেন ফেলে দেওয়া বইয়ের লাইব্রেরী।
লিও টলস্টয়ের আন্না কারেনিনা বইটি যখন গুটিরেজ আবর্জনার মধ্যে খুঁজে পেলেন তিনি অবাক হয়েছিলেন। এত গুরুত্বপূর্ণ বই কিনা স্থান পেয়েছে ডাস্টবিনে! ভেবেছিলেন এই বইয়ের স্থান তো এখানে নয়। গুটিরেজ নিজে ময়লাকর্মী হতে পারেন। কিন্তু, তিনি ঠিকই টলস্টয়কে জানেন। তাই তিনি বইটি সংগ্রহ করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন আবর্জনার স্তুপ থেকে খুঁজে পেয়েছেন বিশ্বের নানা ক্ল্যাসিক বই।
গুটিরেজ বইগুলো সংগ্রহ করতে থাকলেন। সেই ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু। এখনো তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন। অদ্ভুত হলেও সত্যি এবং আশ্চর্যের এই যে তার সংগ্রহশালায় বইয়ের সংখ্যা ছাড়িয়ে এখন দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজারে! তিনি মনে করেন উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান যা রেখে যেতে পারি তাই হল আসল শিক্ষা।
কলম্বিয়ার বোগাটায় একটি দরিদ্র অঞ্চলে থাকেন গুটিরেজ। এই এলাকার কিশোররা পড়ার সুযোগ পায় কম। অল্প বয়সে তাদের কাজের সন্ধানে নেমে পড়তে হয়। এমনই এক এলাকায় গুটিরেজ এখন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য ময়লাবাহী ট্রাক ড্রাইভাররা এখন বই পেলে তাকে এসে দিয়ে যান। তিনি শিক্ষা উপকরণ দিয়েছেন ২৩৫ টি স্কুল, কমিউনিটিকে। তার সংগৃহীত বইগুলো দিয়ে তিনি একটি কমিউনিটি লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন।
৫৫ বছর বয়সী গুটিরেজ গত কুড়ি বছর এই কাজ করে চলেছেন। সংগৃহিত বই তিনি দান করেন বিভিন্ন লাইব্রেরিতে। তার সংগ্রহের বইয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে ৪৫০টির বেশি লাইব্রেরি, রিডিং সেন্টার, স্কুলের পাঠকক্ষ। তিনি স্বপ্ন দেখেন একদিন তিনি গোটা কলম্বিয়াকে বই দিয়ে পরিপূর্ণ করবেন।